ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি ও জেলা প্রশাসনের ভিন্ন বক্তব্য

গোপালগঞ্জে ৪০০ কেভি সাবস্টেশন নির্মাণ কাজ বন্ধ

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৮ জুলাই ২০১৯

 গোপালগঞ্জে ৪০০ কেভি  সাবস্টেশন নির্মাণ  কাজ বন্ধ

রশিদ মামুন ॥ জমি বিক্রির অর্থ না পেয়ে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের বিদ্যুত সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) গুরুত্বপূর্ণ তিন কেন্দ্রের বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য গোপালগঞ্জে ৪০০ কেভি সাবস্টেশন নির্মাণ করছে। গত সপ্তাহে সাবস্টেশন নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয়রা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করে পিজিসিবি এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বলছে এক বছর আগে ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এখনও জেলা প্রশাসন থেকে অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ না করাতে এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে ক্ষতিপূরণ আইন মেনে বিতরণ করতে বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকল্প অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের অতিরিক্ত অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এতে করে যেসব মানুষ টাকা পেয়ে গেছেন তারা এখন আসছেন অতিরিক্ত অর্থের জন্য। না পেলেই আন্দোলন করছেন। পিজিসিবি বলছে, পায়রা, রামপাল এবং রূপপুর কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুত প্রথমে গোপালগঞ্জে আনা হবে। এরপর ওই বিদ্যুত ঢাকায় সঞ্চালন করা হবে। এজন্য গোপালগঞ্জে একটি ৪০০/১৩২ কেভি ক্ষমতার সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গোপালগঞ্জের সঙ্গে পায়রা-রামপাল-রূপপুরকে সংযুক্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকায় ওই বিদ্যুত আনতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং পিজিসিবির আমিনবাজার সাবস্টেশনের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে সবথেকে এগিয়ে থাকা পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র আগামী ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে। সাবস্টেশনটিরও নির্মাণকাজ ওই সময়ে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন ক্ষতিপূরণের অর্থ বিতরণ না হওয়াতে কাজই বন্ধ হয়ে গেছে। প্রসঙ্গত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিক ১০ প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রামপাল এবং রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র। অন্যদিকে দ্রুত কাজ শেষ করায় পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রকে বলা হচ্ছে সুপার ফাস্ট প্রকল্প। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা শুনেছি ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে স্থানীয়দের কাছে কে বা কারা উৎকোচ চাইছে। যা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এজন্য স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেছে। তাদের প্রতিবাদের মুখে বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে কে কার কাছে এই উৎকোচ দাবি করছে সে বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন যেহেতু বিষয়টি আমাদের নয় আমাদের দায়িত্ব ছিল ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়া আমরা ওই পর্যন্তই জানি। গত ১০ জুলাই থেকে সাবস্টেশনের নির্মাণ বন্ধ রেখেছে পিজিসিবি। স্থানীয় জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে সাবস্টেশনের ৪০ একর জমির জন্য ৭১টি আবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯টি চেক ইস্যু করা হয়েছে। অন্যদিকে ২৭টি আবেদনের বিপরীতে স্থানীয় আদালতে মামলা রয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে কাজ করছে জেলা প্রশসন। মামলা শেষ না হাওয়া পর্যন্ত আইন অনুযায়ী অর্থ পরিশোধের কোন বিধান নেই। অর্থাৎ এখন ৪৪টির চেক হস্তান্তর করা হবে। জানতে চইলে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাঃ শাম্মী আক্তার জানান, আমরা কাজ করছি আশা করছি খুব শীঘ্রই যাদের কাগজপত্র ঠিক রয়েছে তাদের চেক ইস্যু করা হবে। তিনি বলেন, যাদের মামলা রয়েছে তাদের আমরা আইন অনুযায়ী অর্থ দিতে পারি না। আমরা প্রতিদিনই কাজ করছি আজও এ বিষয়ে কাজ করেছি। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন আমার ওই রকম কিছু নেই। টাকা পয়সা খাই না। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে একজন ক্ষতিগ্রস্ত আমার কাছে এসে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। টাকা পেয়ে যাওয়ার পরও এই দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, তাদের প্রকল্প অফিস থেকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তিনি জানান, পুরনো আইনে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন আইনে জমির ক্ষতিপূরণ বেশি দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। পুরাতন আইনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রকৃত দামের দ্বিগুণ এবং নতুন আইনে সরকারী প্রকল্পের জন্য তিনগুণ আর বেসরকারী প্রকল্পের জন্য চারগুণ দাম দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সম্প্রতি আইনটি পাস হয়েছে। জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী শফিকুর রহমান বলেন আমরা তিন চার মাস আগে প্রকল্পটির কাজ শুরু করেছি। কিন্তু গত ১০ জুলাই থেকে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় বিক্ষুব্ধরা প্রতিবাদ করে আমাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন বিষয়টি দেখছে আশা করছি শীঘ্রই কিছু একটা সুরহা হবে। প্রায় তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে সাবস্টেশন ছাড়াও গ্রিড লাইন নির্মাণের কাজ রয়েছে। প্রকল্পটি সঠিক সময়ে শেষ না হলে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রকে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে। বলা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে পায়ার প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। এতে ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন বেশি হবে। অন্যদিকে এর ছয় মাসের মাথায় দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে এলে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। প্রথম ইউনিটের বিদ্যুত খুলনা এবং বরিশালে আঞ্চলিকভাবে বিতরণ করা হলেও দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুত গ্রহণ করার মতো চাহিদা ওই এলাকার নেই। এছাড়া রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজও চলছে আগামী বছর কেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা। গোপালগঞ্জ সাবস্টেশন নির্মাণকাজ শেষ না হলে ওই কেন্দ্রের বিদ্যুত সঞ্চালন নিয়েও বিপাকে পড়বে পিজিসিবি। জানতে চাইলে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী প্রণব কুমার রায় জানান, প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে শেষ না করতে পারলে বহুমুখী সমস্যায় পড়তে হবে। দ্রুত সমস্যা সমাধান করে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা জরুরী বলে মনে করেন তিনি।
×