ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘পেট্রোবাংলার কাছে উদ্বৃত্ত অর্থ রেখে দেয়ার কোন সুযোগ নেই’

গ্যাসের দাম বাড়লেও এলএনজির সরবরাহ বাড়েনি

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২০ জুলাই ২০১৯

গ্যাসের দাম বাড়লেও এলএনজির সরবরাহ বাড়েনি

রশিদ মামুন ॥ প্রতিদিন গড়ে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ ধরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও গত ১৮ দিনের এক দিনও ওই পরিমাণ এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। গ্যাসের দর বৃদ্ধির ঠিক আগে জুনের শেষ পাঁচদিন হিসেব করে দেখা গেছে এই পাঁচদিনে গড়ে ৫৫৯ দশমিক চার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ হয়েছে। অর্থাৎ জাতীয় গ্রিডে কোন দিনই ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ হয়নি। পেট্রোবাংলার তথ্যমতে গত ১৭ দিনে দেশে এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে আট হাজার ১৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। গড় হিসেবে দৈনিক ৪৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের চেয়ে এলএনজি সরবরাহের পরিমাণ ৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট কম। জুলাইয়ের প্রথম দিন জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয় ৫৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট। মাসের প্রথম থেকে ৮ তারিখের মধ্যে ৪ জুলাই সর্বোচ্চ সরবরাহ ছিল ৫৬৯ মিলিয়ন ঘনফুট আর সর্বনিম্ন সরবরাহ ছিল ৬ জুলাই ৫৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর তিনদিন সাগর উত্তাল থাকায় এলএনজি সরবরাহ কিছুটা কমে। সে সময় এলএনজির সরবরাহ ছিল যথাক্রমে ৯, ১০ এবং ১১ জুলাই ৩৭৫, ১৯২ এবং ৪২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর ১২ জুলাই এলএনজি সরবরাহ আবার বেড়ে হয় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর ১৮ জুলাই সর্বোচ্চ সরবরাহ ছিল ৫৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ জুলাইয়ের এক দিনও ৬০০ মিলিয়নও পেরতে পারেনি এলএনজি সরবরাহ। অন্যদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঠিক আগের পাঁচদিন গড় এলএনজি সরবরাহ ছিল ৫৫৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ঘনফুট। ওই পাঁচদিনের মধ্যে ২৭ জুন সর্বোচ্চ ৫৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হয়। আর সর্বনিম্ন এলএনজি সরবরাহ ছিল ২৯ জুন ৫৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট। যে গ্যাস সরবরাহই করা হয়নি সেই গ্যাসের দাম বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি (বিইআরসি) কমিশন কিভাবে বৃদ্ধি করে- এমন প্রশ্নে কমিশন চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, তারা সরবরাহ বাড়িয়ে প্রতিদিন ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করবে এরকম প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। আর পেট্রোবাংলা এখনই ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করছে। বিইআরসি সূত্র বলছে প্রতি মাসে সমান এলএনজি সরবরাহ হবে এমনটি আদেশে বলা নেই। তারা বলছে একেক মাসে একেকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে এসব গড় করলে প্রতিদিনের গড় এলএনজি সরবরাহ ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুটই দাঁড়ায়। এর আগে গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের সময় বিইআরসি ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ ধরে সমন্বয় করেছিল। গত নির্বাচনের আগে ওই সমন্বয়ের পুরোটা সরকারই দিয়েছিল। কিন্তু গত ৩০ জুন পর্যন্ত গড়ে পেট্রোবাংলা এলএনজি সরবরাহ করেছিল দৈনিক ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ গড় হিসেবের চেয়ে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ কম করেছে পেট্রোবাংলা। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে সংস্থান, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে অর্থ দেয়ার পর ভর্তুকি যা প্রয়োজন তাই দেবে সরকার। ফলে পেট্রোবাংলার কাছে অতিরিক্ত অর্থ রেখে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু সঠিক হিসেব না করায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেই দেখতে চান জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পণ্য ভোক্তার হাতে দেয়ার পরই দাম নেয়া উচিত। আর ভোক্তা পণ্য পেল না আর সেই না পাওয়া পণ্যের হিসেব ধরে বাড়তি দাম নেয়াটা অন্যায়। এখন দেশে দুটি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। প্রতিদিন এই দুটি টার্মিনাল নিয়ে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব। কিন্তু পাইপ লাইন না থাকায় সর্বোচ্চ সরবরাহ করা সম্ভব ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু তাও সরবরাহ করা হচ্ছে না। প্রতিদিন ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে কিন্তু দাম বৃদ্ধির সময় ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ধরেই দাম বাড়ানো হয়েছে।
×