ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসূচী পরিচালনায় কমিটি গঠন

প্রশিক্ষণ দিয়ে গার্মেন্টসে ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিকের চাকরি

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২০ জুলাই ২০১৯

 প্রশিক্ষণ দিয়ে গার্মেন্টসে ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিকের চাকরি

এম শাহজাহান ॥ বেকারত্ব দূরীকরণে প্রশিক্ষণ দিয়ে পোশাকখাতে ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিকের চাকরি দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অদক্ষ শ্রমিকের ভিড়ে দেশের শীর্ষ এ রফতানি খাতের প্রবৃদ্ধি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে বাড়ছে নানামুখী সঙ্কট। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি দেয়া হবে। তবে সেই প্রশিক্ষণ কর্মসূচী কিভাবে পরিচালনা করা হবে তা নির্ধারণে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। নাম দেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা কমিটি। তৈরি পোশাকখাতের প্রশিক্ষণ প্রদান নীতিমালা-২০১৯ সামনে রেখে সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান কাজ হচ্ছে-পোশাকখাতে দক্ষ শ্রমিকদের চাকরির ব্যবস্থা করা। জানা গেছে, দক্ষতা বিবেচনায় গ্রেডের ভিত্তিতে পোশাকখাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে থাকেন উদ্যোক্তারা। মজুরি কাঠামো অনুযায়ী সাতটি গ্রেডের ভিত্তিতে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়া হয়। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) এ সংক্রান্ত এক সমীক্ষায় বলা হয়- মজুরি কাঠামোর গ্রেড ৭ ও ৬-এ অদক্ষ শ্রমিকের হার সবচেয়ে বেশি। এ শিল্পের মজুরি কাঠামোর ১ ও ২ গ্রেড বাদে বাকি সব ক’টিতেই নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ বেশি। গ্রেড ৭-এ নারী-পুরুষ মিলিয়ে অদক্ষ শ্রমিকের হার ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গ্রেড ৬-এ ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ শ্রমিক অদক্ষ। গ্রেড ৪ ও ৫-এ রয়েছে আধা দক্ষ নারী-পুরুষ শ্রমিক। এর মধ্যে গ্রেড ৪-এ ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ শ্রমিক আধা দক্ষ। আর গ্রেড ৫-এ ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ শ্রমিক আধা দক্ষ। গ্রেড ১ থেকে ৩-এ অদক্ষ নারী-পুরুষ শ্রমিকের হার সবচেয়ে কম। রফতানির শীর্ষে থাকা এ খাতটি সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিতে হলে অদক্ষ শ্রমিকের দিকে মনোযোগ দেয়ার কথা জোর দিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। এছাড়া পোশাক খাতের উদ্যোক্তারাও বলে আসছেন, এ শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা অদক্ষ শ্রমিক। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই কিন্তু দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দক্ষ শ্রমিকের কথা বলে আসছি। পোশাক শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব মেটানো যাচ্ছে না। অথচ দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, এ শিল্পে বর্তমান ৪০ লাখ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তবে সেই সুযোগ কেবল দক্ষ শ্রমিকদের জন্য। এ কারণে এখন থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে যাতে শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া যায় সে বিষয়ে মালিক, শ্রমিক ও সরকার সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে শুধু পোশাকখাতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এটা পূরণ করতে হলে অবশ্যই দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। জানা গেছে, পোশাকখাতে অদক্ষ শ্রমিকের বিষয়টি বিদেশী ক্রেতাদের কাছেও এখন একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোশাকের ফ্যাশন, ডিজাইন, বৈচিত্র্য এবং গুণগতমানের বিষয়টি অনেকাংশে দক্ষ শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে থাকে। এ কারণেই পোশাকখাতকে প্রশিক্ষণ প্রদান নীতিমালা-২০১৯ আলোকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক ও সিএমসি প্রধানকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য প্রতিনিধিরা হলেন, প্রতিনিধি বস্ত্র সেল বাণিজ্যমন্ত্রণালয়, প্রতিনিধি শ্রম অধিদফতর, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রতিনিধি বস্ত্র অধিদফতর, প্রতিনিধি বেপজা, প্রতিনিধি বিজিএমইএ, প্রতিনিধি বিকেএমইএ, উপপরিচালক সিএমসি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। কমিটির কর্ম পরিধি ॥ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী সংক্রান্ত সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাছাই সংক্রান্ত কাজ করবে। প্রশিক্ষণার্থী শ্রমিক কর্মচারী নির্বাচনপূর্বক নিবন্ধন প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। নিবন্ধিত শ্রমিকরা কে কোন সময় কোন প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ করবে তা সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করে প্রস্তুতকৃত তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণয়নকৃত মডিউল সংশোধন, সংযোজন এবং অনুমোদন করবে। সরকার প্রদত্ত তহবিল ব্যবহারপূর্বক প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পর্কে উপযুক্ত সময়ে পত্রপত্রিকায় ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় পর্যাপ্ত প্রচারের ব্যবস্থা করাও কমিটির অন্যতম দায়িত্ব। প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন কাজ পর্যালোচনার জন্য কমিটিকে প্রতি দুই মাসে ন্যূনতম একটি সভা করতে হবে। তবে প্রয়োজনে যেকোন সময়ে সভা আহ্বান করতে পারবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন দফতর, সংস্থার প্রতিনিধিকে কমিটির সদস্য হিসেবে কো অপ্ট করতে পারবে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, রফতানিতে শীর্ষে থাকা পোশাকখাত উন্নয়নে দক্ষ শ্রমিক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশে দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। আগামীতে কাজ পেতে হলে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারীকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পোশাকখাতে বিদেশী দক্ষ কর্মকর্তারা উচ্চ বেতনে চাকরি করছে। কিন্তু সেই জায়গায় বাংলাদেশীরা সেভাবে প্রবেশ করতে পারছে না। এ কারণে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলার পাশাপাশি ভবিষ্যতে দক্ষ কর্মকর্তাও তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু সরকারের দিকে চেয়ে না থাকে এ খাতের উদ্যোক্তাদেরও অদক্ষ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে ৪০-৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের অধিকাংশই অদক্ষ। এসিডি’র জরিপ আরও বলছে, পোশাক শিল্পের সাতটি গ্রেডের চারটিতেই কাজ করছেন আধা ও অদক্ষ শ্রমিক। এছাড়া বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ লাখ ২৭ হাজার ৪৬৩ জনে। ওই সময় আরও ২১ লাখ শ্রমিককে নতুন করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক পরিণত করতে হবে। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সিবাই ॥ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে কাজ করছে সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর বাংলাদেশ এ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিজ’-সিবাই। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে অধিকতর মূল্য সংযোজনের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিবাই উদ্বোধন করেন। তবে ২০১৬ সালের জুলাইতে ঢাকার আশুলিয়ায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫ হাজার ৭৬৩ শ্রমিক বিভিন্ন কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছে। এছাড়া ইউসেপ, মুসলিম এইড এবং বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত দশটি পোশাক কারখানায় এন্টারপ্রাইজ বেইজড ট্রেনিং বা ইবিটি সেন্টার স্থাপন করেছে সিবাই।
×