ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী খসরু

মৎস্য সম্পদে দেশ উদ্বৃত্ত, রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৮ জুলাই ২০১৯

 মৎস্য সম্পদে দেশ উদ্বৃত্ত, রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে মৎস্য সম্পদে ঘাটতি নয়, উদ্বৃত্ত থাকবে এবং সেই উদ্বৃত্ত বিদেশে আরও বেশি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। বুধবার সকালে রাজধানীর মৎস্য ভবনে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। ‘মাছ চাষে গড়বো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগান এবং ‘মৎস্য সেক্টরের সমৃদ্ধি, সুনীল অর্থনীতির অগ্রগতি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ১৭ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত উদযাপিত হবে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, মাছের উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ইলিশে প্রথম, মুক্তজলাশয়ের আহরণে তৃতীয়, তেলাপিয়ায় চতুর্থ এবং বদ্ধজলাশয়ে চাষ করা মাছে পঞ্চম স্থানের অধিকারী। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মধ্যে বর্তমান সরকারের আমলেই প্রথম এসব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। খাদ্য ও মাংসের পাশাপাশি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথমবার মাছের উৎপাদনেও দেশ স্বয়ম্ভরতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি দুষ্প্রাপ্য প্রায় ইলিশ উৎপাদনেও এ সরকার রেকর্ডভঙ্গ করেছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদিত হলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে। এছাড়াও ২০১৭-১৮ সালে মাছের চাহিদা ৪২ লাখ ৩৮ হাজার টন থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার টন। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশেরও বেশি এই সেক্টরে কর্মরত বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মোঃ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গভবনের পুকুরে এবং স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদ ভবনের লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদানের কথা উল্লেখ করে খসরু বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশে এবং কৃষি জিডিপির এক-চতুর্থাংশেরও বেশি অংশে মৎস্য খাতের অবদান রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে এ পদক্ষেপের আওতা আরও বাড়ানো হবে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বর্তমানে মৎস্য সম্পদে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। প্রতিমন্ত্রী জানান, ইলিশ সম্পদের স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে জেলেদের সঞ্চয়ী করার পাশাপাশি তাদের আপৎকালীন জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাড়ে ৩ কোটি টাকার একটি ‘ইলিশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ তহবিল’ গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সমুদ্র সম্পদকে যথাযথ কাজে লাগাতে নিজস্ব গবেষণা ও জরিপ জাহাজ আরভিমীন সন্ধানীর মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে ৪৩০ প্রজাতির মৎস্য সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৬০ প্রজাতির মাছ, ৩৩ প্রজাতির চিংড়ি, ২১ প্রজাতির কাঁকড়া ও ১২ প্রজাতির মোলাস্ক রয়েছে। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য দশটি লং লাইনার এবং সাতটি পার্স সেইনার ফিশিং লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীববৈচিত্র্যকে অধিকতর সমৃদ্ধ করতে সরকার গত ২৬ জুন নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১শ’ ৮৮ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকাকে প্রথমবার ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। দেশী পাবদা, গুলশা, টেংরা, মহাশোলসহ বিলুপ্তপ্রায় ২০ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সরকার কৃত্রিম প্রজনন ও চাষাবাদকৌশল উদ্ভাবন করায় এসব মাছের প্রাপ্যতা বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিলুপ্তপ্রায় সব মাছ পুনরুদ্ধারেও গবেষণা জোরদার করা হয়েছে। এর আগে প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মৎস্যভবন থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান দিলদার আহমদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুবল বোস মনি, মৎস্য অধিদফতরের ডিজি আবু সাইদ মোঃ রাশেদুল হক, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজি ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×