ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অলোক আচার্য

সমাজের ক্ষতচিহ্ন

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৮ জুলাই ২০১৯

 সমাজের ক্ষতচিহ্ন

নতুন বছরের শুরু থেকেই ধর্ষণ নামক ব্যাধি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কে যে নিরাপদ আর কে যে ধর্ষক তা যেন নির্ণয় করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বাহ্যিক দৃষ্টিতে তো ধর্ষকদের মানুষের মতো দেখতে! এর মধ্যে শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিশুরা ধর্ষকের টার্গেট হচ্ছে। সায়মার মতো কোন শিশুই আজ এদেশে নিরাপদ নয়। এর কারণ শিশুদের প্রভাবিত করা সহজ। সহজে তাদের মনকে প্রভাবিত করা যায়। আর তাই ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুই তিন বা তার থেকেও কম বছরের শিশুদের টার্গেট করা হচ্ছে। চকোলেট বা অন্যকোন খাবারের লোভ দেখিয়ে বিকৃত রুচির বহির্প্রকাশ ঘটাচ্ছে। বিকৃতমনা মানুষের সংখ্যা এত দ্রুত বেড়ে চলেছে যে, মেয়েদের নিরাপদ সার্কেল বলতে যা বোঝায় তাও যেন ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে। পরিবারও যেন মেয়েদের কাছে নিরাপদ নয়। কেবল ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না শিশুটিকে হত্যা করছে প্রমাণ ঢাকতে। নৃশংসতার এর চেয়ে চূড়ান্ত রূপ আর কি হতে পারে। বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে মানবিকতার বিকৃতি বলছেন। কত বছর ধরে ধীরে ধীরে আমাদের সমাজের সভ্য মানুষগুলো পশুর আচরণ অনুকরণ করেছে। সিরিয়াল কিলারের মতো আজ সিরিয়াল ধর্ষকের পরিচয় বের হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শিক্ষকের কাছে ২০ জনেরও বেশি ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। সত্যি সত্যি পবিত্র স্থানগুলো এসব কুলাঙ্গারদের জন্য অপবিত্র হয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে সব চেয়ে সম্মানের আসন এবং মানুষগুলোকে মানুষ আজ সন্দেহের চোখে দেখে। এটা অত্যন্ত লজ্জার। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এই ঘটনা ঘটার মাত্র কয়েকদিন পরেই কুমিল্লার মুরাদনগরে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষও একই দোষে অভিযুক্ত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও ১০ জনেরও বেশি ছাত্রীর ওপর নির্যাতন চালানোর খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে অনিরাপদ হয়ে উঠছে। শিক্ষকরা নিজেদের সেই পিতার সমান মনোভাব ধরে রাখতে পারেননি। তাদের কাছে জ্ঞান লাভ করতে আসা তাদের সন্তানসম মেয়েরা তাদের লোভের শিকার হচ্ছে। নিজের অবস্থান এবং পদ ভুলে কেবল হীনমানসিকতা দিয়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে। এভাবে আরও কত অজনা ঘটনা আছে যা হয়ত আজও সামনেই আসেনি। পত্রিকার পাতায় যেসব ঘটনা আসে আমরা সেগুলোই জানি। পত্রিকার পাতায় যেসব ধর্ষকের খবর পাই তাদেরই চিনি। আমাদের চারপাশে এ রকম অসংখ্য বিকৃতি মানসিকতার মানুষ যে আছে তাদের চিনতে পারি না। কারণ মানুষের মনের খোঁজ নেয়ার ক্ষমতা কারও নেই। যাকে আপন মনে করে, নিরাপদ মনে করে বিশ^াস করি তার দ্বারাই যদি আমার শিশুর এই করুণ পরিণতি হয় তাহলে বিশ^াস শব্দটা ডিকশোনারি থেকে তুলে দেয়াই উত্তম। এই সমাজে শিশুরা নিরাপদে চলাফেরা কেন করতে পারবে না তার ব্যাখ্যা আজ কারও কাছেই নেই। কোন শিশু যদি এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় আমাদের মুখ লুকানো ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই। আমরা তো আর বলতে পারব না যে, আমাদের দেশে রাতারাতি মানুষের চেয়ে পশুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তোমরা যাদের মানুষ দেখছ তাদের অনেকের ভেতরে পশুত্ব জন্ম নিয়েছে। যে কোন সময় এই পশু তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। যখন সায়মারা বুঝতেই পারে না যে মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়ার জন্য তার ওপর শকুনের দৃষ্টি রয়েছে তখন সে কিভাবে রেহাই পাবে। আমাদের চেনা আধুনিক সভ্যতার তবে এই চিত্র! এর থেকে তো আদিম মানুষগুলোও ভাল ছিল। কাল যে আর একজন সায়মার পরিণতি বরণ করবে না সে নিশ্চয়তা তো আমরা আজ দিতে পারছি না। আমাদেরই আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকা হায়েনারা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। পাবনা থেকে
×