ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ প্রদানকারী শহর!

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১৯ জুলাই ২০১৯

অর্থ প্রদানকারী শহর!

সাধারণত নিজেদের অর্থ ব্যয় করেই আমরা কোথাও বেড়াতে যাই। কিংবা কোন জায়গায় গিয়ে নতুন করে বসবাস শুরু করতে চাইলেও খাদ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান প্রভৃতির খরচ জোগাতে হয় আমাদের নিজেদেরই। কিন্তু অদ্ভুতভাবে পৃথিবীতে এমন কিছু শহরও আছে, যেসব শহরে গিয়ে বসবাস করলে উল্টো ব্যক্তিকেই দেয়া হয় খাদ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সকল প্রকার আর্থিক সুযোগ-সুবিধা। এমনই কিছু শহর নিয়ে লিখেছেন- মুনতাসির সিয়াম নিউ হ্যাভেন, কানেক্টিকাট যুক্তরাষ্ট্রের সর্বপ্রথম পরিকল্পিত শহরের নাম নিউ হ্যাভেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ইয়েল ইউনিভার্সিটির অবস্থান এই শহরে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও এ শহর অতি মনোরম। কিন্তু সম্প্রতি শহরটির জনসংখ্যা কমতে শুরু“করেছে। এখানকার মানুষ বিভিন্ন কারণে পাড়ি জমাচ্ছেন অন্যান্য শহরগুলোতে। কিন্তু এভাবে জনসংখ্যা কমতে শুরু“করলে তো চলবে না। তাই এই সমস্যার একটি অভিনব সমাধান খুঁজে বের করেছেন এখানকার স্থানীয় সরকার। শুরু করেছেন একটি নতুন প্রকল্প যার নাম ‘দ্য রি-নিউ হ্যাভেন প্রোগ্রাম।’ কোন ব্যক্তি যদি তাদের এই শহরে কাজের জন্য বসবাস করতে আসেন, তবে তাকে ৮০ হাজার ডলার পর্যন্ত প্রদান করা হবে। যার মধ্যে ১০ হাজার ডলার সুদমুক্ত লোন দেয়া হবে একটি বাড়ি কেনার জন্য। সেইসঙ্গে ব্যক্তি যদি সেই বাড়িটি উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আপগ্রেড করতে চান, তবে পাবেন আরও ৩০ হাজার ডলার লোনও পেয়ে যাবেন খুব সহজেই। আবার, বসবাস করতে আসা ব্যক্তি যদি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন এবং তার অতীতের প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল ও ব্যক্তি চরিত্র ভাল হয়ে থাকে, তবে কোন প্রকার টিউশন ফি ছাড়াই ইন-স্টেট কলেজে পড়ালেখার সুযোগও দেয়া হবে। আবার, পাঁচ বছর এই শহরে বসবাস করলে বাড়ি কেনা বাবদ ১০ হাজার ডলারের লোনও তাকে আর পরিশোধ করতে হবে না। আর পাঁচ বছরের জায়গায় দশ বছর এই শহরে কাটিয়ে দিলে, বাড়ি আধুনিকায়ন বাবদ নেয়া ৩০ হাজার ডলার লোনও মাফ করে দেয়া হবে। এ্যালবিনেন, সুইজারল্যান্ড সুইজারল্যান্ডের ঘন সবুজ পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই অঞ্চলটি। যার স্থায়ী বাসিন্দা মাত্র ২৪০ জনের মতো। অনেকের বাড়ি থাকলেও তারা অন্য জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং মাঝেমধ্যে ছুটি কাটাতে আসেন এখানে। বেশ কিছুদিন যাবতই এখানকার স্থায়ী বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও পাড়ি জমাচ্ছে দেখে স্থানীয় প্রশাসন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যদি কেউ এসে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চায়, তবে তাকে আর্থিক সহয়তা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৫ হাজার ডলার এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০ হাজার ডলার করে দেয়া হবে। তবে শর্ত হলো- ব্যক্তির বয়স ৪৫ বছরের কম হতে হবে এবং কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে এ্যালবিনেনে। ডেট্রয়েট, মিশিগান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের সর্ববৃহৎ ও বেশ প্রাচীন শহর ডেট্রয়েট। ২০০৮ সালের এক জরিপে জানা যায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম জনবহুল শহর। যা ১৯৫০ সালে ছিল চতুর্থতম। পরবর্তীতে শহরের অধিবাসীরা অন্যান্য শহরে পাড়ি