ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমতলীতে যৌতুকের জন্য অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে মারধর

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৩ জুলাই ২০১৯

 আমতলীতে যৌতুকের জন্য অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে মারধর

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ২২ জুলাই ॥ যৌতুকের জন্য সাত মাসের অন্তঃসত্ত্ব¡া গৃহবধূ ঝর্না আক্তারকে স্বামী কুদ্দুস মাদবর অমানুষিক নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত গৃহবধূকে রবিবার সন্ধ্যায় স্বজনরা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গোজখালী গ্রামে। জানা গেছে, আমতলী উপজেলার পূর্ব কুকুয়া গ্রামের হামেদ প্যাদার কন্যা ঝর্না আকতার। ছোট বয়সে ঝর্না বাবা হামিদ প্যাদা ও মা হাসিনুর বেগমকে হারিয়ে এতিম হয়। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে চাচাত ভাই খবির প্যাদা তার দেখভাল করেন। ২০১৫ সালে ঝর্নাকে পার্শ্ববর্তী গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোজখালী গ্রামের মোঃ জব্বার মাদবরের ছেলে কুদ্দুস মাদবরের সঙ্গে বিয়ে দেয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দেয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। শ্বশুর ও শাশুড়ির প্ররোচনায় স্বামী কুদ্দুস প্রায়ই তাকে নানা অজুহাতে বেধরক মারধর করে। গত চার বছরে শতাধিকবার মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন ঝর্না আক্তার। বর্তমানে ঝর্না সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অন্তঃসত্ত্বা হলেও স্বামী কুদ্দুস তাকে কোন চিকিৎসা করাচ্ছেন না। গত শনিবার রাতে স্বামী কুদ্দুস স্ত্রী ঝর্নার নিকট চিকিৎসা করানো বাবদ বাবার বাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা এনে দিতে বলে। এতিম ঝর্না এ টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় ওইদিন রাতে তাকে স্বামী প্রথম দফায় মারধর করে। রবিবার সকালে আবারো দ্বিতীয় দফায় বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মারধর করে সোনাখালী গ্রামের নানা আফেজ খানের বাড়িতে টাকা আনতে পাঠিয়ে দেয়। মারধরে ঝর্নার মুখের নিচের ঠোঁট এবং ডান হাতের বাহু ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে রক্তাক্ত জখম হয়। স্বজনরা রবিবার সন্ধ্যায় তাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। খবর পেয়ে রবিবার রাতে পুলিশ আমতলী হাসপাতালে গিয়ে আহত ঝর্নার খোঁজখবর নেন। আহত ঝর্না কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মোর দুঃখ দ্যাহার কেউ নাই। ছোডকালে মা-বাবা মইর‌্যা গ্যাছে। চাচাত ভাই পাইল্যা বিয়া দ্যাছে। এ্যাহোন শাশুড়ি ও শ্বশুরের কুপরামর্শে স্বামী মারধর করে। বিয়ার চার বচ্ছরে শতাধিকবার মারছে। এটটু আলে গোনে কলে গ্যালাই মোরে মারে। মোর প্যাডে ৭ মাসের বাচ্চা, মোরে কোন ডাক্তার দ্যাহায় না। মোরে এ্যাহোন চাচাত ভাইডে গোনে টাহা আইন্ন্যা দেতে কয়। মুই কিভাবে টাহা আইন্ন্যা দিমু। টাহা আইন্ন্যা দেতে রাজি না অওয়ায় মোরে মারছে। মুই এ্যাইয়্যার বিচার চাই। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মিঠুন সরকার বলেন, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা আহত ঝর্নার মুখের নিচের ঠোঁট, ডান হাতের বাহু ও হাঁটুর নিচে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
×