ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে ॥ মোসাদ্দেক

প্রকাশিত: ১১:২৯, ১৯ জুলাই ২০১৯

 শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে ॥ মোসাদ্দেক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ শেষ মুহূর্তে তার অন্তর্ভুক্তি দারুণ সুফল বয়ে এনেছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হার না মানা ৫২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন। সাত নম্বরে নেমে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের এমন অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়েই প্রথমবারের মতো কোন শিরোপা জিতে বাংলাদেশ দল। সর্বশেষ প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ থেকেই তিনি হার্ডহিটিংয়ে মনোযোগী হয়েছেন। সে জন্যই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তার এমন ভয়ানক রূপ দেখা গেছে। এখনও হার্ডহিটার হিসেবে নিজের সামর্থ্য বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন মোসাদ্দেক। একই সঙ্গে তিনি ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাট চালিয়ে দলের জন্য অবদান রাখতে চান। বিশ্বকাপে তেমন সুযোগ না আসলেও আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে সুযোগ আসলে দারুণ কিছু করতে উন্মুখ হয়ে আছেন মোসাদ্দেক। প্রত্যাশা মাফিক ফল নিয়ে ফিরতে না পারলেও বাংলাদেশ দলের সবাই এখন বিশ্বকাপ স্মৃতি ভুলে শ্রীলঙ্কা সফরে ভাল করতে মনোযোগী বলেও বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন তিনি। এ সিরিজে অভিজ্ঞতার জন্য এবং ব্যাটিং-বোলিং গভীরতার দিক থেকে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছেন মোসাদ্দেক। আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে মোসাদ্দেককে মূলত দলে টানা হয়েছিল ৭ নম্বর পজিশনে সাব্বির রহমান রুম্মানের ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে। তবে সাব্বির সুবিধা করতে পারেননি আর ওই সিরিজের ফাইনালে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান ইনজুরির কারণে খেলতে না পারায় সুযোগ পেয়ে যান। সেদিনও সাব্বির ছিলেন, সাকিবের অনুপস্থিতিতে ৩ নম্বরে নেমে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ হার্ডহিটার প্রত্যাশা পূরণ না করতে পারলেও মোসাদ্দেক ৭ নম্বরে নেমে অভাবনীয় পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন। তার টর্নেডো ইনিংসে অবিশ্বাস্য এক টার্গেট পেরিয়ে শিরোপা জয় করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে তাই সাব্বিরের পরিবর্তে মোসাদ্দেকই একাদশে প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠেন। ৭ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও ব্যাটিং করার জন্য যথেষ্ট সময় পাননি বলে আহামরি কোন ইনিংস বের হয়নি তার উইলো থেকে। এবার শ্রীলঙ্কা সফরে আরেকবার তার কাঁধে দায়িত্ব আসবে, ৭ নম্বরেই হয়তো খেলতে হবে তাকে। সাকিব ও লিটন দাসের মতো দুই নিয়মিত সদস্য লঙ্কা সফরে না থাকায় হয়তো তার ওপর চাপটা পড়বে এবার। এ বিষয়ে মোসাদ্দেক বলেন, ‘আসলে পুরো বিশ্বকাপে বা পুরো আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে শুরু করে যে জায়গাতে ব্যাটিং করেছি আমার মনে হয় শ্রীলঙ্কাতেও সেখানে ব্যাটিং করতে হবে। টিম কম্বিনেশন বলেন বা যেটাই বলেন মানে ওখানটাতেই মনে হয় আমি সেট। এর বাইরে কিছু চিন্তা করছি না আসলে। দেখুন সাকিব ভাই নেই, লিটনও নেই দলে। তাদের জায়গায় যারা বদলি হিসেবে এসেছে আপনি হিসেব করে দেখেন তারাও কিন্তু পারফর্মার। ওরা ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করছে। এছাড়া আপনি যদি আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলেন তাহলে বুঝবেন কি করে যে ভাল করছে তারা। