ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও কয়েক মাস থাকতে পারে

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২০ জুলাই ২০১৯

 ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও কয়েক মাস থাকতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও কয়েক মাস থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যানে প্রতি বছর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বেশি ডেঙ্গু রোগী দেখা যায়। অর্থাৎ এবছরও ওই তিন মাসে বিগত বছরগুলোর মতো ডেঙ্গুর ভয়াবহতা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাবে। চলতি বছর ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক এডিস মশা নিধনকারী কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়েও মশক নিধনে সতর্ক ও সচেতন থাকার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। তবে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্তের মৌসুম যেন সারাবছর। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এবছর রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়ছে এবং আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে গত জুনে দেড় হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়ায় ডেঙ্গু প্রকোপের মৌসুম নিয়ে রোগী, চিকিৎসকসহ মশক নিধন কার্যক্রমের সকলকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর সংখ্যাও। সরকারী হিসেবে রাজধানীতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে উঠেছে। চলতি বছরে রাজধানীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বেসরকারী হিসেবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শুক্রবারও ২৪ ঘণ্টায় দুই শ’ জনের মতো নতুন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। আর সরকারী হিসেবে ১-১৯ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীতে ভর্তি হয়েছে মোট ৩৩৮৫ ডেঙ্গুরোগী। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫৩৪৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বের অন্য দেশের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও বেড়েছে। কখনও খরা, আবার কখনও বা অতিবৃষ্টির ফলে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় এবছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা অনেক কম। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য রাজধানীতে ডেঙ্গুর এ ধরনের প্রকোপ এক ধরনের বাস্তবতা। প্রত্যেক নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। জ্বর হলে সাধারণ জ্বর মনে না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে। সকল হাসপাতালে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। জ্বর নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। সচেতন থাকলে আতঙ্কের কিছু নেই। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারীভাবে তৈরি জাতীয় গাইড মেনে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন মহাপরিচালক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে ডেঙ্গু মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অধিক সচেতন হতে হবে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর বর্ষা মৌসুমের আগে গত মার্চ মাসে রাজধানীর ১০০ ওয়ার্ডে মশক জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে জমে থাকা পানি, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বালতি, অব্যবহৃত টায়ার, প্লাস্টিক ড্রাম, পানির ট্যাঙ্ক, পানির মিটারের গর্ত, চিত্রাঙ্কনের জন্য ব্যবহৃত পাত্র এডিস মশার উৎকৃষ্ট প্রজনন স্থল। বেখেয়ালে এসব পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। নগরবাসী যদি নিজ বাড়ি ও বাসার সামনে এ ধরনের পাত্রে পানি জমতে না দেয় তবে এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ হবে।
×