ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লাখো মানুষের বিক্ষোভে উত্তাল হংকং

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১৭ জুলাই ২০১৯

লাখো মানুষের বিক্ষোভে উত্তাল হংকং

সম্প্রতি লাখ লাখ লোকের বিক্ষোভে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে হংকংয়ের রাজপথ। বিক্ষুব্ধ জনতার রুদ্ররোষ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় চীনের আধা-স্বায়ত্তশাসিত এই ভূখ-ের কর্তৃপক্ষ। তারা বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে যে বিতর্কিত বহিঃসমর্পণ বিল সেটি স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন হংকংকে চীনের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে এটাই সেখানে বৃহত্তম বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই তরুণ এবং এতটাই তরুণ যে, তাদের ব্রিটিশ শাসনের প্রতি স্মৃতিকাতর হওয়ার কোন কারণ নেই। বিতর্কিত বহিঃসমর্পণ বিলটি কিছুদিন আগে স্থানীয় পার্লামেন্টে উত্থাপিত করেছিলেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম। প্রস্তাবিত আইনের উদ্দেশ্য, সন্দেহভাজন অপরাধীদের বিচারের জন্য মূল চীনের হাতে তুলে দেয়া। এখানেই বিক্ষোভকারীদের প্রবল আপত্তি। তারা কিছুতেই চীনের আইনের আওতায় যাওয়ার এ ব্যবস্থাকে মেনে নিতে রাজি নয়; যেখানে বিচারব্যবস্থা হলো একদলীয় কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণের অধীনে। আধা-স্বায়ত্তশাসিত এই ভূখ-ের অধিকারের ওপর মূল চীনের হস্তক্ষেপ ঘটতে দিতে আপত্তি থেকেই বর্তমান বিক্ষোভের উৎপত্তি। ২০১৪ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে হংকংয়ে বিক্ষোভ আন্দোলন হয়েছিল। ‘আমব্রেলা ম্যুভমেন্ট’ নামে পরিচিত সেই আন্দোলনের সঙ্গে এবারের আন্দোলনের পার্থক্য হলোÑএবার বিক্ষোভকারীরা প্রত্যক্ষ সংগ্রামে যেতে এবং পুলিশের পাল্টা আঘাতের ঝুঁকি নিতে অধিকতর আগ্রহের পরিচয় দিয়েছে। বিতর্কিত বিলটি আলোচনার জন্য পার্লামেন্টে উত্থাপিত হলে গত ৯ জুন প্রায় ১০ লাখ লোক এর প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করে। এর মাধ্যমে ভূখ-ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যামকে এক শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। তিনদিন পর বিলটি নিয়ে যেখানে বিতর্ক হওয়ার কথা সেই পার্লামেন্ট ভবন ঘেরাও করে লাখ লাখ মানুষ। বিক্ষোভকারীদের কিছু অংশ মুখোশ ও গগলস্্ পরে এবং আত্মরক্ষার জন্য ছাতা হাতে নিয়ে ঝড়েরবেগে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা চালায়। পুলিশ তখন পাল্টা আঘাত হানে। বিক্ষুব্ধ ও মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও রবার বুলেট ব্যবহার করে। বেশ কয়েকজন আহত হয়। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। ১৫ জুন প্রধান নির্বাহী ল্যাম বিলটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তবে বলেননি যে, সেটা স্থায়ীভাবে বাতিল করা হলো। এর একদিন পর হংকংয়ের রাজপথে প্রায় ২০ লাখ লোক আবার বিক্ষোভ করে। তারা বিলটি স্থগিত নয় বরং সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ল্যামের পদত্যাগের দাবি জানায়। তবে পুলিশকে এবার অধিকতর নমনীয় ভূমিকায় দেখা যায়। গণতন্ত্রপন্থী সংগঠন ডেমোসিসটোর ভাইস চেয়ারম্যান আইজ্যাক চেং বলেন, হংকংয়ের এই নতুন আন্দোলনের উদ্যোক্তা স্বাধীন বিক্ষোভকারীরা, যাদের সঙ্গে কোন সংগঠনের যোগসূত্র নেই। পাঁচ বছর আগে ডেমোসিসটোর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জসুয়া ওং ‘আমব্রেলা ম্যুভমেন্ট’ নামে এক শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। তবে সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। চীনে সরকার বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুযায়ী গণতান্ত্রিক নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ওংসহ আন্দোলনের বেশ কিছু নেতাকে বিচার করে কারাগারে পাঠানো হয়। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য যে এ্যাপটি বেছে নেয় সেটি টেলিগ্রাম। পুলিশ এটা জানত। তারা একটি চ্যাট গ্রুপের প্রধান আইভান আইপিকে গ্রেফতার করে। তবে টেলিগ্রাম ও ইন্টারনেট জুড়ে আইপির মতো কয়েক ডজন চ্যাট গ্রুপ আছে। একটি চ্যাট বন্ধ হলে ব্যবহারকারীরা সহজেই অন্য চ্যাটের মাধ্যমে আলোচনা ও যোগাযোগ চালাতে এবং মেসেজ শেয়ার করতে পারে। বিক্ষোভের আয়োজকরা রাস্তাঘাটে ও গণপরিবহনে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন এবং জনগণকে নগরীর অন্যান্য অংশেও সমাবেশ করে তাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার আহ্বান জানায়। পয়ি চ্যান নামে এক সংগঠক বলেন, সরকার এখনও আমাদের দাবি মেনে নেয়নি, অথচ দাবি মানা না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×