ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে...

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৮ জুলাই ২০১৯

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে...

মোরসালিন মিজান ॥ এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো বুধবার। এবার আরও ভাল রেজাল্ট। পাসের হার অনেক বেড়েছে। বেড়েছে জিপিএ ফাইভ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও। আনন্দটা তাই ছড়িয়ে পড়েছিল। কলেজ ক্যাম্পাসে সে কী হৈ হুল্লোড়! সফল শিক্ষার্থীরা উৎসবে মেতেছিল। নেচে গেয়ে উদ্যাপন করেছে তারা। বাসায়ও হাসিমুখ। সন্তানের ফলে খুশি বাবা-মা আগেভাগেই মিষ্টি দিয়ে ফ্রিজ ভর্তি করে রেখেছিলেন। দুপুরের মধ্যে পাড়ার অনেক দোকানের মিষ্টি শেষ হয়ে যায়। তবে এই ভাল ফল কিংবা মিষ্টি বিতরণই শেষ কথা নয়। মানুষ হওয়ার পরীক্ষায়ও পাস করতে হবে। মানবিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, সততা, সুনাগরিকতার গুণ অর্জন করতে হবে নিজের ভেতরে। অন্তরকে জাগাতে হবে। এইচএসসির ফল প্রকাশের দিনে এসব চাওয়াও সামনে এসেছে। ক্রম অবনতিশীল সমাজে চাওয়াগুলো পূরণ হওয়া খুবই জরুরী। সে দিকে দৃষ্টি দেয়ার আলাদা তাগিদ দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত এপ্রিলে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ জন। সার্বিক পাসের হার ৭৩.৯৩ শতাংশ। জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ জন। সে হিসাবে এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন। ভাল ফলাফল হওয়ায় উদ্যাপনটাও বিশেষভাবে চোখে পড়েছে। দুপুর দেড়টার দিকে ফল পৌঁছে যায় কলেজগুলোতে। শুরু হয়ে যায় উৎসব। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস। ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস মুখরিত করে রেখেছিল ভাল ফল করা শিক্ষার্থীরা। এখানে সবাই মেয়ে। এবং সারাদেশে পাসের হারে এবার মেয়েরাই এগিয়ে। ঢাকা বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার যেখানে ৬৮ দশমিক ২২ শতাংশ, সেখানে মেয়েদের ৭৪ শতাংশ। যেন বিপুল এই আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটেছিল ভিকারুননিসার ক্যাম্পাসে। মেয়েরা একে অন্যের হাত ধরাধরি করে নাচছিল। গাইছিল। দেখে মনে হচ্ছিল সব পাওয়া হয়ে গেছে। আসলেই কি? জানতে চাইলে দৌড়ঝাঁপ করে ক্লান্ত শিক্ষার্থী সুমি বলছিল, এখন মনে হচ্ছে সবই পেয়ে গিয়েছি। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত টেনশনে গা কাঁপছিল। যদি উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যায়! গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ নিশ্চিত হওয়ার পর মনে শান্তি পাচ্ছে বলে জানায় সে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে অভিন্ন ফল করা ঐশী অনেক বেশি কনফিডেন্ট। বলল, ভাল এক্সাম দিয়েছি। জানতাম আমি গোল্ডেন পাব। পেয়েছিও। এখন সামনে কী হবে তা নিয়ে ভাবছে বলে জানায় সে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ কয়েক বছর ধরেই দারুণ ফল করছে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। এখানে পাসের হার শতভাগ। মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক হাজার ৫৮৯ জন। তার মধ্য থেকে এক হাজার ১২২ জনই জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর জিপিএ ফাইভের হার ২০ শতাংশ বেশি। একই কারণে আনন্দটাও বেশি বলে মনে হয়েছে। ফল প্রকাশ উপলক্ষে শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে সমবেত হয়েছিল। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে উদ্যাপন করছিল তারা। বাদ্যের তালে তালে নাচ হচ্ছিল। কারও কারও তো শূন্যে উড়াল দেয়ার মতো অবস্থা। তাদেরই একজন রিয়াদ। কথা প্রসঙ্গে সে বলছিল, পরীক্ষার সময় অসুস্থ ছিলাম। বাবা-মা ধরেই নিয়েছিল ভাল কিছু হবে না। কিন্তু জিপিএ ফাইভই এসেছে। এ কারণেই উচ্ছ্বাস এত বেশি বলে জানায় সে। উদ্যাপনের প্রায় একই ছবি দেখা গেছে নটর ডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজসহ কয়েকটি কলেজ ক্যাম্পাসে। তবে শুধু স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ভাল করলেই হবে না, মানুষ হওয়ার পরীক্ষায়ও পাস করতে হবে। তা না এই ফল ভেস্তে যাবে, কোন কাজে আসবে না। ফল প্রকাশের দিন এই কথাগুলোও বার বার সামনে এসেছে। এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিও। সংবাদ সম্মেলনে জরুরী এই প্রসঙ্গের অবতারণা করেন তিনি। অভিভাবকদের উদ্দেশ করে বলেন, দেশের কল্যাণে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার শিক্ষা যদি আপনার সন্তানরা না পায়, মনে রাখবেন এ শিক্ষা অর্থবহ হবে না। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য বৃথা যাবে। সন্তানদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে না দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী। বলার অপেক্ষা রাখে না, সচেতন মানুষ মাত্রই এমনটি চান। এই চাওয়া পাওয়া হয়ে ধরা দিক। অন্তর মম বিকশিত করো/অন্তরতর হে।/নির্মল করো উজ্জ্বল করো,/সুন্দর করো হে।/জাগ্রত করো, উদ্যত করো,/নির্ভয় করো হে...। আগামী দিনের ছেলে-মেয়েদের মন বিকশিত হোক। সুন্দর হোক। সুন্দরের হোক ওরা। পরীক্ষা পাসের দিনে অভিনন্দন তাদের।
×