ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইংলিশদের রেকর্ডময় এক বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৮ জুলাই ২০১৯

ইংলিশদের রেকর্ডময় এক বিশ্বকাপ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ রেকর্ডে রেকর্ডে ছয়লাব এক বিশ্বকাপে রেকর্ড গড়ে প্রথম শিরোপা জিতেছে আয়োজক ইংল্যান্ড। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে তারা হারিয়েছে বেশি বাউন্ডারির ফাঁদে ফেলে। ৪৪ বছরে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম কোন ফাইনালের নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভার এবং পরবর্তীতে সুপার ওভারও টাই হয়! শুরুতেই বৃষ্টির দাপটে রেকর্ড চার ম্যাচ পরিত্যক্ত, লীগপর্বের এক পর্যায়ে বাদ পড়ার শঙ্কা কাটিয়ে ইংলিশদের ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠা, রানরেটে এগিয়ে থাকায় অনেকটা ভাগ্যগুণে নিউজিল্যান্ডের শেষ চারে উঠে আসা, অতঃপর ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে দমবন্ধ সেই উত্তেজনার ফাইনাল... ২৩ বছর পর নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নের দেখা... দেড়মাসব্যাপী আয়োজনে ব্যাট-বলে উন্মাদনার পাশাপাশি রেকর্ডও হয়েছে দেদারসে। প্রথম শিরোপা জয়ের পথে ইয়ন মরগানের দল সেখানে নিজেদেরই অনেক রেকর্ড ভেঙ্গেচুরে একাকার করে দিয়েছে। সাতজন ভিনদেশী বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার ইংল্যান্ডকে চ্যাম্পিয়ন করতে রেখেছেন মহাগুরুত্বপূর্ণ অবদান। এটাও তো নতুন রেকর্ড। তার মধ্যে অধিনায়ক মরগান, ফাইনালের নায়ক বেন স্টোকস, সেনশেনাল পেসার জোফরা আরচার অন্যতম। ঘরের মাঠে বহু আরাধ্য শিরোপা জয়ের পথে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রায় সব রেকর্ডই এবার নতুন করে লিখিয়েছে ইংলিশরা। একনজরে তারই চুম্বক অংশ দেখে নেয়া যাক...। ** সবচেয়ে বেশি রান ঃ এবারের আগে এক বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান ছিল গ্রেট গ্রাহাম গুচের। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে তিনি করেছিলেন ৪৭১ রান। এবার ৫৫৬ রান করে সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন ক্ল্যাসিক্যাল জো রুট। ৫৩২ রান নিয়ে গুচকে ছাড়িয়ে গেছেন জনি বেয়ারস্টোও। ** সবচেয়ে বেশি উইকেট ঃ এক বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ডটি ছিল আরেক গ্রেট ইয়ান বোথামের। ১৯৯২ বিশ্বকাপে সর্বশেষ দল যেবার ফাইনাল খেলে তিনি নিয়েছিলেন ১৬ উইকেট। এবার ২০ উইকেট নিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নেয়া ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ পেসার জেফরা আরচার। এছাড়া মার্ক উড ১৮টি ও ক্রিস ওকস নিয়েছেন ১৬ উইকেট। ** সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি ঃ এর আগে এক বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ দুটি করে সেঞ্চুরি ছিল। শেষ আট আসরে সবমিলিয়ে তাদের সেঞ্চুরি ছিল সাতটি। সেখানে এবার এক আসরেই সাতটি সেঞ্চুরি করেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। ** সবচেয়ে বেশি ছক্কা ঃ এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৭৬টি ছক্কা মারার নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছে এবার ইংল্যান্ড। তাদের আগের রেকর্ড ছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে ২২ ছক্কা। এবার অধিনায়ক ইয়ন মরগান একাই হাঁকিয়েছেন ২২টি ছক্কা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে ২৫ ছক্কার নতুন ওয়ানডে বিশ্বরেকর্ডও গড়েছে ইংলিশরা। ** সবচেয়ে বেশি শতরানের জুটি ঃ এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ চারটি শতরানের জুটি ছিল ইংল্যান্ডের। এবার ১১টি শতরানের জুটিতে নতুন বিশ্বকাপ রেকর্ড গড়েছে তারা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জো রুট ও অধিনায়ক ইয়ন মরগানের ১৮৯ রানের যুগলবন্দী