ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভক্তদের ভালবাসায় হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণবার্ষিকী পালন

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২০ জুলাই ২০১৯

 ভক্তদের ভালবাসায়  হুমায়ূন আহমেদের  প্রয়াণবার্ষিকী  পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়। বৃষ্টিবিলাসী এই গানের স্রাষ্টা হুমায়ূন আহমেদের বিদায়টাও হয়েছিল বর্ষাকালে। শ্রাবণ মাসেই অগণন ভক্তকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন অনন্তের পথে। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই নন্দিত লেখক, নির্মাতা ও গীতিকবি। শুক্রবার ছিল তার সপ্তম প্রয়াণবার্ষিকী। এদিন হুমায়ূনের ভক্তরা জানিয়েছেন ভালবাসার অঞ্জলি। গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে লেখকের সমাধিতে ঝরে পড়েছে অনুরাগীদের নিবেদিত রাশি রাশি পুষ্পাঞ্জলি। লেখকের আত্মার শান্তি কামনায় তার কবর জিয়ারত শেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে দোয়া মাহফিল। জনকণ্ঠের গাজীপুর ও নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন। শুক্রবার সকালে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে লেখকের ভাই-বোন, শ^শুর এবং নুহাশপল্লীর কর্মচারী ও ভক্তসহ হিমু পরিবহনের সদস্যরা কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন করেছে। দেশের বাইরে থাকায় লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিশান ও নিনিদ দেশের বাইরে থাকায় তারা মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচীতে যোগ দিতে পারেননি। হুমায়ূন আহমেদের শ্বশুর প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরা শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কবর জিয়ারত করেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রয়াত লেখকের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট এবং মাসিক উন্মাদের সম্পাদক আহসান হাবীব ও তার স্ত্রী আফরোজা আমিন, বোন সুফিয়া হায়দার, রোকসানা আহমেদ, অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মোঃ মাজহারুল ইসলাম, আগামী প্রকাশনীর ওসমান গনি, অভিনেতা সৈয়দ হাসান সোহেল প্রমুখ লেখকের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় হিমু পরিবারের সদস্য, হিমু পরিবহনের সদস্য, নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা কর্মচারী এবং স্থানীয় সড়কঘাট হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আহসান হাবীব বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তার অনেক স্বপ্নই বাস্তবায়িত হয়েছে। ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণসহ অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে পারিবারিকভাবে একটি মিউজিয়াম স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তাকে নিয়ে একটি আর্কাইভ নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গবেষণা করছেন। এ আর্কাইভ গবেষণা কাজে সহায়তা করবে। দিবসটি উপলক্ষে প্রখর রোদকে উপেক্ষা করে হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এদিন উপস্থিত হয়েছিলেন প্রয়াত লেখকের ভক্ত ও অনুরাগীরা। ‘হিমু’রাও এদিন তাদের কর্মসূচী ও হিমু পরিবহন নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে হুমায়ূনের সমাধিস্থলে। হিমু পরিবহনের সভাপতি মোঃ আসলাম হোসেন জানান, তারা সকালে ঢাকা, ফরিদপুর, নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে ৬০ জন হিমু নুহাশপল্লীর কর্মসূচীতে যোগ দেন। হিমুরা একযোগে ৪০ জেলায় তাদের প্রিয় লেখকের স্মরণে নানা কর্মসূচী পালন করছে। তার মধ্যে বৃক্ষরোপণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বইমেলা রয়েছে। হিমুদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ১০টি জেলা পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে কোরানখানির আয়োজন করা হয়। এছাড়া স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার এতিম শিশু ছাড়াও অতিথিদের দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করা হয়। এতিম শিশু ছাড়াও হিমু পরিবারের সদস্যরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অতিথি, এলাকার লোকজন ও হুমায়ূন স্যারের পরিবারের লোকজন এ নুহাশপল্লীতে আসেন। এছাড়াও নেত্রকোনায় হুমায়ূন আহমেদের শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে নানা কর্মসূচী আয়োজন করা হয়েছে। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে তার কুতুবপুর গ্রামের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের উদ্যোগে সকালে হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোকর‌্যালি, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও কোরান খতম অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান এসব অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন। কর্মসূচীতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অভিভাবক এবং হুমায়ূন আহমেদের গ্রামবাসীরা অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে হিমু পরিবহনের সদস্যরা শুক্রবার উপজেলা সদরে শোকর‌্যালি ও ঔষধি গাছের চারা রোপণের কর্মসূচী পালন করেন। র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান, ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান, ক্ষুদ্র খান, আফরিদ জাহান খান, জয় রায় ও রুহুল আমিন প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালি শেষে তারা থানা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষের চারা রোপণ করেন। এদিকে শুক্রবার বিকেলে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাব মিলনায়তনে চর্চা সাহিত্য আড্ডা এবং হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি সংসদের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
×