ডাক
আইউব সৈয়দ
যেভাবে সৃজনশীল রিমঝিম পরামর্শ দেয়
সেভাবেই এসো।
জলরঙের নিজস্ব ফর্মে,
বর্ষারই টেক্সচার তুমি;
মনোজগতের পরিভাষা—
এমনিতে নিরীক্ষণে তদারকি করে।
কিছু মুগ্ধকর বৃষ্টির খ্যাতি—
আনন্দঘন অবগাহনে পরিশ্রমী;
ব্যাকুলতা নিয়ে —
প্রিয় সমাহারে হাত বাড়িয়ে দেয়
সজল উদযাপন।
আমিও সক্রিয় -
সজীব মেঘের
মহাশ্লোকে।
জলের পর্যবেক্ষণে ছন্দভরা বর্ষার রাজিনামা আহা!
রচিত হয়েছে অই।
যেহেতু ভুল বোঝার ঋতু নয়,
তাই এসো
ব্যাখ্যাতীত উপমা গড়ি পরিবর্তনের স্বচ্ছ ডাকে।
*
সামনের শীতে মানুষ রৌদ্র হবে
মৃধা আলাউদ্দিন
মানুষ আর মানুষ থাকবে না
সামনের শীতে সে রৌদ্র হবে
ঝরনা হবে পৃথিবীর অর্ধেক।
একদিন খাটাসও খর্ব হবে
থাকবে না খোয়া ওঠা খাল,
সরে যাবে ঘিচিমিছি, ঘিঞ্জি প্রতারক ঘাস
কাক, কাকের কর্কশ আওয়াজ
পুড়ে যাবে বেহায়া বাতাস, জবড়জং জীবাশ্ম
নষ্ট হওয়া নারী, ছেঁড়া নাও
নৌফেল
হে নদী! অশ্বারোহী আপেল
গাছের রৌদ্র ছেড়ে দেবো
এবঙ অভিন্ন ভ্রণ, খুলে যাবে খাল
খালের খোল,
খৈয়াম
যেনো সামনের শীতে, শীত মানুষ রৌদ্র হয়
ঝরনা হয় পৃথিবীর অর্ধেক।
*
ঘোলা জলের উৎসবে ...
আল-মাসুদ হক মিঠুল
লেফাফাদুরস্ত কায়া নিয়ে,
উপহাস করে উড়ন্ত পাখির ঝাঁক!
আড়ালে আবডালে ঘোলা জলের উৎসবে-
ঠিকই মাতে দেশী হাঁস।
শুধু বন্দনাতে মজলে,
নিরীহ কাক হয়ে যায় উদ্ভট শঙ্খচিল।
উন্মুক্ত হয়ে আজ না হয় আকাশ, ঝরাক কিছু জল।
শুধু কাক ঝরালেই কেন অশুদ্ধ হয়ে যাবে সমাজ?
পুঁটিমাছের মানবন্ধনে উঁচিয়ে ধরি ন্যায়বাদী প্ল্যাকার্ড।
শুধুশুধু নষ্ট শব্দে কষ্ট আঁকি দুইবেলা।
আমি মানুষ নই, তোমাদের সভ্য সমাজে নেহায়েত ভ্রষ্ট নটরাজ।
*
সারসংক্ষেপ
কাকলী চৌধুরী
অতঃপর, পুরো একটি দিনের
ঘটনাবাহুল্যের সার-সংক্ষেপ
একটি সযতনে চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস
স্বস্তির, অথবা শাস্তির
হেঁটে চলা পথ, বয়ে চলা ভার
অনিশ্চিত সময় নদীশিকস্তির
সাকুল্য হিসাবে, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন
মূলত মূলো-নাকে ধোপার বোকা গাধা,
কিংবা কলুর চোখ বাঁধা বলদ
(বৈয়াকরণিকের কলমখোঁচায়
এক কথায় প্রকাশ)
জীবন মানেই দিকশূন্য পুর-হাল-বৈঠাহীন
ভেসে চলার সনদ।
*
বিষণ্ণতার অবরোধ
আয়েশা মুন্নী
প্রেমহীন আলিঙ্গন হতে অনুভূতির বহিরঙ্গে
জৈবিক ক্ষুধার অনলে পোড়ে
হৃষ্টপুষ্ট কষ্টের শিখা অনির্বাণ।
মগজ কোষের শব্দবীজে বিষণ্ণতার অবরোধ
নিদারুণ সংক্রমণ ঘটে- শ্রেষ্ঠ ভ্রুণে।
গ্লানি ভরা মিথ্যে অপবাদে কাঁচঘরে বন্দী
অতৃপ্ত ইচ্ছেদের ভরা যৌবন।
মধ্যরাতে বিরহি ডাহুক নৈঃশব্দে চিৎকার তোলে
কি যে প্ররোচনায় দ্বিখন্ডি বোধের ইন্দ্রিয়।
নিরঙ্কুশ অভিমানে হৃতগৌরব মন আনমনে
মালা গাঁথে অশ্রু ধারাপাতের রেখা মুছে মুছে...
