ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গার্মেন্টসে দক্ষ শ্রমিক

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ২২ জুলাই ২০১৯

 গার্মেন্টসে দক্ষ শ্রমিক

যে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্যই চাই দক্ষ কর্মীদল। শ্রমিকরা হলেন উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি। তাই মানসম্পন্ন গতিশীল উৎপাদনের জন্য চাই মানসম্পন্ন এবং গতিশীল শ্রমশক্তি। আর সেজন্য দক্ষতার কোন বিকল্প হতে পারে না। দক্ষতা অর্জনের বিষয়। সেজন্য প্রশিক্ষণ ও অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য এই দক্ষতা কত জরুরী সেটি সংশ্লিষ্ট মহল ভালই জানেন। আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে ৪০-৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকদের অধিকাংশই অদক্ষ। এসিডির জরিপ বলছে, পোশাক শিল্পের সাতটি গ্রেডের চারটিতেই কাজ করছেন আধা ও অদক্ষ শ্রমিক। এছাড়া বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ লাখ ২৭ হাজার ৪৬৩ জনে। ওই সময় আরও ২১ লাখ শ্রমিককে নতুন করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিকে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। অদক্ষ শ্রমিকের ভিড়ে দেশের শীর্ষ এ রফতানি খাতের প্রবৃদ্ধি এখন কিছুটা সঙ্কটের মুখে আছে। কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে বাড়ছে নানামুখী সঙ্কট। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি দেয়ার পন্থাই হতে পারে অগ্রযাত্রার পূর্বশর্ত। তাই প্রশিক্ষণ দিয়ে পোশাক খাতে ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিকের চাকরি দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ নিয়েছে সরকার। সেই প্রশিক্ষণ কর্মসূচী কিভাবে পরিচালনা করা হবে তা নির্ধারণে আট সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আশার কথা হলো, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে ইতোমধ্যেই কাজ করে চলেছে ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর বাংলাদেশ এ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিজ’Ñসিবাই। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে অধিকতর মূল্য সংযোজনের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিবাই উদ্বোধন করেন। তবে ২০১৬ সালের জুলাইতে ঢাকার আশুলিয়ায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এই সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৭৬৩ শ্রমিক বিভিন্ন কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া ইউসেপ, মুসলিম এইড এবং বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত দশটি পোশাক কারখানায় এন্টারপ্রাইজ বেইজড ট্রেনিং বা ইবিটি সেন্টার স্থাপন করেছে সিবাই। এটা অনস্বীকার্য যে, সরকারের পাশাপাশি পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতের কথা ভেবে শ্রমিকদের দক্ষ করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিলে সেটি দেশের জন্য একটি বড় কাজ হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে পোশাক খাতে বিদেশী দক্ষ কর্মকর্তারা উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন। সেই জায়গায় বাংলাদেশীরা সেভাবে প্রবেশ করতে পারছে না শুধু দক্ষতার অভাবে। তাই আগামীতে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলার পাশাপাশি দক্ষ কর্মকর্তাও তৈরি করা দরকার। সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন। এই সরকার শ্রমবান্ধব সরকার, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছেন বর্তমান সরকারের কাছ থেকে। সরকারকে উভয়পক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দিক বিবেচনা করেই অগ্রসর হতে হয়। সেক্ষেত্রে জনকল্যাণ চিন্তা সব সময়ই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। সরকার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করেছে। এখন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করে তাদের চাকরি প্রদানের পরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটি সর্বতোভাবে সফল হোক সেটিই প্রত্যাশা।
×