ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পারিবারিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৮ জুলাই ২০১৯

 পারিবারিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ

ঈদের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি যাই। নানি আমাদের বাড়ি আসেন আমাকে দেখতে। উনার বয়স ষাট বছরের মতো হবে। বিভিন্ন গল্প বলতে বলতে ধর্ষণ প্রসঙ্গ এসে গেল। নানি মাকে ও আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ধর্ষণ কি জিনিস? তাকে কিভাবে বোঝাই? বললাম, থাক বুঝতে হবে না। যেমন নির্ভেজাল, সুখী জীবন যাপন করে এসেছেন এখন নতুন করে এ সমাজের অসুখে আচ্ছন্ন হওয়ার কি দরকার? কদিন পর দাদি বাড়ি গেলাম দাদিকে দেখতে। চাচাতো বোন গল্প তুললো ওরা ঢাকায় যে ফ্লাটে থাকে তার উপর তলায় এক বৃদ্ধ এক বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। তারপর তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় মানুষ। এটা শুনে দাদীর প্রশ্ন, ধর্ষণ কি জিনিস, বুবু? যে প্রজন্ম ধর্ষণ কথাটার সাথেই পরিচিত না সে প্রজন্মকে অভাগা প্রজন্ম কিভাবে বুঝাবে তা? তারা যা ভাবতে পারতো না এখনও ভাবতে পাওে না; তা যদি তারা বুঝতে শিখে তখন লজ্জা তো আমাদেরই। তাদের সমাজ সুস্থ ছিলো, তারা নিজেরা নৈতিক ভাবে সুস্থ ছিলেন। কিন্তুু এখন যেমন নানান নতুন অসুখ মানুষের শরীরে তেমনি অদ্ভুত রোগ সমাজেও। সমাজে এখন নানা মারাত্মক রোগের মধ্যে চবফড়ঢ়যরষরধ (যৌন শোষণ) মহামারী আকার ধারণ করেছে। গত ছয় মাসে প্রায় পাঁচশ জন শিশু ধর্ষিত হয়েছে। ধর্ষণের পর খুনের সংখ্যাও অনেক। এ তথ্য আমরাই মানতে পারি না। ষাটোর্ধ নানী দাদী কিভাবে মানবেন? তখন কেন ধর্ষণমুক্ত সমাজ ছিলো আর এখন কেন তা মহামারী আকার ধারণ করেছে, তা নিয়ে কিছু বলি। তখন সমাজের পুরুষরা নারীদের সম্মান করতো। হতদরিদ্র হাড়ভাঙ্গা কষ্টে দিনাতিপাত করতো। দুটা টাকা পেলে তা দিয়ে স্বপ্ন দেখতো সুখের একটা সংসারের। নারী পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ ছিলো। কিন্তুু তাদের পরস্পরের প্রতি লজ্জাও ছিলো। এখন লজ্জা শব্দটির সংকটাপন্ন অবস্থা! যখন শুনি কোনো বৃদ্ধ মানুষ কোন বাচ্চাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে, তখন মাথায় এটাই আসে দোষ সমাজের। কিছু খাবার খেলে যেমন শরীরে কিছু রোগের সম্ভাবনা বাড়ে, তেমনি সমাজের কিছু বদভ্যাস এ সমাজটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। যেমন ধরি, ইন্টারনেট ফেসবুকের ব্যবহার। অধিক মাত্রায় ইন্টারনেটে আসক্তি মানুষের মস্তিষ্ককে বিকৃত করে ফেলে। এর ফলে মানুষ বাস্তব বোধ হারিয়ে ভার্চুয়াল জগতে ভাসতে থাকে। তারা বোধ করতে পাওে না তারা যেটা করছে তা জঘন্য অপরাধ! এক্ষেত্রে পুরোপুরি ইন্টারনেটকে দোষ দেয়াও যায় না। কিন্তুু এটা একটা বড়ো কারণ সমাজের অসুস্থতার পিছনে। যার সামাজিকীকরণ অসুস্থ বা ত্রুটিপূর্ণ সে খুব সহজে ইন্টারনেট ও মাদকে আসক্ত হয়ে উঠতে পারে। সে শিশুধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ করতে দুবার ভাবে না। কারণ ওই ভাবনা আর বোধ তার মধ্যে থাকেই না। সে যে অসুস্থ। বিভিন্ন উপায়ে তার সমাজ তাকে অসুস্থ বানিয়েছে। তাকে বিভিন্ন উপাদান দিয়ে বা না দিয়ে তাকে সাহায্য করেছে ধর্ষক হতে। পরিত্রাণ সম্ভব। শুধু আইন পরিবর্তন করে নয় বা আইন কঠোর করে নয়। বরং মূল থেকে ধর্ষণের সব কারণগুলোকে দূর করে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সব সময়ই শ্রেয় ও ফলপ্রসূ। সব বাবা মাই মনে করে তার ছেলের মতো নিষ্পাপ ছেলে হয় না।কিন্তুু বাবা মার এসব নিষ্পাপ সন্তানদের মধ্যেই ধর্ষকরা বেড়ে ওঠে। তাই বাবা মা ও শিক্ষকদের উঠতি বয়সী ছেলেদের বোঝানো উচিত ধর্ষণ একটা জঘন্য অপরাধ। সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে তাদের এমন কিছু না করতে সচেতন করা উচিত। দেশ জাগলেই সুস্থ সমাজ আর সমাজ সুস্থ হলেই প্রজন্ম পায় একটা সুস্থ সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×