ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শুভবোধের প্রত্যাশায় ছায়ানটে রবীন্দ্র উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২০ জুলাই ২০১৯

 শুভবোধের প্রত্যাশায় ছায়ানটে রবীন্দ্র উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেল গড়িয়ে নেমে আসে শ্রাবণের সন্ধ্যা। সুরে সুরে মুখরিত হয় শংকরের সংস্কৃতি অনুরাগীদের চিরচেনা লাল দালানটি। শ্রোতা আর শিল্পীর সম্মিলনে স্নিগ্ধতা ভর করে ঐতিহ্যবাহী ছায়ানট ভবনে। কবিগুরুর সৃষ্টির আলোয় যেন ঝলমল করে ওঠে সঙ্গীতায়োজনটি। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি গীত হলো নানা পর্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত। পরিবেশিত হলো প্রকৃতি, প্রেম ও পূজা পর্বের গান। সেই সঙ্গে সুরের আশ্রয়ে অশুভকে হটিয়ে আলিঙ্গন করা হলো শুভ চেতনার বাণীকে। এভাবে শুভবোধ ও কল্যাণের প্রত্যাশায় শুক্রবার থেকে শুরু হলো ছায়ানট আয়োজিত দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসব। দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সম্মেলক গানের সুরে। পূজা পর্বের মাঝেই যেন ভালবাসা জানানোর পাশাপাশি স্মরণ করা হয় বিশ্বকবিকে। অনেক কণ্ঠের সম্মিলিত প্রয়াসে গীত হয়- বাজাও তুমি, কবি/তোমার সুমধুর গঙ্গীত/গম্ভীরতর তানে প্রাণে মম ...। গানের সুরটি থামতেই স্বাগত বক্তব্য নিয়ে মঞ্চে আসেন কবি আবুল হাসনাত। সংক্ষিপ্ত কথনে তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনা কিভাবে আজও বাঙালীর মনন আলোড়িত করে এবং সঙ্কটে প্রেরণার পথপ্রদর্শক হয়ে রয়েছে সে কথা তুলে ধরেন। কথন শেষে পরিবেশিত হয় ছায়ানট শিল্পীদের পরিবেশিত বিশেষ গীতিনৃত্যালেখ্য ‘অনন্ত আনন্দধারা’। এরপর ছিল একক কণ্ঠের সঙ্গীত পরিবেশনা। পাশাপাশি এগিয়ে চলে কবিতা পাঠ ও সম্মেলক কণ্ঠের পরিবেশনা। গীতিনৃত্যালেখ্যর পরে ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’ গান দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের আয়োজনের পরবর্তী পর্ব। একক কণ্ঠে অভয়া দত্ত গেয়ে শোনান ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’। তাহমিদ ওয়াসিম ঋভু গেয়ে শোনান ‘কী গাব আমি, কী শুনাব’। ফারজানা আক্তার পপি পরিবেশন করেন ‘আজি এ আনন্দসন্ধ্যা’। পার্থ প্রতীম রায় গেয়ে শোনান ‘সদা থাকো আনন্দে’। সেঁজুতি বড়ুয়ার কণ্ঠে গীত হয় ‘এত আনন্দধ্বনি’। সত্যম কুমার দেবনাথ পরিবেশন করেন ‘হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল’। সেমন্তী মঞ্জরী পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘প্রাণে খুশির তুফান’। মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য গেয়ে শোনান ‘গায়ে আমার পুলক লাগে’। তানিয়া মান্নানের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘মেঘের পরে মেঘ’। খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম পরিবেশন করেন ‘এসো হে সজল ঘন’। অভিক দেব গেয়েছেন ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’। মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়নার কণ্ঠে গীত হয় ‘আজি শ্রাবণঘন গহন মোহে’। কাঞ্চন মোস্তফা শোনান ‘রিমিকি ঝিমিকি ঝরে’ শিরোনামের সঙ্গীত। স্বাতী বিশ্বাস গেয়ে শোনান ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার’। শুক্লা পাল সেতুর কণ্ঠে গীত হয় ‘মধু গন্ধে ভরা’। সুশান্ত রায় পরিবেশন করেন ‘চিরবন্ধু চিরনির্ভর চিরশান্তি’। এটিএম জাহাঙ্গীর গেয়ে শোনান ‘বর্ষণ মন্দ্রিত’। এছাড়াও সম্মিলিত কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘পথিক মেঘের দল’ ও ‘শ্রাবণের গগনের গায়’। রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে পাঠ করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ। আজ শনিবার উৎসবের সমাপনী। প্রথম দিনের মতো এদিনও অনুষ্ঠান শুরু সন্ধ্যা সাতটায়। মহাকালের তিন যুগ পূর্তি আনন্দ আয়োজন ॥ সময়ের স্রোতধারায় গত ১৪ আগস্ট প্রতিষ্ঠার পূর্ণ করেছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। সাফল্যের সেই উদ্্যাপনটি হলো শুক্রবার সন্ধ্যায়। নাট্যদলটির তিন যুগ পূর্তিতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ছিল আনন্দ আয়োজন। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সম্মাননা প্রদান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভার সঙ্গে ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে নির্মমতার ওপর নির্মিত নাটকের মঞ্চায়ন। মঞ্চস্থ হয়ে নাট্যদলটির নতুন প্রযোজনা মহাপ্রয়াণের শোক আখ্যান ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’। আজ শনিবারও সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটি। ৩৬ বছরের পথচলায় হারিয়ে যাওয়া সঙ্গীদের স্মরণ করে শুরু হয় দুই দিনের আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল নাট্যজন কামাল বায়েজীদ। স্বাগত বক্তব্য দেন তিন যুগ পূর্তি উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক কবীর আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মহাকালের সভাপতি মীর জাহিদ হাসান। সভাপতিত্ব করেন নাট্যদলটির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। আলোচনা পর্বে দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান শেষে মঞ্চস্থ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনন জামান রচিত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিক রহমান লিয়নের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় নাটক ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’। ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ রাত্রির দুপুর-বালুঘাট নির্মাণাধীন বিমানবন্দর থেকে শুরু হয় নাটকের কাহিনী। এর পর দেখানো হয় খুনীদের ষড়যন্ত্রের রূপরেখা। ষড়যন্ত্র পাঠ শেষে আরম্ভ হয় খুনীদের অভিযাত্রা। খুনী মেজর আর বিভ্রমে ভরা সেনাগণ হত্যার হাতিয়ার আর বিকট শকট নিয়ে ছুটে চলে ধানমন্ডি অভিমুখে। বাংলাদেশের মানচিত্রের কাঁধে চাপিয়ে দেয় ইতিহাসের সবচেয়ে ভারি লাশের বোঝা। নাটকটিতে অভিনয় করছেন কবির আহামেদ, ফারুক আহমেদ সেন্টু, মোঃ শাহনেওয়াজ, মনিরুল আলম কাজল, পলি বিশ্বাস, সামিউল জীবন, রাজিব হোসেন, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, তারেকেশ্বর তারোক, আহাদুজ্জামান কলিন্স, সুমাইয়া তাইয়ুম নিশা, আরাফাত আশরাফ, স্বপ্নিল, আজহার, পিয়াসী জাহান, কাজী তারিফ, তাজুল রনি, রেদোয়ান, সিয়াম রাব্বি, জুনায়েদ, নূর আকতার মায়া, রাফি, চৈতী সাথী, রিফাত হোসেন জুয়েল, ইকবাল চৌধুরী, মীর নাহিদ আহসান ও মীর জাহিদ হাসান। শিল্পকলায় পূর্ণিমা তিথিতে সাধুমেলা ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো মাসিক সাধুসঙ্গের চতুর্থ পর্ব। লালনের তত্ত্ব বাণী প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতি মাসে এই সাধুসঙ্গের আয়োজন করা হয়। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় একাডেমির বটতলায় অনুষ্ঠিত মাসিক পূর্ণিমা তিথির সাধুমেলার চতুর্থ পর্ব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী, অধ্যাপক ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক কৃষ্টি হেফাজ, অধ্যাপক ড. শোয়াইব জিবরান। লালন সাইজির তত্ত্ব ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন লালন গবেষক আবদেল মান্নান ও সৈয়দ জাহিদ হাসান। লালন সাঁইজির ভাববাণী পরিবেশন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নহীর শাহ, বাউল টুনটুন ফকির, সমির বাউল, রোকসানা আক্তার রূপসা এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বাউল দল।
×