জমাতে শুরু“করে এবং এর জনসংখ্যা ক্রমেই কমতেই থাকে। স্থানীয় সরকার এ শহরকে আরও বেশি উন্নত করার জন্য নতুন মানুষের প্রয়োজন বলে মনে করেন। তাই প্রশাসন নতুন বাসিন্দাদের জন্য দিচ্ছে আর্থিক সহযোগিতা। এ শহরে এসে বাড়ি বানিয়ে থাকতে চাইলে ২০ হাজার ডলার পাওয়া যাবে। এমনকি বাড়ি ভাড়া নিয়েও যদি কেউ এ শহরে এসে বসবাস শুরু করে, তাকেও অর্থ প্রদান করা হবে। প্রথম বছরের জন্য বাড়িভাড়া বাবদ সে পাবে ২৫০০ ডলার এবং পরের বছর থেকে তা হয় ১০০০ ডলার। টালসা, ওকলাহোমা চ্যান্ডলারের মতে, টালসা শহরটি হচ্ছে- ওকলাহোমার প্যারিস। শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, পর্যটন প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বেশ উন্নত হয়েছে এই শহরটি। তবু এখনও কেমন যেন শতভাগ উন্নত হয়ে উঠতে পারেনি টালসা এমনটাই মতামত স্থানীয় প্রশাসনের। কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্যময় মানুষের অনুপস্থিতিকেই দায়ী করছেন তারা। কাজেই কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্যময় মানুষের উপস্থিতি ঘটানোর লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন হাতে নিয়েছেন অসাধারণ একটি প্রকল্প। যার নাম ‘টালসা রিমোট’। বাইরের কোন শহর থেকে এসে যদি কোন ব্যক্তি এই শহরে কাজ করতে আগ্রহী হয়, তবে তাকে ১০ হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করা হবে। পাশাপাশি একটি কো-ওয়ার্কিং স্পেসের মেম্বারশিপও দেয়া হবে। যেটি পেতে চাইলে সেখানকার মানুষের প্রায় ১৮০০ ডলার খরচ করতে হয়। সেইসঙ্গে থাকার জন্য একটি আধুনিক এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে ৩০০ ডলারের ডিসকাউন্টও রয়েছে। তবে শর্ত একটাই, কমপক্ষে এক বছরের জন্য থাকতে হবে এই শহরে। হারমোনি, মিনেসোটা মধ্য পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট একটি শহরের নাম হারমোনি। মাত্র এক হাজারের মতো জনসংখ্যা এই শহরে। তাই এখানকার প্রশাসনও নতুন বাসিন্দাদের এখানে এসে বসবাস করার আগ্রহ বাড়াতে আর্থিক সহযোগিতামূলক প্রকল্প শুরু“করেছে। এক্ষেত্রে তাদের স্লোগান হচ্ছে, ‘হারমোনি ভ্রমণের জন্য ভাল একটি জায়গা, কিন্তু থাকার জন্য আরও ভাল। এ শহরে এসে যারা থাকতে আগ্রহী হবে, তাদের ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত অনুদান দেবে প্রশাসন। সবচেয়ে মজার যে বিষয়টি সেটি হলো- হারমোনিতে বসবাস করে অর্থপ্রাপ্তি করার ক্ষেত্রে অন্যান্য শহরগুলোর মতো কোন প্রকার শর্তই পূরণ করতে হবে না ব্যক্তিকে। বয়স, কর্মসংস্থান, আয় এমনকি নির্দিষ্ট কতদিন পর্যন্ত এ শহরে বসবাস করা বাধ্যতামূলক এসব ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ নেই প্রশাসনের। সমগ্র ভারমন্ট রাজ্য কনকনে ঠ‍ান্ডায় মোড়ানো একটি শহর ভারমন্ট। ম্যাপল সিরাপ, পনির ও টিনের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে হয় এখানকার অধিবাসীদের। স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাপন একটু কষ্টকর হওয়ায়, এখানকার জনসংখ্যাও কম। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এ শহরে এসে বসবাস করার প্রতি নতুন বাসিন্দাদের আকৃষ্ট করতে এখানকার গবর্নর নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যারা এ শহরে এসে থাকতে আগ্রহী হবেন, তাদের এককালীন ১০ হাজার ডলার দেয়া হবে। পাশাপাশি পুরনো শহর থেকে ভারমন্টে শিফট করতে যাবতীয় যত খরচ, সেটাও বহন করবে প্রশাসনই। এমনকি একটি কো-ওয়ার্কিং মেম্বারশিপের স্পেসও দেয়া হবে তাদের। ২০১৯ সালে মোট ১০০ জন ব্যক্তিকে এই সুযোগ প্রদান করবে ভারমন্ট প্রশাসন এবং এরপর থেকে প্রতিবছর ২০ জন করে এই সুযোগের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। হ্যামিল্টন, ওহিও অন্যান্য শহরগুলোর চাইতে হ্যামিল্টনের অর্থ প্রদানের অফারটি একটু ভিন্নধর্মী। এক জরিপের মাধ্যমে উঠে এসেছে যে, এখানকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ কলেজে পড়ালেখা করেছে। তাই এ শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা এবং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এখানকার সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটির নাম হচ্ছে ‘দ্য ট্যালেন্ট এ্যাট্রাকশন প্রোগ্রাম স্কলারশিপ।’ যে প্রকল্পের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি যদি এ শহরের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান, প্রকৌশন, কলা, গণিত, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে চান, তবে সরকার তাকে শিক্ষা ঋণ হিসেবে ৫০০০ ডলার পর্যন্ত প্রদান করবে। যা পরবর্তীতে প্রতিমাসে ২০০ ডলার করে মোট ২৫টি কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ড বাল্টিমোর শহরের প্রশাসনও তাদের শহরে নতুন করে বসতি গড়ে তোলার জন্য আগ্রহী করতে শুরু করেছে ‘বাল্টিমোর স্কিম’ নামের একটি প্রকল্পের মধ্যদিয়ে। যদি কোন ব্যক্তি পাঁচ বছরের জন্য এই শহরে এসে বসবাস করতে চায়, তবে তাকে অফেরতযোগ্য লোন হিসেবে দেয়া হবে ৫০০০ ডলার। যা দিয়ে সে শহরের যে কোন একটি পছন্দমতো জায়গায় বাড়ি কেনার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে, পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদে যদি কেউ থাকতে চায়, তবে তার জন্য রয়েছে ‘ভ্যাকেন্ট টু ভ্যালু বুস্টার’ নামের আরেকটি প্রকল্প। যেখানে ব্যক্তিকে অফেরতযোগ্য চুক্তিতে ১০ হাজার ডলার লোন দেয়া হবে। আর ব্যক্তি সেই লোনের টাকা দিয়ে শহরের পূর্ব ব্যবহৃত সংস্কার কাজ প্রয়োজনে এমন একটি প্রোপার্টি কিনতে পারবেন এবং সেইসঙ্গে নিজের মতো সংস্কার করে প্রোপার্টিটির উন্নতিকরণও করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রশাসন যে দিকটি ভেবে এই প্রকল্পটি শুরু করেছেন তা হলোÑ একইসঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসকারী বাড়ানো এবং সংস্কার কাজ প্রয়োজন এমন প্রোপার্টিগুলোরও উন্নতিকরণ। ক্যান্ডেলা, ইতালি ক্যান্ডেলা ইতালির ছোট্ট একটি শহর। নব্বইয়ের দশকে এ শহরে প্রায় ৪ হাজারের মতো জনসংখ্যা ছিল। কিন্তু ক্রামগত এ শহরের জনসংখ্যা কমেই চলেছে। যা একপর্যায়ে কমে দাঁড়ায়২৭ হাজারে। ২০১৭ সালে এ শহরের প্রতি নতুন বাসিন্দাদের আকৃষ্ট করতে এখানকার মেয়র একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ক্যান্ডেলায় এসে বসবাস করলে তাকে দেয়া হবে ২ হাজার ইউরো পর্যন্ত অর্থ সহয়তা। এক্ষেত্রে ব্যক্তি যদি একা হয় তবে সে পাবে ৪০০ ইউরো। আর যদি সঙ্গীকে নিয়ে গিয়ে একইসঙ্গে বসবাস স্থাপন করেন, সেক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে দেয়া হবে ১২০০ ইউরো। তবে পুরো পরিবারই যদি গিয়ে বসবাস করতে চায় এই শহরে, সেক্ষেত্রে পরিবারের আকারের ওপর ভিত্তি করে জনপ্রতি ১৩০০-২০০০ ইউরো পর্যন্ত আর্থিক সহয়তা দেয়া হবে তাদের। সাচকাচুয়ান, কানাডা হ্যামিল্টনের মতো সাচকাচুয়ানের প্রকল্পটিও শিক্ষাভিত্তিক। যার নাম ‘গ্র্যাজুয়েশন রিটেনশন প্রোগ্রাম’। এই প্রকল্পের অনুদানটি পাওয়ার জন্য প্রথমে আবেদন করতে হয়। আবেদনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তিকে অবশ্যই কোন একটি সরকার অনুমোদিত পোস্ট- সেকেন্ডারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গত সাত বছরের মধ্যে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হবে। এই শর্তটি পূরণ হলেই ব্যক্তিকে অফেরতযোগ্যভাবে দেয়া হবে ৩ থেকে ২০ হাজার ডলার। সূত্র : ইন্টারনেট
×