ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গুণ-পুষ্প চয়ন করা

সমাজ ভাবনা - বিষয় ॥ এত শিশুধর্ষণ কেন?

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১৮ জুলাই ২০১৯

সমাজ ভাবনা -	বিষয় ॥ এত শিশুধর্ষণ কেন?

গৌরব জি. পাথাং ॥ আমাদের চার পাশে কামনা-লালসায় অতৃপ্ত প্রেতাত্মা, অশুভ শক্তি ও দানবীয় শক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম-এর তথ্য অনুসারে, এই দানবীয় শক্তির কাছে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত বিগত ছয় মাসে কম পক্ষে ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষিত হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৪১ পার্সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের এই একই সময়ে ছিল ৩৫১ জন (সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন, ১ জুলাই, ২০১৯)। প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রাগৈতিহাসিক গল্পে সেই যুগের চুরি, ডাকাতি, নেশা, যৌন লালসার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘নদীর ধারে খ্যাপার মতো ঘুরিতে ঘুরিতে তাহার মনে পৃথিবীর যত খাদ্য ও যত নারী আছে একা সব দখল করিতে না পারিলে তাহার তৃপ্তি হইবে না।’ বর্তমানেও এই রকম ভিখু চরিত্রের আবির্ভাব ঘটছে। তারা সব কিছু ভোগ করতে চায়, নিজের করে পেতে চায়, তারা অতিমাত্রায় কামনা-লালসায় লিপ্ত। এ রকম পুরুষরা তাদের আদিম অস্ত্র শিশ্ন দ্বারা নারীদের শেষ করে দিতে চায়। ওরা চায় না নারীরা অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাক, শিশুরা ফুলের মতো প্রস্ফুটিত হোক, সবাই মানুষের মতো বাঁচতে শিখুক। ওরা চায় শুধু আত্মতৃপ্তি, আত্মসুখ, যৌনসুখ। ওরা হিংস্র জন্তুর মতো ওত পেতে থাকে শিকারের আশায়। এখন আমাদের একটাই প্রশ্ন, কেন এসব হচ্ছে? এই সমস্যার সমাধান কী? রিপুগুলো সংযমের অভাব, যৌন লালসা, বিকৃত যৌন ক্ষুধা, একাকিত্ব, হতাশা, বেকারত্ব, মূল্যবোধের অবক্ষয়, নারীর প্রতি বিদ্বেষ, অশ্রদ্ধা, ঘৃণা, নারীকে ভোগের বস্তু মনে করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব প্রভৃতির কারণে এসব অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সংযম দ্বারা পশুরূপ রিপুকে বিশেষ করে কাম-ক্রোধকে দমন করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি যথার্থই বলেছেন, ‘যে দেশে ধর্ষকের জন্য উকিল পাওয়া যায়, সে দেশে ধর্ষণ কমবে কিভাবে?’ ভাল ভাল আইনজীবীরাই ধর্ষকের মুক্তির জন্য ধর্ষকের পক্ষ্যে কাজ করছে এবং ধর্ষকরা জামিনও পেয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ধর্ষিত ব্যক্তি আবার মানসিকভাবে ধর্ষিত হচ্ছে। এই ধর্ষণ প্রতিরোধ ও ধর্ষিত নারী-শিশুর সেবায় আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার, শিক্ষক, সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র নেতা-নেতৃদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক পরিবারকেই এ বিষয়ে ছেলেমেয়ে উভয়কেই সচেতন করাতে হবে, মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনে জোর দিতে হবে, আত্মসংযম গুণটি বিকশিত করতে হবে, নারীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা শিখাতে হবে, তাদের সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করতে হবে। মানবীয়, ধর্মীয় ও সামাজিক গুণাবলী ফুলের মতো চয়ন করতে হবে, মূল্যবোধ সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র নারী শিশুদের রক্ষা কবচরূপে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন’ মন্ত্র নিয়ে রাষ্ট্রকে আইন প্রয়োগ করতে হবে। আমাদের এই কথা বাস্তবায়ন করতে হবে, ‘গুণ-পুষ্প চয়ন কর, রিপু-কণ্টক নির্মূল কর।’ নয়াবাজার, ঢাকা থেকে
×