ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

ইভন-রন্ধন ও বুটিক শিল্পের সফল উদ্যোক্তা

প্রকাশিত: ১২:০১, ১৯ জুলাই ২০১৯

ইভন-রন্ধন ও বুটিক শিল্পের সফল উদ্যোক্তা

দ্রুততার সঙ্গে দেশের এগিয়ে চলা সব মানুষের সফল কর্মযোগ এমন কথা অস্বীকার করার পথ নেই আজ। উন্নয়নের নিরন্তর গতি নারী-পরুষ সকলের মিলিত শক্তির এক অনিবার্য ধারা। অর্ধাংশ নারী সমাজকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে পশ্চাদগামী করে দিলে সার্বিক প্রবৃদ্ধি কোনভাবেই দৃশ্যমান হবে না। বাংলাদেশ যেভাবে সফলতার সঙ্গে নিত্যনতুন কর্মপ্রকল্পে বৈশিষ্ট্যময় হয়ে উঠছে তাতে নারীদের অংশীদারিত্ব সবাইকে চমক লাগিয়ে দিচ্ছে। পেশাগত মানোন্নয়নেও নারীদের বৈচিত্র্য কর্মযোগ বর্তমানে তাদের চলার পথকে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে দিচ্ছে। সামান্য পুঁজি, নিজের শৈল্পিক কর্মক্ষমতা এবং সব থেকে প্রয়োজন যে শ্রমশক্তির এ সবকে বিবেচনায় রেখে নির্দিষ্ট পারিবারিক আলয়েও নারীরা তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপকতায় নিরন্তর সম্পৃক্ত হচ্ছে। বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্য এক সময় যে খাদ্য তৈরি পারিবারিক চাহিদা মেটাতে আয়োজন করা হতো সময়ের মিছিলে আজ তা পণ্য হিসেবে বাজারেও পৌঁছে যাচ্ছে। রন্ধন শিল্পে নারীদের সুনিপুণ কর্মদ্যোতনায় সংসার জীবনকে প্রতিদিনের আকাক্সক্ষায় ভরে তুলত সেখানে সমাজ-সংস্কারের প্রত্যাশাও আজ যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট ঘর থেকে সম্প্রসারিত বাইরে তার সময়োপযোগী ভূমিকা রেখে সবাইকে হতবাক করে দিচ্ছে। রান্না-বান্নার মানসম্মত আয়োজন আজও বাইরের জগতেও তার আবেদন মিটিয়ে যাচ্ছে নারীদের সফল অভিগমনে। সুশিক্ষিত নারী উদ্যোক্তারা তাদের অন্যান্য ব্যবসায়িক কর্মপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত করেছে ঘরের তৈরি খাদ্যপণ্য বিক্রি করার এক সাহসিক প্রচেষ্টা। সাদিয়া আফরিন ইভন তেমনই এক পাকা রন্ধন শিল্পী যে কিনা স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে তার অন্যবিধ সফল ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে নিজের হাতে তৈরি করা খাবার অন্য বাড়িতে সরবরাহ করার দায়িত্বও। ইভন ভিকারুন্নেসা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক (বিবিএ) ও স্নাতকত্তোর (এমবিএ) ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করে। তবে অতি বাল্যকাল থেকে রান্নার প্রতি তার একটা বিশেষ ঝোঁক আর আগ্রহ ছিল। বাবা ছিলেন জজ আর মা সফল সুগৃহিণী। সচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়েও ইভন ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখত নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। লেখাপড়ার পর্বটাও সফলভাবে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে। কারণ শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যাকে সবার আগে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। সুতরাং স্বাধীনচেতা ইভন বাবা-মাকে খুশি রেখে নিজের পছন্দের কর্মযোগে সমর্পিত হলো। শুরুটা ১৯৯৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার অবসরে। তবে তারও আগে ‘এস গান শিখি’ অনুষ্ঠানে সেই ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ বেতারে যোগ দেয়া আজও জীবনের স্মরণীয় অধ্যায়। সেখান থেকে পাওয়া জমানো টাকায় ইভন কেনা আজও স্মরণ চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে আছে। ১০ বছরের এক অবোধ বালিকা আত্মশক্তিতে নিজেকে শাণিত করার যে অভাবনীয় প্রত্যয় সেখান থেকেই তার দৃঢ় চলার পথ কখনও থেমে থাকেনি। ঘরে তৈরি করা যায় এমন সব খাবার কেক, সমুচা, রোল দিয়েই তার এই ঘরোয়া ব্যবসার আদি কথা। আবার তেমন খাবার যদি অন্য পরিবারেও সরবরাহ করে সবাইকে আনন্দ দেয়া যায় সেটা তো অর্থের চেয়েও বেশি দামী। প্রতিষ্ঠিত পিতার কন্যা ইভনের অর্থের প্রয়োজন কখনও সেভাবে বিব্রতকর অবস্থায় আসেনি। শুধু আপন ইচ্ছা, সাহসিক প্রত্যয় এবং স্বাবলম্বী হওয়ার অদম্য বাসনা থেকেই ইভনের এমন ধরনের কর্মপ্রবাহ তৈরি করা সেও যেন এক প্রবল আবেগ আর উচ্ছ্বাস। নিজেই অনেক কিছু করতে পারছে এই রকম অভিভূত হওয়ার ব্যাপারটিই আলাদা। শুধুমাত্র রান্না নয়, ব্লকের পোশাক, বেড কভার, টেবিল ক্লথ- এসব হাতে তৈরি শিল্প কর্মও বিক্রি করতে অতি উৎসাছে এগিয়েই গেছে। প্রথমে মূলত নিকটজনেরাই তার প্রস্তুত করা খাদ্য এর প্রসার বাড়তে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনলাইনের ব্যবসায় ইভন আজ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর কাতারে। কাপড় বিক্রির উদ্যোক্তা হিসেবেও তর পুঁজি বিনিয়োগ এবং বাজারজাত করণ তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ইভন নামে তার ঋধপবনড়ড়শ-এ তার ব্যবসার বিচিত্র কর্মযোগের চধমব দেয়া আছে। সেভাবে তার সঙ্গে ক্রেতারা যোগাযোগ করে নেয়। আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে একজন প্রত্যয়ী নারী কিভাবে তার ব্যবসায়িক জগতকে তিল তিল করে গড়ে তোলে সেটা যেমন- বিস্ময়ে একইভাবে মুগ্ধতারও। এমন সফল নারী উদ্যোক্তা অন্য সব নারীর জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করতে পারে। কর্মব্যস্ততার যুগে এখন অনেক পরিবারেই রান্নাবান্নার আয়োজনে সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে বাধ্য হয় হোটেল, রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে অথবা বাসায় নিয়ে আসত। এমন সব সংসারের জন্য ইভনের রান্নাঘরের তৈরি খাবার বিভিন্ন বাসায় সরবরাহ করতে কোন অসুবিধা নেই। পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত এবং ভেজালমুক্ত খাবার তৈরিতে তার যে সততা, একনিষ্ঠতা ও পরিশ্রম তার কোন তুলনা নেই আসলেই। শুধু ইভন নয় এমন অনেক ইভন যে কোন ব্যবস্থায় নিজের শক্তি আর শ্রমকে পুঁজি করে স্বাবলম্বী হতে পারে। তা হলে অবহেলিত, পশ্চাদপদ ও নির্যাতিত নারী সমাজ জোর কদমে নিজেদেরই এগিয়ে নেবে না দেশের সমৃদ্ধিকেও অবারিত করবে।
×