ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ থাক শিশু

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১৮ জুলাই ২০১৯

 নিরাপদ থাক শিশু

শিশুর প্রথম নিরাপদ স্থান হচ্ছে মাতৃগর্ভ। দ্বিতীয় নিরাপদ স্থান মাতৃক্রোড়। আর সমগ্র পৃথিবীটা শিশুর কাছে একটি নিরাপদ খেলার স্থান। মানব শিশু সর্বত্র নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে ও খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান সময়ে মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে পৃথিবীর কোথাও শিশুরা যেন নিরাপদ নয়। প্রত্যেক স্থানেই হিংস্র হায়েনার মতো অনেক নারী শিশুলোলুপ বিকৃত মানসিকতার কিছু পুরুষ ফাঁদ পেতে বসে আছে। কখন তীক্ষ নখের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করবে শিশুর সমগ্র দেহ-মন সেই খোঁজে ব্যস্ত। শিশুদের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ওরা আপন মনে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে উঠবে। ওদের মনটা হয়ে উঠবে প্রকৃতির মতো। তাই প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুদের মনে কখনও পাপবোধ থাকে না। মুহূর্তেই শিশুরা সকল অভিমান ভুলে অন্য শিশুর সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে ওঠে। কিন্তু অনেক সময় বড়দের মনে এই বোধ জাগ্রত হয় না। বরং সহজ-সরল ও কচি মনের শিশুকে অনেক মনুষ্যত্ববিহীন পশুর সমতুল্য পুরুষ ধর্ষণের মতো নিকৃষ্টমানের অত্যাচার করে হত্যা করে। যা অসভ্যতার নিম্ন পর্যায়কেও হার মানায়। বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যা হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে। প্রতি দিনই মিডিয়াতে আসছে শিশু ধর্ষণের খবর। ওয়ারীর সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যা সারাদেশের বিবেকবান মানুষকে পর্যন্ত নাড়া দিয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত যে দেশের সর্বত্র আরও বহু শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন হচ্ছে তা হলফ করে বলে দেয়া যায়। যা অনেক সময় মিডিয়ায় আসে না। এ যেন বিবেকহীনতার কাছে শুভশক্তির পরাজয়। শিশু ধর্ষণের মতো বিবেকবর্জিত অপরাধ যেভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বাঁধছে তা সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে দেশ ও সমাজের উন্নয়নের চাকা কোন্ দিকে গড়াবে তা বলা মুশকিল। উদীয়মান বর্তমান প্রজন্ম এক সময় স্বাধীনতার চেতনায় এগিয়ে যাওয়ার পথে হোঁচট খেয়ে পড়বে তা নিশ্চিত। একটি দেশের অবকাঠামোগত ও আর্থিক উন্নতিই সার্বিক উন্নয়নের মাপকাঠি নয়; বরং সমাজের সর্বশ্রেণীর জনগণের নিরাপত্তার বিধানও এই উন্নতির সঙ্গে জড়িত। তাই বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে তা চলমান রাখার জন্য শিশুর নিরাপত্তা বিধান জরুরী। যখন পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে তখনই ধর্ষণ যে একটি মারাত্মক অপরাধ সে ধারণারও অবক্ষয় হতে থাকে। তাই দেশের এই শিশু ধর্ষণ নামক অবক্ষয় রুখতে সুস্থ মানবিক সম্পর্ক, মূল্যবোধ চর্চা, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক চর্চা, একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ জাগ্রতকরণ, কঠোর আইনী ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, নারী ও শিশুদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রদানের বিকল্প নেই। দেশে চলমান এই শিশু ধর্ষণ নামক ক্রান্তিলগ্নে ধর্ষণ রুখতে সমাজের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব রয়েছে। শিশুর অভিভাবক, দেশের প্রশাসন ও সমাজের বিবেকবান মানুষদের শিশুর নিরাপত্তা রক্ষায় সদা সজাগ থাকতে হবে। অভিভাবকের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে শিশু কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে। প্রয়োজন হলে শিশুকে আত্মরক্ষার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাগুলো অবশ্যই দিতে হবে। পোপ ফ্রান্সিস শিশুদের অধিকার বিষয়ে বলেন, ‘শিশুদের জন্য একান্তভাবে দরকার আছে সম্মান, যতœ ও স্নেহ-মমতা। যেগুলোর মধ্য দিয়ে তারা বেড়ে ওঠে এবং তাদের অফুরন্ত সক্ষমতাগুলো অর্জন করতে পারে। সকল শিশুর সক্ষমতা অর্জন করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। পৃথিবীর সকল শিশু শিক্ষার সুযোগ পাক এবং পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের ভালবাসায় বেড়ে উঠুক।’ শিশুর প্রতি ভালবাসার বিপরীতে বর্তমানে ধর্ষণ ও হত্যাই কিছু কুলাঙ্গারের জন্য যেন নেশা হয়ে উঠেছে। পুরুষ নামধারী এই নরাধম পশুদের থামানোর সময় এখনই। রহনপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে
×