ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোলন পরীক্ষায় রোবট ক্যাপসুল

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১৯ জুলাই ২০১৯

কোলন পরীক্ষায় রোবট ক্যাপসুল

কোলন বা মলাশয়ের ভেতর একটি ক্ষুদে রোবটিক ক্যাপসুল গিয়ে মাইক্রো-আলট্রাসাউন্ড ছবি নেবে। তা থেকে কোলনের অবস্থা পরীক্ষা করা যাবে। রোগের আগাম লক্ষণ টের পাওয়া যাবে। এমন এক ব্যবস্থা যে কারিগরি দিক দিয়ে সম্ভব প্রকৌশলীরা তা ব্যবহারিকভাবে দেখিয়েছেন, তাদের উদ্ভাবিত সোনোপিল নামে ক্যাপসুল আকৃতির এই ডিভাইসটি একদিন এনডোস্কোপির বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে পারে। বলাবাহুল্য এন্ডোসকপিক পরীক্ষা একটি কষ্টকর পরীক্ষা। রোবট ক্যাপসুল সেই কষ্টের হাত থেকে রোগীদের বাঁচিয়ে দেবে। সোনোপিল নামক রোবট ক্যাপসুলটি প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের এক দশকের গবেষণার ফসল। এর সম্ভাব্যতা পরীক্ষার ফলাফল সায়েন্স রোবটিক্স সাময়িকীতে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। কনসোর্টিয়াম একটি কৌশল উদ্ভাবন করেছে, যাকে বলা হয় ইন্টেলিজেন্ট ম্যাগনেটিক ম্যানিপুলেশন। চুম্বক একে অপরকে আকর্ষণ করে ও বিকর্ষণও করে এই নীতির ভিত্তিতে কৌশলটি উদ্ভাবিত। রোগীর শরীরের ওপর বুলিয়ে দেয়া একটি রোবটিক বাহুতে বেশ কিছু চুম্বক থাকে। মলাশয়ের ভেতর ঢুকানো ক্যাপসুলের মধ্যকার একটি চুম্বকের সঙ্গে রোবটিক বাহুর চুম্বকগুলোর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয় এবং এর মাধ্যমে রোবটিক বাহু কোলন বা মলাশয়ের মধ্য দিয়ে ক্যাপসুলটি আলতোভাবে এদিকে ওদিকে চালিত করতে পারে। চৌম্বকীয় শক্তি শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং তা মানবদেহের টিস্যুর মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। এর ফলে রোবটিক বাহু ও ক্যাপসুলের মধ্যে কোন রকম ভৌত সংযোগের প্রয়োজন পড়ে না। সেরা মানের মাইক্রো-আলট্রাসাউন্ড ছবি পাওয়ার জন্য মসৃণ ক্যাপসুলটি খাতে নাড়িভুঁড়ির দেয়ালের গায়ে সঠিকভাবে বসতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আছে একটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবস্থা। সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় আরও দেখানো হয়েছে যে ক্যাপসুলটি স্থানচ্যুত হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার সাহায্যে সেটিকে কাক্সিক্ষত জায়গায় সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যারা চালিয়ে ছিলেন তাদের অন্যতম লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাইটো ভালদাসত্রি বলেন, ডাক্তাররা পরিপাকতন্ত্রের পরীক্ষা নিরীক্ষা যেভাবে চালান প্রযুক্তি মাধ্যমে সেই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আশার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, আগের সমীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে যে, মাইক্রো আলট্রাসাউন্ড দিয়ে অতি উন্নতমানের ছবি ধারণ করা এবং নাড়িভুঁড়ির উপরিভাগের স্তরগুলোতে ছোটখাটো আকারের ক্ষত ঠাওর করতে পারা সম্ভব। এ থেকে রোগের আগাম লক্ষণ সম্পর্কে মূল্যবান তথা পাওয়া যেতে পারে। অধ্যাপক ভালদাসত্রি বলেন, এই সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে মানবদেহের গভীরে নির্দিষ্ট জায়গার ছবি তোলার কাজ সম্পাদনে মাইক্রো-আলট্রাসাউন্ড ক্যাপসুলকে চালিত করার একটা কার্যকর কৌশল হলো চৌম্বকীয় শক্তিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগানো। এর দ্বারা যে কোন সময় সোনোপিলকে নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপন করা এবং ডায়াগনস্টিক স্ক্যানিংয়ের কাজ করতে বাইরের চালক ম্যাগনেটকে প্রয়োজনমতো নিয়ন্ত্রণ করা, আবার সেই সঙ্গে উচ্চ মানের আলট্রাসাউন্ড সিগন্যাল বজায় রাখাও সম্ভব। গবেষক দলের প্রধান গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যান্ডি কোচরান বলেন, এই সম্ভাব্যতা পরীক্ষার ফলাফলে আমরা সত্যিই উদ্দীপ্ত। এন্ডোস্কোপির চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে রোগীর জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর হয় এমন সুনির্দিষ্ট ও ব্যয় সাশ্রয়ী চিকিৎসা দেয়া আগের যে কোন সময়ের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজ আমরা সেই অবস্থার এক ধাপ কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আশা করা যায় যে অদূর ভবিষ্যতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে সকল রোগীর জন্য সোনোপিলের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এতে করে গুরুতর রোগব্যাধি আগাম স্তরে কার্যকরভাবে ধরতে পারা এবং প্রত্যেকের পরিপাকতন্ত্রের অবস্থার ওপর নজরদারি করা সম্ভব হবে। সোনোপিল হলো ছোট অবকারের একটি ক্যাপসুল, যার ব্যাস ২১ মে মিটার ও দৈর্ঘ্য ৩৯ সেমি। প্রকৌশলীরা বলেছেন তারা এটাকেও আরও ছোট আকারে বানাতে পারবেন। ক্যাপসুলটিতে রয়েছে একটি মাইক্রো আলট্রাসাউন্ড ট্রান্সভিউসার, একটি এলইডি লাইট চুম্বক। একটা অতি ছোট নমনীয় তার ক্যাপসুলের সঙ্গে যুক্ত। ক্যাপসুলটি মলদ্বার দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করবে এবং পরীক্ষা কক্ষে একটি কম্পিউটারে আলট্রাসাউন্ড ইমেজ পাঠাবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে পরিপাকতন্ত্রের রোগে সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৮০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে যার মধ্যে ক্যান্সারও আছে। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×