ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির চিন্তা করছে সরকার

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১৮ জুলাই ২০১৯

 টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির  চিন্তা করছে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হঠাৎ করেই বেড়েছে পেঁয়াজের মূল্য। তবে এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানেন না কেউই। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে মূল্য বেড়েছে। আড়তদাররা দুষছেন আমদানি মূল্যকে। আমদানিকারকদের দাবি, ভারতের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ রফতানি কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে সরবরাহ কম হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে, তাই মূল্যও বেড়েছে। আর সরকার বলছে, অতিবৃষ্টিতে পেঁয়াজ পচে গেছে। ভারত থেকেও আমদানি কম হচ্ছে। এসব কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়ায় মূল্যও কিছুটা বেড়েছে। হঠাৎ করে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতা, পাইকারি বিক্রেতা, আড়তদার ও আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৯ সালের সিজনে দেশে উৎপাদন হয়েছে ২৬ লাখ মেট্রিক টন। এর আগের বছর ২০১৮ সালে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন। তবে, ২০১৯ সালের পেঁয়াজ আমদানির হিসাব পাওয়া যায়নি। কারণ, এখনও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। তবে এবারের আমদানির পরিমাণ তেমনই হবে। বৈঠকে বাণিজ্য সচিব জানতে চেয়েছেন, যদি তা-ই হয়, তাহলে তো কমবেশি ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাড়তি থাকার কথা। বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাড়তি পেঁয়াজ কৃষকের ঘরেই আছে। কারণ, পচনশীল বলে আড়তে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ করে রাখা সম্ভব নয়। ভারত যখন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য নির্ধারণ করে, ঠিক তখনই সেই পেঁয়াজ বাজারে ছাড়েন কৃষকরা। তাতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি মূল্য পাওয়া যায়। জানা গেছে, ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে প্রতি কেজিতে এক রুপী করে রফতানিকারকদের প্রণোদনা দিত। সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের বাজারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত না হলেও দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই বলে নিশ্চিত হয়েছে সরকার। কোন কারণে যদি পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে না আসে তাহলে (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) টিসিবির মাধ্যমে বাজার থেকে কিনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও ন্যায্যমূল্যে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যদিও বিষয়টি এখন পর্যন্ত চিন্তা ভাবনার পর্যায়েই রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যটি আমদানি নির্ভর। তাই সরবরাহ পরিস্থিতি ও আমদানি মূল্যের ওপর বাজারে এর মূল্য বাড়া-কমা নির্ভর করে। এছাড়া পণ্যটি পচনশীল। বৃষ্টির সময় বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। পচে যায়। এবার অতিবৃষ্টিতে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ পচে গেছে। তাই বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।’ এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ?‘অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য বিভিন্ন উৎসবকে বেছে নেয়। আগামী কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে তারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে, আমরা বাজার মনিটরিং করছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২১ থেকে ২২ লাখ মেট্রিক টন। এ বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ, চাহিদা সবই আছে আগের মতোই। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা সরকারকে বিব্রত করেছে। মাত্র সাত থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে ২৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। এই হিসাবে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। জানতে চাইলে রাজধানীর কাওরানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আড়তে মূল্য বেড়েছে। আমরা বেশি মূল্য দিয়ে কিনে এনেছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।’ আর শ্যাম বাজারের আড়তদার শ্যামা প্রসাদ সিকদার বলেন, ‘হিলি থেকে সরবরাহ কমেছে। প্রতিদিন ৯০ ট্রাক পেঁয়াজ আসত। এখন আসছে ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় মূল্য বেড়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশী পেঁয়াজের মূল্যও বেড়েছে।’ এদিকে, একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে। একদিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ২২-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ টাকা দরে।’ এই তথ্য নিশ্চিত করে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে প্রতি কেজিতে এক রুপী করে রফতানিকারকদের প্রণোদনা দিত। সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের বাজারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিপাতের কারণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে সরবরাহও কমেছে। দেশটির বাজারে মূল্য বেড়েছে দ্বিগুণ। আগে ভারতের ইউপিসহ বিভিন্ন মোকামে যে পেঁয়াজ আমরা ৫-৬ রুপীতে কিনতাম, এখন তা কিনতে হচ্ছে ১১-১২ রুপীতে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাড়তি পরিবহন ভাড়া।’ এজন্য দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে বলেও তিনি জানান।
×