ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিতে হেরেও ফাইনালে ময়মনসিংহ! চ্যাম্পিয়ন রংপুর

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৯ জুলাই ২০১৯

সেমিতে হেরেও ফাইনালে ময়মনসিংহ! চ্যাম্পিয়ন রংপুর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কখনও কি শুনেছেন, সেমিতে হেরেও একটি দল ফাইনালে খেলতে পারে? শুনেছেন কি টাইব্রেকার-পর্ব চালাতে গিয়ে রেফারি দু’-দু’বার হাস্যকর ভুল করেন? অবিশ্বাস্য হলেও এমনটাই ঘটেছে শুক্রবার। ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জেএফএ কাপ অ-১৪ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে রংপুর ৪-২ গোলে ময়মনসিংহকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কোন দলই গোল করতে পারেনি। টাইব্রেকার গোল করে রংপুরের ফাতেমা, শিলা, মিতু এবং ঝর্ণা। মিস করে মিশরাত। ময়মনসিংহের হয়ে গোল করে জারিনা মান্দা ও সাথী আক্তার। মিস করে হাফছা, মিথিলা ও রোকসানা। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয় চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড শামিমা আক্তার শিলা (৮ গোল)। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয় বিজয়ী দলের মোছাম্মৎ ফাতেমা। সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হয় মাগুরার অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড আনিকা আনজুম। ফেয়ার প্লে ট্রফি পায় মাগুরা। সেরা আঞ্চলিক ভেন্যুর পুরস্কার পায় ময়মনসিংহ ভেন্যু। বাংলাদেশের ফুটবলে অনেক ধরনের টুর্নামেন্ট হয়। ফাইনালও হয়। ফাইনালে অনেক কিছুই ঘটে। মারামারি, দর্শক হাঙ্গামা-ভাংচুর, খেলা পণ্ড হওয়া, পুলিশের এ্যাকশন ... এমনি আরও কত কি। কিন্তু শুক্রবার যা ঘটে গেল, তা এর আগে কখনও ঘটেছে কি না সন্দেহ। ফাইনালে ফাইনালিস্ট এক দল খেলেনি। তাদের পরিবর্তে খেলেছে অন্য দল। ঠাকুরগাঁও সেমিতে ময়মনসিংহকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসে বৃহস্পতিবার। হারের পরেই প্রমাণসহ ঠাকুরগাঁও দলের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্ট কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জানায় ময়মনসিংহ। তাদের অভিযোগ-ঠাকুরগাঁও দলের ছয় ফুটবলার বাইলজ অমান্য করে টানা তৃতীয়বারের মতো এই আসরে অংশ নিয়েছে। বাইলজে আছে কোন ফুটবলার দু’বারের বেশি (টানা) এই আসরে খেলতে পারবে না। কমিটি বিষয়টি আমলে নেয় এবং তদন্ত করে এর সত্যতা পায়। তবে ছয় জন নয়, তিন জন খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবারই বাফুফে বাইলজের নিয়ম অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও দলকে জানিয়ে দেয়, তারা বহিস্কৃত এবং ফাইনালে খেলতে পারবে না। কিন্তু ফাইনালের দিন ঠিকই জোর করে মাঠে নামে ঠাকুরগাঁও দল! বাফুফে তাদের মাঠ ছাড়তে বললে দলের খেলোয়াড়রা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, মাঠে গড়াগড়ি করে এবং গণমাধ্যমের কাছে আকুল আবেদন জানায়, তাদের অভিযুক্ত খেলোয়াড়দের বসিয়ে রেখে দলকে যেন খেলতে দেয়া হয়। এ সময় এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোনভাবেই ঠাকুরগাঁও দলকে মাঠের বাইরে নেয়া যাচ্ছিল না। ততক্ষণে ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেছে। শেষে এমন অবস্থা দাঁড়ায়-পুলিস দিয়ে তাদের বের করতে হবে। অবশ্য এর প্রয়োজন পড়েনি। বাফুফে এবং ঠাকুরগাঁও দলের স্টাফরা অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের মাঠে থেকে বের করতে সক্ষম হলে সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এরপর বাইলজের নিয়ম মোতাবেক সেমিতে ঠাকুরগাঁও টাইব্রেকারে যাদের হারিয়েছিল, সেই ময়মনসিংহ দল ফাইনাল খেলতে নামে রংপুরের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই ‘সুর্বণ’ সুযোগও তারা কাজে লাগাতে পারেনি। হেরে যায় টাইব্রেকারে। আর সেখানেও ঘটে আরেক নাটক। খেলা টাইব্রেকারে গড়ানোর পর রেফারি সালমা আক্তার দু’-দু’বার হাস্যকর ভুল করে বসেন। উভয় দল ৩টি করে শট মারার পর জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই (তখন রংপুর এগিয়ে ছিল ২-১ গোলে) খেলা শেষ করার বাঁশি বাজিয়ে বসেন! সঙ্গে সঙ্গে আয়োজকরা টেবিলভর্তি ট্রফি ও মেডেল মাঠে ঢুকিয়ে সাজিয়ে ফেলে। ময়মনসিংহ হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে, রংপুর জেতার আনন্দে উল্লাস শুরু করে দেয়। কিন্তু মাঠে উপস্থিত দর্শক-সাংবাদিকরা সচেতন ছিলেন। তারা প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও পরে মাঠে উপস্থিত টুর্নামেন্ট কমিটির লোকদের ভুলের বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রেফারি ভুল শুধরে আবারও শট মারার নিদের্শ দেন। একপর্যায়ে এক শট আগেই ময়মনসিংহের হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরেও (রংপুর এগিয়ে ৪-২ গোলে) রেফারি বিস্ময়করভাবে ময়মনসিংহ দলকে শট মারার নির্দেশ দেন! মজার ব্যাপার- ‘বোনাস’ এই শট পেয়েও ময়মনসিংহ দলের রোকসানা তা থেকে গোল করতে পারেনি! খেলা শেষে বিজয়ী ও বিজিত দলকে পুরস্কৃত করেন বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ও পৃষ্ঠপোষক ওয়ালটনের উর্ধতন কর্মকর্তা এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার।
×