ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১১১২ গ্র্যাজুয়েটের হাতে সনদ

চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ভার্সিটির বর্ণাঢ্য দ্বিতীয় সমাবর্তন

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২২ জুলাই ২০১৯

চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ভার্সিটির বর্ণাঢ্য দ্বিতীয় সমাবর্তন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে সম্পন্ন হয়েছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় সমাবর্তন। মহানগরীর টাইগারপাস এলাকায় নেভি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত আনন্দঘন এ অনুষ্ঠানে সনদ গ্রহণ করেন সহস্রাধিক গ্রাজুয়েট। সমাবর্তনে অতিথি হিসেবে বক্তব্যে আলোচকরা শিক্ষা জীবনে আহরিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে আপনারাই অন্যকে চাকরি দিন। তাহলেই এদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাকে আজ পর্যন্ত শিক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন উপাচার্য বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারী সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে বেসরকারী পর্যায়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। এরমধ্যে জ্ঞান সৃজনে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু উদ্যোগী তা দেখার সময় এসেছে। উচ্চশিক্ষার বিকাশে বর্তমান সরকারের ভূমিকার উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ করেছেন। ফলে আগে যেভাবে ব্যক্তি মালিকানায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠছিল তা বন্ধ রয়েছে। একটি গতানুগতিক শিক্ষা খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে আসছিল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো। কিন্তু এই আইন করার ফলে এখন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোর্ড অব ট্রাস্টির অধীনে ইউনিভার্সিটি পরিচালিত হচ্ছে। এতে করে এই ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সামগ্রিকভাবে উচ্চ শিক্ষার হার উপকৃত হয়েছে। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালে দুটি খাতের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। খাত দুটি হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। তার চেষ্টায় অনেক প্রাইমারি স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ হয়েছে। সর্বশেষ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন শেষ করে বেরিয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষা খাতে বেসরকারী অবদানের উল্লেখ করতে গিয়ে ড. অনুপম সেন বলেন, বিখ্যাত ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড এবং হার্ভাডের মতো ইউনিভার্সিটিগুলোও ছিল বেসরকারী। শুরুই হয়েছিল বেসরকারী ইউনিভার্সিটি দিয়ে। পরে সরকারীভাবেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশরা বাংলাদেশে তিনটি সরকারী ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। বর্তমানে দেশে সরকারী-বেসরকারী মিলে ১শ’টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ শুধুমাত্র ডিগ্রী প্রদান নয়। জ্ঞান সৃষ্টির জন্য গবেষণা করা অন্যতম কাজ। সে জন্য সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও গবেষণার সুযোগ করে দিতে হবে। তিনি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যলয়েও এমফিল ও পিএইচডি গবেষণার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ ডিগ্রী অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, গ্রাজুয়েট হয়ে আপনারা অন্যের অধীনে চাকরি না করে উদ্যোক্তা হোন। এতে করে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আপনারা নিজেরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন। চাকরি না করে চাকরি দিন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়াতে হলে প্রয়োজন বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান। দেশ অর্থনীতিতে মজবুত হলে দেশের ভীত শক্ত হবে। বক্তব্যে তিনি প্রচলিত শিক্ষার বদলে কারিগরি শিক্ষার দিকে মনোযোগী হওয়ার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য দরকার বাস্তবমুখী শিক্ষা। দক্ষ জনশক্তিই পারে বেকারত্ব দূর করতে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। সমাবর্তনে ১ হাজার ১১২ জনের হাতে গ্রাজুয়েট সনদ তুলে দেয়া হয়।
×