ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই বসছে না পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২০ জুলাই ২০১৯

 শীঘ্রই বসছে না পদ্মা সেতুর  ১৫তম  স্প্যান

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ শীঘ্রই বসছে না পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান। উত্তাল পদ্মায় প্রচ- স্রোতের কারণে শীঘ্রই সম্ভব হবে না স্প্যান বসানো। স্প্যানবহনকারী ক্রেনটি একটা নির্দিষ্ট মাপের স্রোত ছাড়া চলতে পারে না। পদ্মার এখন যা অবস্থা এই অবস্থায় স্প্যানবহনকারী ক্রেনটি চলা সম্ভব না। তাই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে কোন স্প্যান না বসার সম্ভাবনাই বেশি। এ দু’মাস স্প্যান তৈরি, পেনটিংসহ অন্যান্য কাজ চলবে। যাতে স্রোত কমলে মাসে ৩/৪টি করে স্প্যান বসানো যায়। মাওয়ার কুমারভোগ বিশেষায়িত কারখানায় এখন ১০টি স্প্যান রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি একেবারে প্রস্তুত রয়েছে। পদ্মায় স্রোত কমলেই এগুলো বসানো হবে। এছাড়া অপর স্প্যানগুলো মোটামুটি শেষের দিকে। পেনটিংসহ অন্যান্য কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ২৫ স্প্যান চীন থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। আরেকটা পথে রয়েছে। চীন থেকে মংলা পৌঁছতে এর সময় লাগে ২১ দিন। কয়েকদিনের মধ্যেই স্প্যানটি মংলা এসে পৌঁছবে। এরপর নদী পথে এটি মাওয়ার কুমারভোগ বিশেষায়িত কারখানায় নিয়ে আসা হবে। তবে স্রোত কিছুটা কমলে মাওয়া প্রান্তে কাছাকাছি থাকায় ৩-ডি নম্বর স্প্যানটি ১৬/১৭ খুঁটিতে বসানোর চেষ্টা করা হবে। পরে স্রোত কমে যখন পদ্মায় স্পেনবাহী ক্রেনটি চলতে পারবে তখন অন্য স্প্যানগুলো বসানো হবে। তাই এখন অন্যান্য কাজ চলছে। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা আরও জানান, পদ্মা সেতুর ৪২ পিলারের মধ্যে ৩০ পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাকি ১১ খুঁটির ঢালাইয়ের কাজ চলছে। অপর একটি খুঁটির ঢালাইয়ের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। চলতি ২০১৯ সালের মধ্যে সব খুঁটির কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে গত রবিবার সেতুর ২৬ নম্বর (পিয়ার) খুঁটির ৭ নম্বর পাইলের টপ সেকশনের পাইল স্থাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পদ্মা সেতুর পাইল ড্রাইভ। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ২৯৪ পাইল পদ্মায় বসে গেল। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে এই পাইল ড্রাইভ শুরু হয়ে এত দিন ধরে চলছিল। এই ট্যাম পাইল স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব পাইল স্থাপন অধ্যায় শেষ হলো। প্রবল স্রোত আর বৈচিত্র্যময় নদীর মাটির তলদেশের চ্যালেঞ্জ জয় করে সেতুর ভিত তৈরির মূল কাজটি সম্পন্ন হলো। তাই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর বড় চ্যালেঞ্জের কাজটি সম্পন্ন হলো। সেতুর এই বিশাল পাইল ড্রাইভের কর্মযজ্ঞটি ছিল নানা চ্যালেঞ্জে ভরা। উত্তাল পদ্মাকে জয় করার এই প্রচেষ্টা সাফল্যে রূপ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, পাইলগুলো বসানোর কাজ শেষ হলে এ বছরের মধ্যে চেষ্টা করা হবে সবকটি পিয়ারের নির্মাণ কাজ শেষ করতে। একই সঙ্গে স্প্যান বসানোর কাজও চলবে। ৪২ পিয়ারের ওপর ৪১ স্প্যানে গড়ে উঠবে পুরো পদ্মা সেতু। মূল নদীতে ৪০টি পিয়ার। নির্মাণ কাজের শুরুতে মূল নদীর প্রতিটি পিয়ারে পাইলের সংখ্যা ছিল ছয়। আর দুই প্রান্তে ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে ১২ করে মোট ২৪ পাইল ছিল প্রথম নক্সায়। সব মিলিয়ে ৪২ পিয়ারে পাইল ছিল ২৬৪টি। কিন্তু নদীর গভীর তলদেশে কাদামাটির স্তর থাকায় নতুন নক্সা করতে হয়। নতুন এই নক্সায় ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারের ১৬ করে মোট ৩২টি পাইল। আর ২২ পিয়ারে সাতটি করে পাইল ১৫৪টি এবং ১৮ পিয়ারে ছয়টি করে মোট ১০৮টি পাইল। সব মিলিয়ে ২৯৪ পাইল। আর এই ২৯৪টির মধ্যে ৭ খুঁটিতে ৭৭টি রয়েছে ট্যাম (খাঁজকাটা) পাইল। যার সবকটিই সফলভাবে স্থাপন হলো। ৪২ পিয়ার থাকবে পদ্মা সেতুতে। ৪২ পিয়ারের মধ্যে ১৪টি স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার এখন দৃশ্যমান। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। ৪১ স্প্যানের এ পর্যন্ত ১৪টি স্প্যান বসেছে। পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তেই চলছে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতু (ভয়াডাক্ট)। এই সেতুর কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। তাই আশা করা হচ্ছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
×