ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৮ জুলাই ২০১৯

   শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির কারণে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরনো ভাঙন অংশ দিয়ে বন্যার পানি দ্রুতবেগে প্রবেশ করায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পোড়ার দোকান কজওয়ের (ডাইভারশন) ওপর দিয়ে প্রায় ২ ফুট উচ্চতায় প্রবলবেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ওই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও যেকোন সময় শেরপুর থেকে জামালপুর হয়ে রাজধানী ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে পানি নেমে আসতে থাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সদরের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি বাড়ায় প্লাবিত হচ্ছে চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের বিলাসপুর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মামুন মিয়া (১১) নামে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মামুন স্থানীয় মীর্জা মিয়ার ছেলে। এ নিয়ে ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় গত ৫ দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ২ শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হলো। এছাড়া বন্যার পানি ওঠায় জেলায় ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ দিন ধরে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্যমতে, বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের ৫ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ১৭২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্ততঃ ৬৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে ১ মিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পোড়ার দোকান কজওয়েতে (ডাইভারশন) গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২ ফুট উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশা চলাচল এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু বাস-ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে ডাইভারশনে চলাচল করছে। আবার কেউ কেউ নৌকায় করে ডাইভারশন অংশটুকু পারাপার হচ্ছেন। সেখানে কথা হয় স্থানীয় চরপক্ষীরী ইউনিয়নের পোড়ার দোকান এলাকার নির্মাণ শ্রমিক মোস্তফা মিয়া, নন্দিরজোত এলাকার আব্দুল বারি মিয়া, কৃষক ফারুক মিয়ার সঙ্গে। তারা বলেন, বুধবার সন্ধ্যায়ও আমাদের এলাকায় পানি ছিল না। হঠাৎ রাত ৮টার দিকে হু হু করে বন্যার পানি এলাকায় ঢুকে পড়ে। এমনকি শেরপুর-জামালপুর সড়কের ডাইভারশনের ওপর দিকে রাতের মধ্যেই হাঁটু পানি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হতে থাকে। বন্যার পানিতে তাদের বীজতলা, সবজি ও পাটের আবাদ তলিয়ে গেছে, বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকেছে। তারা বলেন, যেকোনো সময় ডাইভারশনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বন্যার পানির যে অবস্থা, তাতে এবার প্রবল বন্যা হতে পারে। বন্যায় জেলায় কৃষিবিভাগের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা না গেলেও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম জানিয়েছেন, বিভিন্ন পুকুর, জলাশয়সহ খামারের মাছ ভেসে ও পাড় ভেঙে প্রায় ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এটিএম জিয়াউল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ক্যাম্প কাজ করবে। ইতোমধ্যে বন্যার্ত মানুষের জন্য ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১০ টন করে এবং অপর ৩টি উপজেলায় ৫টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
×