ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফটিকছড়িতে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনাও আমলে নিচ্ছে না থানা

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২০ জুলাই ২০১৯

 ফটিকছড়িতে প্রকাশ্যে  খুনের ঘটনাও আমলে নিচ্ছে না থানা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ফটিকছড়িতে প্রকাশ্যে ও দিবালোকে খুনের ঘটনাও আমলে নিচ্ছে না থানা পুলিশ। অবশেষে এমন অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে নেমে মাত্র ১০ দিনেই হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে। অথচ এই কাজে থানা পুলিশ দুই মাস পার করে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, ফটিকছড়ি থানা পুলিশ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে পুলিশ বিভাগকে কুলষিত করেছে। কারণ হত্যাকারীর স্ত্রী সুমি আক্তার মহিলা মেম্বার হওয়ায় এ ধরনের ছাড় দিয়েছে। তবে মিডিয়ার সামনে মনছুর খুনের বর্ণনায় খুনী আলী নেওয়াজ বাবু (৩৫) নিজেকে সরকার দলীয় লোক দাবি করেছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ অপরাধীদের আগে পরিচয় খোঁজে। অপরাধীরা সরকার দলীয় হলেই তদন্তে গড়িমসি করা হয়, নেতাদের ফোনের অপেক্ষায় থাকে কিভাবে অপরাধীকে ধোয়া তুলসী পাতা বানানো যায়। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের অপরাধীদের আইনের ফাঁক দিয়ে বের করে দিতে চায় থানা পুলিশ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের এ ধরনের আচরণে ক্ষতিগ্রস্তরা আরও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে থানায় মামলা দায়েরের কথা বাদ দিয়ে আদালতে মামলা করতে বাধ্য হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তরা। আরও অভিযোগ উঠেছে, ফটিকছড়ি থানা পুলিশ মামলার সঠিক তদন্ত না করায় এবং আসামিকে গ্রেফতার না করার কারণে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরিটিও উদ্ধার করতে পারেনি। প্রশ্ন উঠেছে, প্রকাশ্যে খুনের ঘটনায় ফটিকছড়ি থানা পুলিশ দীর্ঘ দুই মাসেও কেন এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার মূল আসামিকে ধরতে পারনেনি। পিআইবি দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মে মামলা দায়ের হলেও তদন্তে গাফিলতির কারণে মামলাটি গত ৬ জুলাই পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। মাত্র ১০ দিনেই মামলার মূল আসামি আলী নেওয়াজকে নাজিরহাটের কাটিরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে লন্ডনী মার্কেটের ২য় তলায় থাকা আসামির ভাড়া বাসা থেকেই রক্তমাখা ছুরিটি উদ্ধার করা হয়। চলাচলের রাস্তা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকা- হয়েছে বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ইন্সপেক্টর আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পরিতোষ দাশের তদন্তে উঠে এসেছে। পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র ১০ দিনেই মূল আসামি গ্রেফতারসহ রক্তমাখা ছুরি আসামির কক্ষ থেকে উদ্ধার করেছে পরিতোষের অভিযান টিম। এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর আবু জাফর ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে পার্শ্ববর্তী বাড়ির সঙ্গে ভূমি বিরোধ রয়েছে। ফলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই প্রকাশ্যে হত্যাকা-। হত্যাকারী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এছাড়া হত্যাকা-ের পর আসামির ঘরবাড়ি জালিয়ে দিয়েছে নিহতের লোকজন। মাত্র ১০ দিনের তদন্তে মূল আসামি গ্রেফতার ও রক্তমাখা ছুরি আসামির বিছানার নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ফটিকছড়ির শান্তিরহাট বাজারের আল মক্কা হোটেলের সামনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মনছুর খুনের ঘটনা ঘটে। দ্রুত মনছুরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলে ওইদিন রাত ৮টায় চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার ভাই লোকমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে গত ১৫ মে। এই মামলায় খুনী আলী নেওয়াজ, তার ভাই, বাবা এমনকি মাকেও আসামি করা হয়েছে। আলী নেওয়াজ ফটিকছড়ির বক্তপুর গ্রামের মিয়া বাড়ির আব্দুল আজিজের ছেলে।
×