ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিপিপির অধীনে বাস্তবায়িত হবে;###;শুধু যানজট নিরসন নয়, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঈর্ষণীয় সাফল্য আসবে ;###; ২০২২ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের টার্গেট

বদলে যাবে ঢাকা ॥ চার মেগা প্রকল্পে ঘটবে যুগান্তকারী বিপ্লব

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ১৯ জুলাই ২০১৯

বদলে যাবে ঢাকা ॥ চার মেগা  প্রকল্পে ঘটবে যুগান্তকারী বিপ্লব

এম শাহজাহান ॥ চারটি মেগা প্রকল্পে বদলে যাবে রাজধানী ঢাকার চিত্র। শুধু যানজট নিরসন নয়, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চার প্রকল্পের সঙ্গে মেট্রোরেল যুক্ত হলে ঢাকার যানজট সমস্যা নিরসন হবে। নষ্ট হবে না মানুষের কর্মঘণ্টা। দেশের সেবা ও ভৌত অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, শান্তিনগর থেকে মাওয়া সড়ক পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা চতুর্থ সেতুসহ ফ্লাইওভার ও ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস সড়ক। পিপিপির অধীনে চার মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফাইন্যান্সিং (ভিজিএফ) বরাদ্দের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি বাজেটেই বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) গতি বাড়াতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জি টু জি বা সরকার টু সরকার চুক্তির ভিত্তিতে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে। চারটি প্রকল্পের ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফাইন্যান্সিং (ভিজিএফ) বরাদ্দের অনুমোদন দেয়ায় বিদেশী বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ (ফরিদ) জনকণ্ঠকে বলেন, পিপিপিতে শতাধিক প্রকল্প রয়েছে। সব প্রকল্পে সরকারী বিনিয়োগ হয় না। জনস্বার্থে কিংবা সরাসরি এদেশের প্রতিটি মানুষ উপকৃত হবে এমন সব প্রকল্পে সরকার ভিজিএফ বরাদ্দ দেয় যাতে বিদেশী উদ্যোক্তা ও সরকার বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়ে থাকে। তিনি বলেন, সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েসহ এ পর্যন্ত চারটি প্রকল্পে অর্থায়ন বা ভিজিএফ বরাদ্দ দেয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ঢাকার অসহনীয় যানজট আর থাকবে না। তবে এসব প্রকল্পে কি পরিমাণ সরকারী ভিজিএফ প্রয়োজন হবে তা নির্ধারণ করবে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা। জানা গেছে, পিপিপির গতি বাড়াতে সরকারী আর্থিক বরাদ্দের প্রক্রিয়া সহজের জন্য রুলস ফর ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফর পিপিপি প্রজেক্ট-২০১৮ এবং রুলস ফর পিপিপি টেকনিক্যাল এ্যাসিসট্যান্স ফাইনান্সিং-২০১৮ জারি করা হয়েছে। জি টু জি বা সরকার টু সরকার চুক্তির ভিত্তিতে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে চলতি বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অবকাঠামো নির্মাণে সরকারী অর্থায়নের বিকল্প হিসেবে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উৎসাহ প্রদান করা হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পিপিপি বাড়াতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে গত অর্থবছরের চেয়ে ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে পিপিপি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ ফান্ডে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল দুই হাজার কোটি টাকা। চার প্রকল্প ছাড়াও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে মেট্রোরেল, গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি, মাওয়া পদ্মা সেতু পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে, আশুলিয়া পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে। এসব প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে। এর বাইরে চারটি প্রকল্পের মধ্যে ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের কাজও অনেকটা এগিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে ॥ ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে চার লেন মহাসড়কের পর এবার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পিপিপি ভিত্তিতে দেশের দীর্ঘতম এই টোল সড়ক নির্মাণে বিনিয়োগকারী খুঁজছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইতোমধ্যে রিকোয়েস্ট অব ইন্টারেস্ট (আরওআই) আহ্বান করেছে মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নক্সার কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিপিপি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। চালু করার প্রাথমিক লক্ষ্য ২০২২ সাল। এ এক্সপ্রেওয়ে দিয়ে সড়কপথে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াত সম্ভব হবে। ঢাকা বাইপাস সড়ক ॥ নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে গাজীপুরের কড্ডা পর্যন্ত ঢাকা বাইপাস এখন এক্সপ্রেস সড়ক হিসেবে রূপান্তর হচ্ছে। এটি হবে ঢাকা-মাওয়ার পর দেশের দ্বিতীয় এক্সপ্রেস সড়ক। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে তিনটি কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করবে চার লেনের এই এক্সপ্রেস সড়ক। ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে কোম্পানি তিনটি। এ সড়ক নির্মাণ হলে মদনপুর থেকে কড্ডা পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। এই প্রকল্পের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদফতর চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন করে চীনের এসআরবিজি এবং বাংলাদেশী ইউডিসি ও এসইএলের সঙ্গে। এ প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে। এ প্রকল্পে সরকারের অংশগ্রহণ হচ্ছে ২৩০ কোটি টাকা। যা ২৫ বছরে পরিশোধ করবে সরকার। শান্তিনগর-মাওয়া ফ্লাইওভার ॥ আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর শান্তিনগর থেকে মাওয়া রোড (ঝিলমিল) পর্যন্ত প্রস্তাবিত ফ্লাইওভারটি বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। শীঘ্রই পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য তিনটি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান বরাবর আরএফপি জারি করা হবে। ২০১৩ সালে মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের জুন মাসে প্রকল্পের অনুকূলে ৫৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফিন্যান্সিং প্রস্তাব অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ॥ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষে আগামী বছর আংশিকভাবে খুলে দেয়া হবে। গত ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছিল। ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি শাহজালাল- আন্তর্জাতিক-বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে মিলিত হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হলেই যান চলাচলের জন্য তা আংশিকভাবে খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জানা গেছে, এ প্রকল্পের প্রথম ধাপ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত, দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত আগামী বছরের জুলাইয়ে এবং তৃতীয় বা শেষ ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সম্পন্ন হবে।
×