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেই আপনি বুঝতে পারবেন।’ সাকিব-লিটন না থাকলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছেন মোসাদ্দেক। কারণ বদলি হিসেবে যারা এসেছে তারাও ভাল ফর্মে আছে। আর বিশ্বকাপে দলের পারফর্মেন্স নিয়েও এই মুহূর্তে ভাবার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন তিনি। যদিও বিশ্বকাপের ফলাফল বলছে বাংলাদেশের চেয়ে ভাল অবস্থানে থেকেই শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু মোসাদ্দেক বলেন, ‘আমি মনে করি দল হিসেবে আমরা বেশ ব্যালেন্সড। আপনারা দেখেন যে বোলিং এবং ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের দিক থেকে আমরা অনেক ভাল অবস্থানে আছি। বর্তমানে বিশ্বে যে দলগুলো আছে তাদের চেয়ে আমরা অভিজ্ঞতার দিক থেকে ভাল অবস্থানে আছি। আমার মতে এদিক থেকে আমরা অনেক এগিয়ে। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে আসলে আমরা বিশ্বকাপ নিয়ে খুব বেশি ফোকাস করছিলাম। এখন যেহেতু বিশ্বকাপ শেষ আমি মনে করি না যে এটা নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত। যেটি শেষ হয়ে গেছে সেটি হাজার কথা বললেও ফিরে আসবে না। আমি মনে করি সামনে আমাদের যে সিরিজগুলো আছে সেগুলোর প্রতি ফোকাস করাই ভাল হবে। কারণ জীবনে একটি বিশ্বকাপই সবকিছু না। এমন না যে বিশ্বকাপ শেষ মানে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমাদের দিনশেষে ক্রিকেটই খেলতে হবে। বিজয় এখন খুব ভাল ব্যাটিং করছে। সর্বশেষ একটা সেঞ্চুরি করেছে। তাইজুল ভাই প্রতিদিনই উইকেট নিচ্ছেন। তারা যখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে তখন আসলে বুঝতে পারব যে কি অবস্থায় আছে।’ মোসাদ্দেকের সেই ইনিংসটির পর তার ওপর দলের নির্ভরতা বেড়েছে। তার ব্যাট থেকে দারুণ কিছু চায় দল, পাশাপাশি ভাল অফস্পিন করতে সক্ষম হওয়ায় বোলিংয়েও মোসাদ্দেকের কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা থাকে। তবে মোসাদ্দেক দাবি করলেন তিনি মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার, ‘আমি একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার, এটাই আমার প্রধান ভূমিকা। তাই এখানে আমি এসে বলতে পারব না যে আমি বোলিং অলরাউন্ডার। বোলিং আমার দ্বিতীয় অপশন। আর ব্যাটিং আমার প্রথম অপশন। তাই বলব যে আমি ব্যাটিং অলরাউন্ডার।’ ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে শ্রীলঙ্কাতেও ভাল কিছু করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন মোসাদ্দেক। বিশেষ করে স্ট্রাইকরেট বাড়ানোর দিকে মনোযোগ তার। সেটি শুরু করেছিলেন সর্বশেষ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ থেকেই। মোসাদ্দেক বলেন, ‘আমি আসলে বিশ্বকাপের আগে থেকে শুরু করে প্রিমিয়ার লীগ থেকেই স্ট্রাইক রেটের প্রতি ফোকাস করছিলাম। আমি যখন ব্যাটিং করতে যাব তখন হয়তো একই পরিস্থিতি থাকবে। হয়তো খারাপ পরিস্থিতি থাকলে আমাকে ভাল করে দলকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। তাই এটা নিয়ে অবশ্যই কাজ করছি যে ভাল পরিস্থিতি পেলে কি করা লাগবে এবং খারাপ পরিস্থিতিতে দলকে কিভাবে বাঁচাতে হবে, এই দুটি ব্যাপার নিয়ে কাজ করছি। তবে আপনি যদি স্ট্রাইক রেটের কথা চিন্তা করেন তাহলে এটি বেশ কঠিন। কারণ সাত নম্বরে যারা ব্যাটিং করে তারা আসলে অনেক বেশি চাপে থাকে। অনেক সময় পরিস্থিতি এমন হয় যে ১৫ ওভার থাকে। সেই সময় দলকে একটু সাপোর্ট করা লাগে আবার শেষে গিয়ে মারাও লাগে। এখানে অনেকগুলো ভূমিকা থাকে। সেভাবেই চিন্তা করছি যে যখন সুযোগ আসবে তখন সেটা কাজে লাগানোর।’
×