ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকার্স সভায় এমডিদের দাবি

৯ শতাংশ ঋণের সুদে ৬ শতাংশ আমানত চান ব্যাংকাররা

প্রকাশিত: ০৯:১২, ২২ জুলাই ২০১৯

৯ শতাংশ ঋণের সুদে ৬ শতাংশ আমানত চান ব্যাংকাররা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকের মালিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুদ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেননি। বছরজুড়ে নানা অজুহাত দেখিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। সম্প্রতি সরকারী সংস্থার আমানত পেতে হলে নয়-ছয় কার্যকর বাধ্যতামূলক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন ব্যাংকের এমডিরা দাবি করেছেন ৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে হলে তার আগে ৬ শতাংশে আমানত প্রয়োজন। রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকের এমডিরা এই দাবি তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক সব ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, প্রতি তিনমাস পর পর ব্যাংকার্স সভায় অনুষ্ঠিত হয়। রবিবারের সভায় আলোচ্যসূচীর মধ্যে ছিল সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা, শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের মনিটরিং ও আদায় কার্যক্রম, অবলোপন নীতিমালা পর্যালোচনা, এসএমই খাতে ঋণ প্রদান। বিবিধ বিষয় হিসেবে ঋণ সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার নির্ধারণ নিয়ে পর্যালোচনা হয়। গত বছরের জুলাই থেকে ব্যাংকের মালিকরা ঋণ সর্বোচ্চ ৯ এবং আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ (নয়-ছয়) কার্যকরের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন ব্যাংকের মালিকরা। এজন্য নীতিগত অন্তত চারটি সুবিধা হাতিয়ে নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) কমানো, রেপো রেট কমানো ও মেয়াদ বৃদ্ধি, সরকারী আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে রাখা এবং মুনাফার ওপর কর কমানো। এরপর বিভিন্ন ব্যাংক বোর্ড সভা করে নয়-ছয় সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সরকারী ব্যাংক ছাড়া আর কোন ব্যাংকই এটি কার্যকর করেনি। বরং তারল্য সঙ্কটের অজুহাতে চলতি বছরের শুরু থেকে আমানত ও ঋণের বিপরীতে সুদহার ক্রমশ বাড়ছে। এদিকে ৬ শতাংশ সুদে সরকারী সংস্থার আমানত পেতে হলে ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর বাধ্যতামূলক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যেসব ব্যাংক সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করেনি সে সব ব্যাংকে সরকারী আমানত না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এসব ব্যাংকের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকের এমডিরা জানান, বিভিন্ন কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ৬ শতাংশ সুদে আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সরকারী সংস্থার আমানতও পাওয়া যাচ্ছে না। ৬ শতাংশ সুদে আমানত না পেলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান এমডিরা। সভা শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের মালিকরাই সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারাই পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনবেন। তবে এখনই কমানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরকারী সব ব্যাংক এবং দুয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক নয়-ছয় সুদহার কার্যকর করেছে। তবে সুদহার কার্যকরের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে চাপ সৃষ্টি করবে না। ব্যাংকগুলো বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তা করবেন। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণ অনেক বেশি। এর কারণ জানতে চাওয়া হয়। ব্যাংকগুলো জানিয়েছে জুনে তাদের খেলাপী ঋণ কমে গেছে। তবে খেলাপী ঋণ যেন ১০ শতাংশের নিচে থাকে সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া শীর্ষ খেলাপী ও ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায় বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সুদহার কমানোর জন্য ব্যাংকগুলো চেষ্টা করছে। পর্যায়ক্রমে তা কমিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে তারল্য সঙ্কট অনেকটাই কেটে গেছে। রেমিটেন্স ও রফতানি আয় বেড়েছে। ফলে ডলার কিনতে হচ্ছে না। সঞ্চয়পত্র কেনায় কঠোরতা আনা হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়বে।
×