বিশ্বকাপে যে কোন উইকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটির নতুন রেকর্ড। ** সবচেয়ে বেশি ৩০০ ছাড়ানো স্কোর ঃ আগের ১১টি বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে যেখানে মাত্র আটটি ৩০০ ছাড়ানো দলীয় স্কোর ছিল ইংল্যান্ডের। সেখানে এবার এক আসরেই ছয় ম্যাচে ৩০০ ছাড়িয়ে নতুন বিশ্বকাপ রেকর্ড গড়েছে স্বাগতিকরা। আগের রেকর্ডটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ২০০৭ বিশ্বকাপে পাঁচটি ৩০০ ছাড়ানো স্কোর ছিল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অসিদের। ** সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ঃ এক আসরে সবচেয়ে বেশি ১৩টি ক্যাচের নতুন বিশ্বকাপ রেকর্ড (ব্যক্তিগত) গড়েছেন ইংল্যান্ডের জো রুট। এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১১টি ক্যাচ নিয়েছিলেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং। ** সবচেয়ে বেশি জয় ঃ বিশ্বকাপ জয়ের পথে এবার সাতটি ম্যাচ জিতেছে ইংল্যান্ড। এক আসরে তাদের আগের সর্বোচ্চ ছয়টি জয় ছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে। এবার তিনটি ম্যাচ হেরেছে ইংল্যান্ড। এর আগে তিনটি ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ জেতার নজির ছিল শুধু পাকিস্তানের (১৯৯২)। এতো গেল চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কথা। ১২তম বিশ্বকাপে এবার সর্বোপরি ব্যাটে-বলে স্মরণীয় কিছু ইনিংস উপহার দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। খেলোয়াড়দের অসাধারণ নৈপুণ্যে ঘষামাজা হয়েছে সর্বোপরি বিশ্বকাপ এবং ওয়ানডে রেকর্ডের পাতায়। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে আসরটি স্মরণীয় করে রেখেছেন যারা- সাকিব আল হাসান তাদের অন্যতম। বাংলাদেশের এ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আসরে দেখিয়েছেন চৌকস নৈপুণ্য। ৮ ম্যাচে ৬০৬ রান ও বল হাতে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার অন্যতম দাবিদার ছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি গেছে রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের হাতে। ** ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ঃ ১৬৬ ডেভিড ওয়ার্নার, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ, ট্রেন্টব্রিজ। ১৫৩ জেসন রয়, ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ, কার্ডিফ। ১৫৩ এ্যারন ফিঞ্চ, অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা, ওভাল। ** ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং ঃ ৬/৩৫- শাহীন শাহ আফ্রিদি, পাকিস্তান-বাংলাদেশ, লর্ডস। ৫/২৬- মিচেল স্টার্ক, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, লর্ডস। ৫/২৯- সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান, সাউদাম্পটন। ** দলীয় সর্বোচ্চ ঃ ৩৯৭/৬, ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান, ওল্ডট্র্যাফোর্ড। ৩৮৬/৬, ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ, কার্ডিফ। ৩৮১/৫, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ, ট্রেন্টব্রিজ। ** দলীয় সর্বনিম্ন ঃ ১০৫/১০ পাকিস্তান-উইন্ডিজ, ট্রেন্টব্রিজ। ১২৫/১০ আফগানিস্তান-দ. আফ্রিকা, কার্ডিফ। ১৩৬/১০ শ্রীলঙ্কা-নিউজিল্যান্ড, কার্ডিফ।** সংখ্যাতত্ত্ব ঃ ২১০২১- প্রথমপর্বের মোট রান। ৬২৫টি- প্রথমপর্বের মোট উইকেট। ২২টি- সবচেয়ে বেশি ছক্কা ইংল্যান্ডের ইয়ন মরগানের, ১৭টিই আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ১৯টি- সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল অস্ট্রেলিয়া উইকেটরক্ষক এ্যালেক্স ক্যারির। ১১টি- সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ইংল্যান্ডের জো রুটের। ১৯২- সবচেয়ে বড় জুটি অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজার, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে।
×