সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা ॥ গলাকাটা বা ছেলেধরা আতঙ্কে অপ্রকৃতিস্থ, ভবঘুরে, প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক এবং ছিন্নমূল মানুষদের জীবন সঙ্গিন হয়ে পড়েছে। নিতান্ত সন্দেহের বশে মানুষ তাদের ওপর নৃশংসভাবে হামলে পড়ছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গণপিটুনি দিচ্ছে। পুলিশে দিচ্ছে। এসব কারণে জনমনে ভয়-ভীতি ক্রমশ বাড়ছে। এদিকে আতঙ্ক ও গুজব নিরসনে পুলিশ বিভাগ রীতিমতো গলদঘর্ম হয়ে পড়েছে। তারা পাড়া-মহল্লায়, গ্রাম-গঞ্জে ও হাটবাজারে গিয়ে দিনরাত প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই গুজব কাটছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতি কমে গেছে।
জানা গেছে, নেত্রকোনা সদর, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও আটপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিনে ছেলেধরা সন্দেহে ১৫-১৬ জন ভবঘুরে প্রকৃতির মানুষকে আটক করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই জনতার হাতে আটক হয়। উত্তেজিত জনতা এদের অনেককে বেধড়ক গণপিটুনি দিয়েছে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, আটককৃতদের প্রায় সবাই মানসিক প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে, ভিক্ষুক বা ছিন্নমূল। পুলিশী অনুসন্ধানে এদের কারও বিরুদ্ধে গলাকাটার বা ছেলেধরার মতো অপরাধের প্রমাণ মিলেনি। কেউ কেউ নিজের নাম-ঠিকানা পর্যন্ত বলতে পারে না। আদালতের নির্দেশে এদের সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে নিরাপদ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, কোথায়ও ছেলেধরার খবর পেলেই মানুষ সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট না জেনেই অনেকে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন।
ফলে গুজবের ডালপালা আরও বাড়ছে। এসব কারণে অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে স্কুলে যাচ্ছে না। জানা গেছে, জেলা পুলিশ বিভাগ গলাকাটা বা ছেলেধরা আতঙ্ক নিরসনে ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, মসজিদে, পাড়া-মহল্লায় এবং গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে গিয়ে পথসভা করছেন। তারা গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং কাউকে দেখে সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেয়ার অনুরোধ করছেন। এদিকে জেলা পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী প্রেসব্রিফিং করে এবং ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্দেহের বশে কাউকে মারপিট করাও ফৌজদারি অপরাধ। এ কারণে আইনের চোখে যে কেউ অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হতে পারেন। তাই কাউকে দেখে সন্দেহ হলে তাকে পুলিশে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে’- কথাটি সম্পূর্ণরূপে একটি গুজব। এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধেী কাজের শামিল।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: