ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশকে সাফল্য এনে দেয়ার সম্মান পেল খুশবু

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ১৭ জুলাই ২০১৯

দেশকে সাফল্য এনে দেয়ার সম্মান পেল খুশবু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘তোমাদের সহপাঠী শুধু এই স্কুলের নয়, পুরো বাংলাদেশেরই গর্ব। তোমরা কারা তোমাদের এই সহপাঠীর মতো দাবাড়ু– হতে চাও? একটু হাত ওঠাও তো?’ স্কুলের অধ্যক্ষের এই কথায় উপস্থিত শ’ দেড়েক ক্ষুদে ছাত্র-ছাত্রী হাত ওঠালো। সেই দাবাড়ু–-সহপাঠী তখন তাদের সামনের চেয়ারেই তার মা এশা কায়সারের পাশে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। তার নাম ওয়ারসিয়া খুশবু। বয়স এখনও সাত পূর্ণ হয়নি মিষ্টি চেহারার মেয়েটির। পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। জগতের অনেক ভালো-মন্দ বুঝতে পারে না, জানে না অনেক কিছুই। তবে দাবা খেলাটা জানে-বোঝে দারুণভাবে। এই বয়সেই বুদ্ধির এই খেলাটি থেকে অর্জন করে ফেলেছে অনেক ঈর্ষণীয় সাফল্য। বর্তমানে বাংলাদেশে যুব দাবা প্রতিযোগিতার অনুর্ধ-৮ (বালিকা) বিভাগের শীর্ষ দাবাড়ু– সে। দেশী-বিদেশী সব ধরনের টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ১১টিতে চ্যাম্পিয়ন, ৬টিতে রানারআপ এবং ১টিতে তাম্রপদক পেয়েছে। এর মধ্যে আছে পাঁচটি আন্তর্জাতিক শিরোপা। খুশবুর ‘খুশবু’ ছাড়ানো সর্বশেষ সাফল্য গত জুনে উজবেকিস্তানের তাসখন্দে অনুষ্ঠিত এশিয়ান স্কুল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের র্যা পিড এবং স্ট্যান্ডার্ড দাবা ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও ব্লিটজ দাবা ইভেন্টে রানারআপ হওয়া (প্রতিটি ইভেন্টই ছিল বালিকা অনুর্ধ-৭ গ্রুপ)। ঢাকার মালিবাগের সাউথ পয়েন্ট স্কুলের হয়ে খেলেই চোখ ধাঁধাঁনো এমন সাফল্য খুশবুর। তার এই উদ্ভাসিত অর্জনে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে তার স্কুল। তারা রীতিমতো গর্বিত। দাবা খেলে দেশের পাশাপাশি যে স্কুলেরও মুখ উজ্জ্বল করেছে খুশবু, বুধবার সেই স্কুল প্রাঙ্গনে খুশবুকে ফুলেল সংবর্ধনা দিয়েছে তার স্কুল। সেখানে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষ হামিদা আলী খুশবুকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়ার কথা ঘোষণা করেন এবং সাউথ পয়েন্ট স্পোর্টস ক্লাব কার্যক্রমের প্রশংসা করেন (শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও তিনি খুশবুর জন্যই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চলে আসেন খুশবকে দোয়া করতে)। খুশবু নিজেও স্কুলের এই ক্লাবের নতুন খেলোয়াড়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ কর্নেল (অব) শামসুল আলম পিএসসি, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের বাংলা মাধ্যমের উপাধ্যক্ষ জেরিনা ফেরদৌস, ইংরেজি মাধ্যমের উপাধ্যক্ষ শাহনাজ বেগম, স্কুল এ্যান্ড কলেজের সিইও সাখাওয়াত উল্লাহ, আন্তর্জাতিক দাবা ট্রেনার এবং এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির (এই প্রতিষ্ঠানে দাবা প্রশিক্ষণ নেয় খুশবু) সিইও মাহমদু হক চৌধুরী মলি এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালক, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের স্পোর্টস ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর ও সাবেক জাতীয় ভলিবল খেলোয়াড় শওকত সিদ্দিকী। এছাড়া স্কুলের স্পোর্টস ক্লাবের কারাতেকা এবং ক্রিকেটাররাও উপস্থিত ছিল। বিনা বেতনে পড়ার খরচ মওফুক করে দেয়াতে দারুণ উপকৃত হবে খুশবুর পরিবার। কেননা এই ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের পড়ার খরচ অনেক। মাসিক বেতনই ছয় হাজার টাকা। ভর্তি হতেই লাগে ৪০ হাজার টাকা! খুশবুর বাবা মেহেদী কায়সার একটি এনজিওতে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করছেন। যা উপার্জন করেন, তার সিংহভাগই মেয়ের খেলার পেছনে ব্যয় করেন। নিজের চাকরির স্বল্প টাকায় মেয়েকে বড় দাবাড়ু– বানানো খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ প্রায়ই তিনি খুশবুর বিদেশে খেলতে যাবার খরচ জোগাতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষক খুঁজে পান না। তার ওপর মেয়ের স্কুলের এত খরচ। সেই খরচটা যদি বেঁচে যায় তাহলে নিঃসন্দেহে চাপটা অনেক কমবে তাদের ওপর থেকে। মাহমুদ মলি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই স্কুল কৃর্তপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছেন, যেহেতু খেলার জন্য প্রায়ই খুশবুকে প্রচণ্ড ব্যস্ত ও বাইরে থাকতে হয়, সেহেতু তার পক্ষে স্কুলে শতভাগ উপস্থিত সম্ভব নয়। কাজেই এটি বিবেচনা করে খুশবুকে যেন স্কুলে একটু ছাড় দেয়া হয়। মলির এই অনুরোধ সঙ্গে সঙ্গে সানন্দেই মেনে নিয়েছেন স্কুলের অধ্যক্ষ। শুধু তাই নয়, স্কুল কর্তৃপক্ষ আরও ঘোষণা দিয়েছে, ভবিষ্যতে খুশবুকে দাবায় আরও উন্নতি করতে তারা খুশবুকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। এটা শুনে আশান্বিত খুশবুর পরিবার। কারণ আগামী আগস্টে চীনে ফিদে ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট চেস চ্যাম্পিয়নশিপে খুশবুর খেলার কথা। কিন্ত অর্থ বা স্পন্সরের অভাবে সেখানে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। এখন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের এমন ঘোষণা আশার আলো দেখতেই পারে খুশবু।
×