ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতক রবিন নেশায় আসক্ত ছিল, ছেলেধরার গুজব মিথ্যা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৯ জুলাই ২০১৯

ঘাতক রবিন নেশায় আসক্ত ছিল, ছেলেধরার গুজব মিথ্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা ॥ সজিব (৮) নামের এক শিশুকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যার ঘটনায় জড়িত ঘাতক যুবকের (গণপিটুনিতে নিহত) পরিচয় মিলেছে। তার নাম রবিন মিয়া(৩০)। সে শহরের কাটলী এলাকার এখলাছ মিয়ার ছেলে। রবিন রিক্সা চালাত। সে ড্যান্ডি (জুতার গাম) নেশায় আসক্ত ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে রবিনের স্বজনরা জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ সনাক্ত করে। শুক্রবার সকাল ১১টায় নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে উভয়ের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। পরে লাশ দু’টি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে ওই জোড়া হত্যার ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী শুক্রবার সকাল ১১টায় তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, শিশু সজিব হত্যার ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন হত্যাকান্ড। এর সঙ্গে ‘ছেলেধরা’বা ‘পদ্মাসেতুর গুজব’এর কোনো সম্পর্ক নেই। নিহত সজিবের পিতা রইছ উদ্দিন এবং ঘাতক রবিন দু’জনই রিক্সাচালক। তারা পূর্ব পরিচিত এবং একই এলাকার বাসিন্দা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে মনে হয়েছে, ঘাতক রবিন পুরনো কোনো জেদ বা বিকৃত লালসা চরিতার্থ করার পর শিশুটিকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা মডেল থানায় দু’টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে সজিব হত্যার মামলাটি দায়ের করেন তার বাবা রইছ উদ্দিন। এ মামলায় রবিনসহ (গণপিটুনিতে নিহত) অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করা হয়। অন্যদিকে গণপিটুনিতে রবিন হত্যার মামলা দায়ের করেছেন নেত্রকোনা মডেল থানার এসআই রফিক। এতে অজ্ঞাতসংখ্যক আসামী করা হয়। এসব ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। জানা গেছে, রবিন নামের ওই নেশাগ্রস্ত যুবক গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কাটলী এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলার টয়লেটে শিশু সজিবকে গলা কেটে হত্যা করে। পরে তার বিচ্ছিন্ন মাথা একটি ব্যাগে করে নিয়ে বারহাট্টা রোডের পাশে সুইপার কলোনিতে মদ খেতে যায়। এ সময় তার ব্যাগে রক্ত দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা ব্যাগ দেখতে চাইলে সে দৌড়ে পালাবার চেষ্টা করে। তখন স্থানীয়রা দৌড়ে নিউটাউন এলাকার অনন্তপুকুরের পাড় থেকে তাকে আটক করে। পরে তার ব্যাগের ভেতরে শিশুর কাটা মাথা দেখতে পায়। এরপর উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে সে নিহত হয়। এদিকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে শিশু হত্যা এবং গণপিটুনিতে যুবক নিহত হওয়ার ঘটনাটির কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ অল্প সময়ের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে সারা জেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এর ফলে জেলার বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও হিরণপুর এলাকা থেকে স্থানীয়রা কয়েকজন অপ্রকৃতস্থ পথচারীকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়। কিন্তু এদের ব্যাপারে অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিশ্চিত হয় এরা কেউ ছেলেধরা নয়। এরা নিতান্তই অপ্রকৃতস্থ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়া ও অসত্য তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, অপরিচিত হলেই সন্দেহ করে কাউকে মারপিট করা যাবে না। এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্তে যে কেউ নিজেও অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে যেতে পারে। অপরিচিত কাউকে দেখে সন্দেহ হলে স্থানীয় থানা পুলিশকে অবগত করার অনুরোধ জানান তিনি। প্রেসব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল ইসলাম(প্রশাসন), শাহজাহান মিয়া(অপরাধ), ফখরুজ্জামান জুয়েল (সদর সার্কেল) এবং নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
×