ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হলি আর্টিজান মামলার আসামি রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য

ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গী ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঘটনার ছক ছিল

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২১ জুলাই ২০১৯

 ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গী ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঘটনার ছক ছিল

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশের কারাগারগুলোতে আটক আছে সহস্রাধিক জঙ্গী। এর মধ্যে আছে ভয়ঙ্কর ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির সুইসাইড স্কোয়াডের জঙ্গীও। এই ধরনের জঙ্গীদের বিচারের জন্য জঙ্গীদের প্রিজনভ্যানে আদালতে আনা-নেয়ার বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। গ্রেফতার হওয়া অনেকেই বছরের পর বছর ধরে কারাগারে আটক আছে। কারাগারে বসেই জঙ্গীরা একে অপরের সঙ্গে শলাপরামর্শ ও বাইরে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এতে যে কোন সময়ে জঙ্গী ছিনিয়ে নেয়ার মতো নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে গুলশানের হলি আর্টিজান মামলার আসামি মামুনুর রশিদ রিপন। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে যেভাবে জঙ্গী ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে, ঠিক একই কায়দায় আরও জঙ্গী ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীরা। এমনকি গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটিয়ে দেশ-বিদেশে যেভাবে আলোড়ন তুলে আলোচনায় এসেছিল, ঠিক তেমনিভাবে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার আটক জঙ্গীদের কারাগারে আনা-নেয়ার সময়ে ছিনিয়ে নিয়ে আবারও দেশ-বিদেশে আলোচনায় এসে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে জঙ্গীগোষ্ঠী। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামিদের কারাগার থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও করেছিল জঙ্গী সংগঠন জেএমবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রিপন নামের যেই জঙ্গী আদালতে আনা-নেয়ার সময়ে আটক জঙ্গীদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করার জবানবন্দী দিয়েছে সে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা জেএমবির আমির শায়খ আব্দুর রহমানের মেয়ের জামাই আওয়ালের ভাগ্নে। এ জন্য রিপন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে জঙ্গী সংগঠনটিতে। রিপনের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। সে ঢাকার মিরপুর, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও নওগাঁর বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। ২০০৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদ্রাসাতুল দারুল হাদিস থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে সে। এরপর বগুড়ার একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চাকরি নেয়। ২০১৩ সালে ডাঃ নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে জেএমবির শীর্ষ ও নেতৃত্ব প্রদানকারীদের অন্যতম এবং একাংশের আমির। জেএমবির এই অংশের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে রিপন। গুলশান হলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে ভারতে আত্মগোপনে চলে যায় রিপন। সে জেএমবিকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করে। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ফের বাংলাদেশে আসে। সম্প্রতি তারা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। গুলশান হলি আর্টিজান হামলার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার বিষয়ে ২০১৫ সালে গাইবান্ধায় মিটিং করে জঙ্গীরা। এরপর হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনা করে। রিপন হামলার জন্য তিনটি একে টু, একটি পিস্তল সরবরাহ করেছিল। জঙ্গী মারজানের মাধ্যমে সরোয়ার জাহানকে এসব পাঠায় রিপন। গুলশান হলি আর্টিজান হামলার আগের দিন বারিধারায় মিটিং করেছিল জঙ্গীরা। এই দুর্ধর্ষ জঙ্গী সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী ও পরিকল্পনাকারী গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের আদালতে আনা-নেয়ার সময়ে ত্রিশালে জঙ্গী ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনার কথা জানায়।
×