ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া শান্তি দূর অস্ত

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১৭ জুলাই ২০১৯

যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া শান্তি দূর অস্ত

২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর থেকে লিবিয়া এখনও অবধি যুদ্ধবিগ্রহ ও সংঘাতে ক্ষত বিক্ষত একটি দেশ। এই সংঘাতের মধ্য দিয়ে দেশটি জিহাদীদের স্বর্গরাজ্যে যেমন পরিণত হয়েছে তেমনি এটি ইউরোপে পাড়ি জমাতে মরিয়া হয়ে ওঠা অভিবাসীদের যাত্রাবন্ধুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ লড়াইটা চলছে ত্রিপোলির জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের (জিএনএ) সঙ্গে পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণনাঞ্চল শাসনকারী খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন স্বঘোষিত লিভিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ)। গত এপ্রিলে জাতিসংঘ মহাসচিব ত্রিপোলীতে থাকাকালে হাফতারের বাহিনী রাজধানীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে ছিল। জাতিসংঘে এখন এই দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। লিবিয়ায় শান্তি এখন এক দূর সম্ভাবনা মাত্র। তবে দেশটির ক্ষত সারিয়ে তুলতে পাশ্চাত্যের একটা আগ্রহ আছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সদস্যরা গাদ্দাফিবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে বিমান হামলা দিয়ে সাহায্য করেছিল গাদ্দাফির পতনের পর দেশটি চরম বিশৃঙ্খলার গর্ভে নিমজ্জিত হলে তারা দর্শকের ভূমিকা অবলম্বনে করে। বারাক ওবামা স্বীকার করেছেন যে গাদ্দাফির পতন পরবর্তী দিনগুলোর জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে না পারাই তার আমলের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। হাফতার মনে করেন যে একজন লৌহমানবাই শুধু লিবিয়ায় স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে পারে এবং স্বভাবতই সেই লৌহমানবটি তিনি নিজে। কিছু কিছু বিদেশী শক্তি বাহ্যত তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। মিসর, ফ্রান্স, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) তাকে সমর্থন দিয়েছ। আমেরিকাও তার সঙ্গে মাখামাখি করেছে। তবে তাদের হিসেব নিকেশের মধ্যে ভুল ছিল। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী বেনগাজী দখলে নিতে হাফতারের তিন বছর সময় লেগেছিল। নগরীটি তিনি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। গত এপ্রিলে তার বাহিনী এলএনএ জানায় যে ত্রিপোলী দখল করে নিতে কয়েকদিন সময় লাগবে। কিন্তু আজও তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের দখলাধীন এলাকা হাতছাড়া হচ্ছে তাদের চেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মিসরাতার মিলিশিয়ারা তার জন্য অপেক্ষা করছে। লিবিয়াকে স্থিতিশীল করা তো দূরের কথা হাফতার বরং আরও বেশি বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার জন্ম দিচ্ছেন। এলএনএকে যারা সাহায্য-সমর্থন দিচ্ছে তারা লিবিয়ার গৃহযুদ্ধকে আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত করার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। লিবিয়ায় যত অস্ত্রশস্ত্র আসে তার সিংহভাগের উৎস হলো মিসর ও ইউএই। তবে তুরস্ক ইদানীং ত্রিপোলী সরকারের সমর্থক মিলিশিয়াদের অস্ত্র ও রসদ যোগানোর চেষ্টা করছে। এই সাহায্যে পাওয়া সত্ত্বেও লিবিয়ায় দু’পক্ষের কোনটাই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারার মতো অবস্থা নেই। হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত ছড়িয়ে দেয়া । তাদের অর্থেরও অভাব আছে। অন্যদিকে ত্রিপোলীর সরকার (জিএনএ) দুর্বল ও অজনপ্রিয়। যুদ্ধ চলতে থাকলে দেশবাসীর দুর্দশা আরও দীর্ঘায়িত হবে। গত ৩ জুলাই ত্রিপোলীর একটি আটককেন্দ্রে পরিচালিত হামলায় ৪৪ জনেরও বেশি নিহত হয়। দু’পক্ষই একে অপরকে এই হামলার জন্য দায়ী করে। লিবিয়া প্রশ্নে বিভিক্ত ইউরোপ ইদানীং তাদের মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে শুরু করেছে। হাফতারকে এখন আর বিজয়ী বলে মনে না হওয়ায় আমেরিকাও তার প্রতি শীতল ভূমিকা গ্রহণ করেছে। তবে যুদ্ধবিরতিতে না পৌঁছতে পারা পর্যন্ত সত্যিকারের কোন অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন লিবিয়ায় যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি চলতেই থাকবে। রক্তপাতও অব্যাহত থাকবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×