ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির এমডিকে অবশেষে বদলি

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ১৮ জুলাই ২০১৯

 বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির এমডিকে অবশেষে বদলি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবশেষে অনিয়ম চাঁদাবাজি ও স্বজনপ্রীতির দায়ে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলার গঠিত তদন্তে অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির প্রমাণ মিললেও অজ্ঞাত খুঁটির জোরে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানিতে এমডি পদে বদলি করা হয়েছে। এতে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং এবং মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, ফজলুর রহমান এর আগেও মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানিতে ছিলেন। তখন অনিয়মের অভিযোগে তাকে সেখান থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। কোম্পানিটির চরম নাজুক পরিস্থিতির জন্য তাকেই দায়ী করা হয়। এরপরও তাকে মধ্যপাড়ার দায়িত্ব দেয়ায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। এদিকে ফজলুর রহমানকে সরানো হলেও তার অলিখিত দুই উপদেষ্টা জিএম- প্রশাসন (চলতি দায়িত্ব) সাইফুল ইসলাম দিপু এবং ম্যানেজার (মাইনিং) মোশাররফ হোসেন সরকার স্বপদে বহাল রয়েছেন। অথচ অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা কারণে হয়রানি সব কিছুতেই তারা এমডিকে সহায়তা করেছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সার্বিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ার সঙ্গে কোম্পানির কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে প্রতিষ্ঠানটির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন এবং শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন তার অপকর্মের বিষয়গুলো লিখিতভাবে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে জানায়। এছাড়া ফজলুর রহমান মাসিক সমন্বয় সভাসহ বিভিন্ন ফরমাল ও ইনফরমাল সভায় ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এসব বিষয়টিও তুলে ধরেছে অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন। প্রতিমন্ত্রী অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত খুঁটির জোরে তাকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে বদলি করে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির দায়িত্ব দেয়া হয়। গত বছর আগস্টে বড়পুকুরিয়া কয়লা কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ফজলুর রহমানকে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। কয়লা খনি কোম্পানির দায়িত্ব নিয়েই তিনি অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রফিট বোনাস আটকে রেখে ওপর মহলকে দেয়ার নাম করে কয়লা খনি কোম্পানির স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকলের কাছ থেকে মাথাপিছু ৪০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। এভাবে প্রায় ৫৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেলে ফজলুর রহমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা ছাড়াও গণহারে শোকজ করেন। গণমাধ্যমকে ভবিষ্যতে আর কোন তথ্য না দিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিঠিও দেন। এ সময় তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে দেখার মতো ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। বিষয়গুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়। সবমিলিয়ে কয়লা খনিতে নাজুক অবস্থা দেখা দিলে এমডির অনিয়মসহ খনির সার্বিক বিষয় তুলে প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দেন। এলাকাবাসীও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার বিক্ষোভ সমাবেশও করে। এছাড়া ইচ্ছেকৃতভাবে কয়লা খনিতে উৎপাদন বন্ধ রাখা এবং প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না করলেও চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ (এলডি) আদায় না করে ফজলুর রহমান চুক্তি লঙ্ঘনের মাধ্যমে উল্টো অতিরিক্ত বিলসহ প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা প্রদান করে।
×