নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় জামালপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো চরম অবনতি হয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারি ত্রাণ বিতরণ অপর্যাপ্ত হওয়ায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। মঙ্গলবার থেকে জেলায় ত্রাণের মজুদ ফুরিয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি প্রতি মুহূর্তে অবনতি ঘটছে। যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে যমুনা তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলায় সবচে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বুধবার সকাল থেকে দেওয়ানগঞ্জ বাজারসহ পৌরসভার সবগুলো ওয়ার্ডে বন্যার পানি উঠেছে। জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়কের মহিরামকুল ও দাঁতভাঙ্গা সেতুর কাছে বন্যার পানি উঠায় বুধবার সকাল থেকে জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার দশানী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আংশিক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসন যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছিল ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে বন্টন করে দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের ত্রাণভান্ডারে আর কোনো ত্রাণ সামগ্রী মজুদ নেই। আরও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসন জরুরি বার্তা পাঠিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। বন্যা কবলিত যমুনা নদীর চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় কোনোরূপ ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ৮০টি মেডিক্যাল টিম ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কোনো ত্রাণতৎপরতা দেখা যায়নি বন্যাকবলিত এলাকায়। ফলে বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো তীব্র খাদ্য সঙ্কটসহ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। বন্যার্ত অসহায় মানুষদের জন্য খোলা আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রিতরাও ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রেও বন্যার পানি উঠেছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত জেলার সাতটি উপজেলায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ জন মানুষ এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক হতে পারে। সারা জেলায় তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত ২৮টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ হাজার ৭৯০ জন বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জামালপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, এ পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া ত্রাণ সামগ্রী মঙ্গলবার পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে।
আমাদের কাছে এখন আর ত্রাণ সামগ্রী মজুদ নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে আরও ৭০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ টাকা এবং ৩০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চেয়েছি। বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় ত্রাণ সহায়তার জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: