ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিপফ্রিজের ঢাকায় জীবন্ত মাছ, দারুণ ছোটাছুটি

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২১ জুলাই ২০১৯

ডিপফ্রিজের ঢাকায়  জীবন্ত মাছ, দারুণ  ছোটাছুটি

মোরসালিন মিজান ॥ রাজধানী শহরে মাছ মানেই মাছের বাজার। মোটেই আকর্ষণীয় কিছু নয়। পারতপক্ষে কেউ সেদিকে যেতে চান না। বাসার ড্রিপফ্রিজেও মাছ থাকে। তবে তা পলিথিনে মোড়ানো। বরফখন্ড। দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই। মৎস্যমেলা ঠিক তার উল্টো। বেশ বড় এবং পরিপাটি আয়োজন। এ্যাকুরিয়ামে চৌবাচ্চায় জীবন্ত মাছের দারুণ ছোটাছুটি। দেখে বেশ লাগে। প্রতিবছর সরকারীভাবে এই মেলার আয়োজন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এবারের আয়োজন। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পাঁচদিনের মেলায় অংশ নিয়েছে মোট ২২ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে মাছের চাষ পদ্ধতি, পোনা উৎপাদন, জাত উন্নতকরণ প্রক্রিয়া, মাছের খাবার, ওষুধ, গবেষণা তথ্য, নানা প্রকল্পের মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে। মৎস্য সেক্টরটি নিয়ে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে কী ধরনের কাজ হচ্ছে, তা সম্পর্কেও ধারনা পাওয়া যাচ্ছে এখান থেকে। শনিবার মেলায় গিয়ে দেখা যায়, আয়োজনটি আরও সুন্দর হয়েছে। আগে খোলা প্রাঙ্গণেই মেলা আয়োজন করা হতো। এবার বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। তাই বিশালাকার স্টিলের কাঠামো ব্যবহার করে তাবু নির্মাণ করা হয়েছে। এর ভেতরে স্টল ও প্যাভিলিয়ন। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্যাভিলিয়নে বড় উপস্থাপনা। প্রথমেই চোখে পড়ে মৎস্য অধিদফতরের প্যাভিলিয়ন। এখানে বড় চৌবাচ্চা। মাছগুলোও বড়। স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটছে ব্রুড রুই, কাতলা, চিতল ও ব্ল্যাক কার্প। প্যাভিলিয়নের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বর্তমানে ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হচ্ছে। সেইসব প্রকল্পে ব্যবহৃত টেকনোলজির কয়েকটি তারা এখানে প্রদর্শন করছেন বলে জানান তিনি। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্যাভিলিয়নটিও এ্যাকুরিয়াম দিয়ে সাজানো। এখানে দেখা গেল গিফট তেলাপিয়া, ভেটকি, রাজপুঁটি, মহাশোল, বরালি, পাবদা, ফলি ও মেনি ইত্যাদি মাছ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ড. জোহা জানালেন, মাছগুলো নিয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণা সম্পন্ন করেছেন তারা। গবেষণার মাধ্যমে মহাশোল, টেংরা, গুলশা, কৈসহ বেশকিছু মাছের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। নিয়ন্ত্রিত প্রজনন কৌশলের মাধ্যমে এই জাত উন্নত করার কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এখানে আরও দেখা গেল, কাঁকড়া ও কুঁচ। কেন? কথা বলে জানা গেল, বিদেশে কাঁকড়া ও কুঁচের বিপুল চাহিদা। এ কারণে দেশের ৩৫ উপজেলায় এ্যাকুয়াকালচার পদ্ধতিতে কাঁকড়া ও কুঁচে চাষ হচ্ছে বলে জানান তিনি। সামুদ্রিক মাছের খোঁজ খবর দিচ্ছে বাংলাদেশ মেরিন ফিসারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের একটি স্টল। এখানে একশ’র মতো মাছ। কেমিক্যালের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা মাছ দারুণ কৌতূহল নিয়ে দেখছেন দর্শনার্থীরা। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে রূপবান, রঙ্গিলা, তাপসী, হাঙর, রাজকাঁকড়া, সবুজ চেউ, রাঙ্গা চইক্কা, দাড়কুটা, চাশা চিংড়ি ও লইট্টা মাছের। স্টলের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কাউসার জানান, প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিশেষ জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্র চষে বেড়ান। এ প্রক্রিয়ায় ২৯৮ প্রজাতির মাছ, ২৩ প্রজাতির চিংড়ি, ৬৬ প্রজাতির কাঁকড়া ও ১২ প্রজাতির মোলাস্ক সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের স্টলে কথা হয় বিপনন কর্মকর্তা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সারাদেশে তাদের ১৫টি অবতরণ কেন্দ্র রয়েছে। জেলেরা মাছ ধরে প্রাথমিকভাবে এসব কেন্দ্রে রাখেন। পরে ধুয়ে প্যাকেটজাত করেন। পাশাপাশি অবতরণ কেন্দ্র থেকে ফরমালিন মুক্ত তাজা মাছ সংগ্রহ করে বিক্রিও করে কর্পোরেশন। রাজশাহী নাটোর ফেনী চাঁদপুর ভোলা বরিশালসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল থেকে মাছ সংগ্রহ করা হয়। ঢাকায় প্রতিদিন তিন ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে মাছ বিক্রি করেন কর্পোরেশনের কর্মীরা। মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে উন্নত জাতের পোনা ও রেণু। বন্ধন মৎস্য হ্যাচারি ও ফিসারিজ নামের একটি স্টলে পানি ভর্তি কাঁচের জার। ছোট ছোট জারে পাবদা, গোলসা, টেংরা, শিং ও মাগুর মাছের পোনা কিলবিল করছে। রেণু বিক্রেতা ফরিদ উদ্দিন জানালেন, এসব মাছের রেণু উৎপাদন করেন তারা। পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মেলায় অংশ নিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানও। তেমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ড. মাহবুবুল আলম মিয়া জানান, মাছ নিয়ে বহুবিধ গবেষণা করছেন তারা। একটি গবেষনা তুলে ধরে তিনি বলেন, মলা মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। অন্য যে কোন উৎসের তুলনায় এই মাছে ভিটামিন ‘এ’র পরিমাণ অনেক বেশি। এ কারণে সকলকে বেশি করে মলা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান তিনি। এস্যাপ হেলদি ফুড লিমিটেড নামের একটি স্টলে চোখের সামনে সামুদ্রিক মাছ ভাজা হচ্ছে। সুস্বাধু খাবার তৈরি করছে। খাওয়ানো হচ্ছে দর্শনার্থীদের। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সামুদ্রিক মাছ কেটে রান্নার প্রস্তুত করে বিক্রি করেন। দাম একটু বেশি হলেও, মানে ভাল বলে জানান স্টলের কর্মীরা। সব মিলিয়ে ঘুরে দেখার মতো একটি মেলা। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।
×