ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারাঙ্গন ও বিচারকদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা?

প্রকাশিত: ০৩:১৩, ১৭ জুলাই ২০১৯

বিচারাঙ্গন ও বিচারকদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা?

অনলাইন রিপোর্টার ॥ আদালতে আইনজীবী, বিচারক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। কুমিল্লার জজ আদালতে বিচারকের সামনেই এক আসামির ছুরিতে আরেক আসামির খুন হওয়ার ঘটনায় করা এক রিট আবেদনে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়। গত সোমবার কুমিল্লায় আদালতে ওই ঘটনার সময় নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তাও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানাতে বলেছে আদালত। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার এক হত্যা মামলায় জামিনে থাকা দুই আসামি হাসান ও ফারুক গত সোমবার হাজিরা দিতে আসেন, যারা সম্পর্কে মামাতো ফুপাতো ভাই। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। এর জের ধরে হাসান আদালত কক্ষেই ফারুককে ছুরি মারেন। আহত ফারুককে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বিচার বিভাগ, বিচারাঙ্গন ও বিচারকদের নিরাপত্তা চেয়ে এই রিট আবেদন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিজে একজন বিচারকের স্ত্রী। বুধবার আদালতে রিটের ওপর শুনানিতে ইশরাত নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। এদিকে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে হত্যা মামলার এক আসামি জামিন নেওয়ার পর তার ওপর বাদীপক্ষের লোকজন হামলা করে। আসামির উকিলও সেখানে আক্রান্ত হন। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। ওই দুটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক শুনানিতে বলেন, “কুমিল্লার পর গতকাল সুপ্রিম কোর্ট বারেও ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় কোর্টে আইনজীবী, জাজ ও কর্মকর্তাদের সিকিউরিটির জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাশার তখন বলেন, কুমিল্লা এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের দুটি ঘটনাই ব্যক্তিগত। এ সময় বিচারক বলেন, “ব্যক্তিগত হোক আর যাই হোক, কোর্টের ভেতরে ছুরি নিয়ে কীভাবে যায়? পুলিশ কী করে? ডেফিনেটলি এটা পুলিশের গাফিলতি।” রিট আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত তখন বলেন, “নিরাপত্তা তো সবার জন্য। উনিও (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। তাই আইনজীবী, বিচারকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।” এরপর আদালত ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের আদালতগুলোতে আইনজীবী, বিচারক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং কুমিল্লার আদালতে ঘটনার দিন ওই সেখানে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেয়। আদেশের পর রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বিচার বিভাগ, বিচারাঙ্গন ও বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং বিচার বিভাগ, বিচারাঙ্গন ও বিচারকদের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে তার রিট আবেদনে। মন্ত্রী পরিষদ, আইন, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র্যাব মহা পরিচালককে সেখানে বিবাদী করা হয়েছে। “রুল ছাড়াও বিচারাঙ্গনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্রত্যেক বিচারকের জন্য গানম্যান দেওয়া, বিচারকদের বাস ভবন ও চেম্বার সুরক্ষিত করার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, আদালত প্রাঙ্গণে মেটাল ডিটেকটর ও দুই স্তরের পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা অর্থাৎ পুরো আদালত অঙ্গনকে নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ” এছাড়াও প্রত্যেক আদালত কক্ষের সামেন ভারী অস্ত্রসহ দক্ষ ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী তিনজন পুলিশ নিয়োগের নির্দেশনা চেয়েছেন ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ, বিচারাঙ্গন ও বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুপ্রিমকোর্ট ও আইন মন্ত্রলায় থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের। বিচারাঙ্গন ও বিচারকের বাসভবন সুরক্ষিত রাখতে বলা হয়েছে সেসব চিঠি বা নোটিসে। “তার মানে হচ্ছে, তাদের (পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) দায়িত্বটা ছিল বিচারাঙ্গন ও বিচারকের বাসভবন সুরক্ষিত রাখা। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছেন বলেই কুমিল্লায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সোমবার সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনেও আইনজীবী ও এক আসামির উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।”
×