ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘শিল্পীর স্কেচ খাতা’ দ্বাদশ স্মারক বক্তৃতা

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৮ জুলাই ২০১৯

 ‘শিল্পীর স্কেচ খাতা’ দ্বাদশ স্মারক  বক্তৃতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একজন শিল্পীর ‘স্কেচ খাতা’ থাকে। এটা এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, যারা সত্যিকারের শিল্পী তারাই উপলব্ধি করে। আমি এটা উপলব্ধি করেছি চারুকলায় ভর্তি হওয়ার দিন থেকে। আজও কিন্তু আমি যেখানে যাই সব সময় আমার হাতে একটি স্কেচ খাতা থাকে। একজন সঙ্গীতশিল্পীর যেমন প্রতিদিন রেয়াজ করতে হয়, এই স্কেচ খাতাটি আমার কাছে তেমনি একদিন যদি ড্রইং না করি, তাহলে মনে হয় যেন আমি পাঁচদিন পিছিয়ে গেলাম। এই অনুভূতি নিয়ে ১৯৫৬ সালে যখন ভর্তি হয়েছি তারপর আজকের ২০১৯, প্রায় সাড়ে ৬২ বছর আমার এই স্কেচ খাতার সঙ্গে পরিচয়। আমার পেইনটিং বলেন, ‘অন্য যেসব কাজ করি তার সবই এই স্কেচ খাতা নির্ভর। বলতে পারেন এই স্কেচ খাতা হচ্ছে আমার দিন লিপির মতো’-দ্বাদশতম মিসবাহউদ্দিন খান স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ‘শিল্পীর স্কেচ খাতা’ শিরোনামের এ বক্তৃতার শুরুতে এ কথা বলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে মুনতাসীর মামুন ফাতেমা ট্রাস্ট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন, আমার পিতা ইতিহাসবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য মিসবাহউদ্দিন খান। বাংলাদেশ চর্চা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর আমরা এই আয়োজন করি। এর আগে এই স্মরক বক্তৃতা করেছেন কবীর চৌধুরী, মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আনিসুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, শামসুজ্জামান খান, মফিদুল হক, মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ও বাহারউদ্দিন। এবার দ্বাদশতম আয়োজনে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খানকে। তার এবারের বক্তৃতার শিরোনাম ‘শিল্পীর স্কেচ খাতা’। স্মারক বক্তৃতার আগে শিল্পী হাশেম খান স্কেচ খাতার সঙ্গে তার পরিচয়ের গল্প তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটা যেমন আমার নিজের বেড়ে ওঠার ইতিহাস, সেইসঙ্গে দেশ এই ৬২ বছরে যে ইতিহাস রচনা করেছে সে সবও প্রতিটি স্কেচ এবং ড্রইংয়ের সঙ্গে জড়িত। এগুলো এখন আমার আসল গ্রন্থ। এতে দেশের অনেক ইতিহাসের উপাত্ত রয়েছে। সেই ভাষা আন্দোলনের চার বছর পরে আমি চারুকলায় ভর্তি হয়েছি। সে ভাষা আন্দোলন থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে সেগুলো দিন লিপির মতো আমার স্কেচ খাতায় রয়েছে। কখনও ড্রইং আবার কখনও রঙে তুলে ধরেছি। আমি যে বেড়ে উঠেছি, ছবি আঁকতে শিখেছি, ছবি আঁকছি, তার ওপর বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছি বা হচ্ছি সেগুলোই এই স্কেচ খাতায় লিখে চলেছি। এগুলো হয়ত আমার দিন লিপি বা আমার স্মৃতি কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে সেটিই আমার স্কেচ খাতা। তাই আজকের এই বক্তৃতার শিরোনাম হাশেম খানের ‘স্কেচ খাতা’। এর একদিকে স্কেচ অন্যদিকে লেখা। ড্রইং আছে। আমি লিখেছি কোথায় কি কারণে ড্রইংটি করলাম। আমি শুধু যা দেখি তার নয়। এর একটা দেখা চোখের আরেকটা হচ্ছে অনুভূতি বা আমার বোধ। এই বোধের কথা কখনও ড্রইং কখনওবা লিখে রেখেছি। সভাপতির বক্তব্যে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, আমার অগ্রজ মিসবাহউদ্দিন খানের জন্মবার্ষিকীতে প্রতি বছর এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। সে আমার জ্যেষ্ঠতম ভ্রাতা। তিনি আমাদের প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তার জীবনাদর্শ আমরা অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি। তিনি সারাজীবন ইতিহাসের চর্চা করে গেছেন। আমার বিশ্বাস আগামীতেও তার জীবনদর্শন নিয়ে স্মারক বক্তৃতা চালিয়ে যাবে এ প্রতিষ্ঠান। আমাদের বড় ভাই শিল্পীদের খুবই পছন্দ ও শ্রদ্ধা করতেন। শিল্পীরা যে চোখে সৃষ্টিকে দেখেন আমরা সে চোখে হয়ত দেখতে পারি না। শিল্পী হাশেম খান তার স্কেচ খাতায় জীবনের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। পরবর্তী প্রজন্ম যেন সে অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয় এই আশা ব্যক্ত করি। তিনি তার বক্তব্যে দেশের কথা, মানুষের কথা, উন্নয়নের কথা বলেছেন।
×