ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জেলা প্রশাসক সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ২১ জুলাই ২০১৯

জেলা প্রশাসক সম্মেলন

এবার তিন দিনের জায়গায় পাঁচদিন হয়েছে জেলা প্রশাসক সম্মেলন। প্রস্তাবের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে, হয়েছে ৩৩৩টি। এ থেকে ধারণা করা যায়, আগের তুলনায় দায়িত্বের পরিধি বেড়েছে, সমস্যাও কমেনি। প্রতিবছর সকল বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জন জেলা প্রশাসকের অংশগ্রহণে রাজধানীতে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক বা নিয়মিত কার্যবিধি হলেও এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক প্রশাসনিক চিত্র উঠে আসে। সরকারপ্রধানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দান সম্মেলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। এ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার সদস্যরা, মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়কসহ সকল সচিব উপস্থিত থাকেন। ফলে এই সম্মেলনের বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পর নবগঠিত সরকারের এটিই প্রথম সম্মেলন। সম্প্রতি সমাপ্ত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে, যার ভেতর দিয়ে জেলা পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা, ভূমিপ্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের বাস্তব চিত্র উপস্থাপিত হয়। সম্মেলনের প্রধান প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে- ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম জোরদারকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গবর্নেন্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়। সুশাসন ও দেশের যথাযথ উন্নয়ন নিশ্চিতে জেলা প্রশাসকদের ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে : সরকারী সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখা; জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন; যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ; গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্রতী হওয়া; তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা প্রভৃতি। গত বছর এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এখানে আমি বলতে চাই, বিনা দ্বিধায় আপনারা টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি, সন্ত্রাস এবং মাদক নির্মূল করবেন। এখানে কে কোন দল করে, কে কী করে সেগুলো দেখার কোন দরকার নেই।’ প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্যের পর তারা কর্তব্য পালনে পিছপা হবেন না এমনটাই প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না এমনটাই দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকরা ভাবতে চান। এই সম্মেলনে ডিসিদের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব আকারে বেশকিছু অনুরোধ রাখা হয়েছে সরকারের কাছে। সেগুলোর যৌক্তিক সমাধান অনস্বীকার্য। সাধারণ মানুষ আশা করে জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকগণ যে জনসেবক, সেটি অবশ্যই তারা স্মরণে রাখবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর জনহিতকর ও যুগোপযোগী নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।
×