ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর মান্দায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে ২০ গ্রাম প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ১৭ জুলাই ২০১৯

নওগাঁর মান্দায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে ২০ গ্রাম প্লাবিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর মান্দায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে আত্রাই নদীর ডান তীরে উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকবালু নামকস্থানে বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। এতে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল। বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্র ও মালামাল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে পূর্বমান্দার সবধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে আত্রাই নদীর পানি বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মান্দার জোতবাজার পয়েন্টে বিপদ সীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আত্রাই ও ফকির্ণী নদীর উভয়তীরে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আত্রাই নদীর ডান তীরে সুজনসখী খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় বাঁধের ভেতর দিয়ে পানি পার হতে থাকে। এসময় স্থানীয় প্রশাসন এলাকাবাসির সহায়তায় বাঁধটি মেরামত করে কোনভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে নদীর এ অবস্থায় স্থানীয়রা রাতে পাহারা বসিয়ে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাত ২টার দিকে জোতবাজার-আত্রাই রাস্তার চকবালু নামকস্থানে ইদুরের গর্ত দিয়ে পানি পার হতে থাকে। কিন্তু পানির প্রবল চাপের কারণে বাঁধটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। সূত্র মতে, আত্রাই নদীর উজানে শিমুলতলী পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৬৫ সেঃমিঃ ও ভাটিতে আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ রেলষ্টেশন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৩ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। গত ২৪ ঘন্টা এ নদীর পানি যে হারে বেড়েছে, আগামী ২৪ ঘন্টায় সে হারে বাড়লে নদীর পানি আউট লেটের ড্রেন দিয়ে শহরে প্রবেশ করবে। এদিকে আত্রাই নদীর পানির তোড়ে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর, দাসপাড়া, চকরামপুর, শহরবাড়ি, কর্ণভাগ, পারসিমলা, নহলা কালুপাড়া, আবিদ্যপাড়া, যশোপাড়া, পশ্চিম দুর্গাপুর, শিবপুর, খোর্দ্দ বান্দাইখাড়া ও চককামদেব, নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পারনুরুল্লাবাদ, চকহরি নারায়ণ ও বাকসাবাড়ি কশব ইউনিয়নের বনকুড়া ও দক্ষিণ চকবালু এবং কালিকাপুর ইউনিয়নের বেড়েরটেক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, নদীর পানি বৃদ্ধিতে মঙ্গলবার গভীর রাতে চকবালু নামকস্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অন্যস্থানগুলো টিকিয়ে রাখতে দিনরাত কাজ করেছে স্থানীয়রা। কিন্তু ভেঙে যাওয়া স্থানটি স্থানীয়দের নজরদারিতে ছিল না। চেয়ারম্যান আরও বলেন, ইতোমধ্যে দুর্গত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে, এ মুহুর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানানো সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। বুধবার বিকেলে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকারের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি মান্দার বাঁধ ভাঙ্গা এলাকায় অবস্থান করছেন। বালুবাজারে ৫০ ফুটেরও বেশী বাঁধটি ভেঙ্গে গেছে। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে মেরামতের কাজ চলছে। তবে নদী দুটির পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুশফিকুর রহমান জানান, বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে মোমবাতি, খাবার স্যালাইনসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।
×