ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ জাহাজ আটকের ভিডিও

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২২ জুলাই ২০১৯

ব্রিটিশ জাহাজ আটকের ভিডিও

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী উপসাগর থেকে ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ ‘স্টেনা ইমপেরো’ আটকের ঘটনার একটি ভিডিও শনিবার অনলাইনে পোস্ট করেছে। এতে কয়েকটি ইরানী স্পিডবোটের পাশে স্টেনা ইমপেরোকে চলতে দেখা যায়। ফুটেজে নৌযানটির নামও স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হয়। ওপরে থাকা একটি হেলিকপ্টার থেকে স্কি মাস্ক পরিহিত সৈন্যদের ওই ট্যাঙ্কারের ডেকের দিকে বন্দুক ধরে রাখার দৃশ্যও ভিডিও দেখা যায়। এদিকে ট্যাঙ্কার জব্দের ঘটনায় যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইরানী রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্রিটেন। আটক ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ ‘স্টেনা ইমপেরো’ ছেড়ে দিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য শনিবার ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটেন জানায়, ওমানের জলসীমা থেকে ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ আটক ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’ কৌশল। জার্মানী ও ফ্রান্স ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ ছেড়ে দেয়ার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আর জাহাজ আটকের ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নেয়ায় আটক জাহাজ ছেড়ে দেয়ার ইউরোপীয় আহ্বানকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। হরমুজ প্রণালী থেকে ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ আটক করার বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটেনের স্থায়ী প্রতিনিধি ক্যারেন পিয়ের্স। তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে লেখা এক চিঠিতে ইরানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে দাবি করেন, ইরানী সৈন্যরা ওমানের জলসীমা থেকে ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজটি আটক করে। আইনী প্রক্রিয়ায় তেলবাহী জাহাজ ছাড়িয়ে নিতে ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের কারণে হরমুজ প্রণালী থেকে তেলবাহী জাহাজ আটকের বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। এ সময় জারিফ তেলবাহী জাহাজ ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য ব্রিটেনকে আইনী প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান। ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি শুক্রবার হরমুজ প্রণালী দিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার সময় ব্রিটিশ পতাকাবাহী তেল ট্যাঙ্কার ‘স্টেনা ইমপেরো’ আটক করে। এর আগে গত ৪ জুলাই ব্রিটিশ নৌবাহিনী জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে ২১ লাখ ব্যারেল তেলবাহী ইরানের একটি সুপার ট্যাঙ্কার আটক করে। সিরিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অজুহাতে ইরানের তেল ট্যাঙ্কারটি আটক করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতেই ব্রিটিশ সরকার এ অন্যায় কাজ করে। ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের সঙ্গে কথা বলার পর এবং যুক্তরাজ্যের জরুরী কমিটির বৈঠকের পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ‘এটাকে তারা ইটের বদলে পাটকেলের মতো পরিস্থিতি হিসেবে দেখছেন।’ হান্ট বলেন, যেখানে ইরানের তেলবাহী জাহাজ ‘গ্রেস ওয়ান’কে বৈধভাবে আটক করা হয়েছে, সেখানে সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ওমানের জলসীমা থেকে ব্রিটিশ জাহাজ ‘স্টেনা ইমপেরো’কে আটক করা হয়েছে। এরপর সেটিকে জোর করে ইরানের দিকে নেয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ব্রিটিশ তেল ট্যাঙ্কারের আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি চেপে গিয়ে জাতিসংঘকে লেখা চিঠিতে পিয়ের্স দাবি করেন, ইরানের মাছধরা নৌকার সঙ্গে তেলবাহী জাহাজ ‘স্টেনা ইমপেরো’র ধাক্কা লাগার কোন প্রমাণ নেই এবং বেআইনীভাবে ট্যাঙ্কারটি আটক করেছে তেহরান। একই সঙ্গে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, লন্ডন কূটনৈতিক উপায়ে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা চিঠিটির একটি কপি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছেও হস্তান্তর করা হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টকে বলেন, ‘আপনারা সমুদ্রে জাহাজ চলাচল বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করে আমাদের তেল ট্যাঙ্কার আটক করলেও আমরা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই আপনাদের ট্যাঙ্কার জব্দ করেছি। আপনাদের তেল ট্যাঙ্কারটি আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল আইন লঙ্ঘন করেছিল। কাজেই এখন ট্যাঙ্কার ছাড়িয়ে নিতে তেহরানের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে আইনী প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হোন।’ ভেনিজুয়েলা সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ কারাকাস থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টের সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে যুক্ত হন। এ সময় জেরেমি হান্ট তেল ট্যাঙ্কার আটক নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ এক টুইটে বলেন, ‘একমাত্র ইরানই পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই বেরিয়ে আসা উচিত।’ শনিবার রাতে ন্যাটোর মুখপাত্র ইরানের পদক্ষেপকে নিন্দা জানান। তিনি জাহাজ আটককে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের প্রতি চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ইরানের অবৈধ কর্মকান্ডে উদ্বিগ্ন ন্যাটো।-এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান
×