সে এক তীব্র আকাক্সক্ষার পুলসিরাত।
অতঃপর
অনন্ত নক্ষত্রপথে আমার যাত্রা...
দীর্ঘজীবী হোক আমার প্রান্তরের আগুন।
*
গুচ্ছ কবিতা
সুজন হাজারী
সান্ধ্য পার্ক
ইজারের জ্যাবে খুচরা পয়সার শৈশব
হাঁটলে ঝুনঝুনি বাজে ফেরিওয়ালা
হাঁকে কাঠি লজেন্স!
ওটা না কেনার দুঃখে ভরা মন
ক্যাকটাস কাঁটার ঘায়ে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।
নীড়ে ফেরা পাখি সব নেই রব
সান্ধ্য পার্ক বিষাদে মলিন।
মানব ইতিহাস
আপাত জীবন ছোট নয়
জীবনের চেয়ে বড় সে জীবন
সুন্দর মানব ইতিহাসের সমান।
বুকের বাম পকেট
ফসলহীন হৃদয় মাঠে চাষাবাদ পুতেছি
দুঃখের চারাগাছ ফুলে গুঞ্জরিছে মৌমাছি
নির্লোভ সখীর বিনুনিতে রৌদ্দুর খোঁপায়
আঙুলে বিলি কেটে সিঁথি পথে হাঁটি
দুঃখ মাড়িয়ে রয়েছি দাঁড়ায়ে অনন্তকাল
জীবন ছেনেছুনে দুঃখ ভরেছি
বুকের বাম পকেটে।
ফুলেল হাসি
ফুলতো ফোটায় না কেউ নিজে ফোটে
প্রকৃতি হাসে মুখের হাসি ফোটাতে
স্থপতি মুজিব লোকান্তরে
ফোটেনি কারু হাসি সেনার বাংলায়
চার খুঁটির ঘরে দুটো ভেঙ্গেছে সেনাপতি
কার বুকের পাটা ঘর তোলে চেতনায়
দেশপ্রেম ফাঁকা বুলি অর্জন বিসর্জনে
দুর্নীতির জাদু স্পর্শে মুগ্ধ সব শালায়
ফুল ফোটে মুখেও ফুটুক ফুলেল হাসি।
দ্বিতীয় সেতু
হাত ধরো মিনারে যাবো পর্বতারোহী
জলে প্রলম্বিত জলছায়া কাঁপে উড়াল ব্রিজে উন্নয়ন বাজে ঝনঝন নিচে পাতাল রেলযাত্রী
ঢেমনাকে নিয়ে পালায় বসন্তে চতুর কোকিল
বেলজ্জ ছুঁইয়োনা কাউকে
পদ্মা সেতু প্রকল্পে আরিচায় দৃশ্য বদল
দ্বিতীয় সেতু পেরুলে শুনবে
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচ্চকণ্ঠ
উত্তরে সমবেত কার্পাসি তুলা মেঘ ওড়ে
জলহীন নদী চরে কাফনে মোড়া মৃত লাশ
হাজারো কঙ্কালের পাহাড়।
শীর্ষ সংবাদ: