ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কপারটেকের তালিকাভুক্তি কোন্ পথে

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৩ জুলাই ২০১৯

 কপারটেকের তালিকাভুক্তি কোন্ পথে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানাপোড়েন শেষে প্রধান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেলেও ঠিক কোন পথে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের লেনদেন শুরু হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আইন অনুযায়ী কোম্পানিটির তালিকাভুক্তি ও লেনদেন শুরুর দিন পেরিয়ে গেছে। আর্থিক হিসাবে ‘গরমিল’ করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করায় কোম্পানিটির তালিকাভুক্তি আটকে দিয়েছিল ডিএসই। তবে নানামুখী ‘চাপে’ পিছু হটছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে (ম্যানেজমেন্ট) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এমন উদ্যোগ নেয়া হলেও ডিএসইর তালিকাভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির যোগ্যতা নেই। ডিএসই’র তালিকাভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী, কোন কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করলে ওই কোম্পানির আইপিও সাবস্ক্রিপশন (আইপিও আবেদন গ্রহণ) শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে হবে। আর ৭৫ দিনের মধ্যে লেনদেন শুরু করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গতবছরের ডিসেম্বরে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে দুই কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয়। বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত আইপিও আবেদন গ্রহণ করে কোম্পানিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইপিও আবেদন গ্রহণের ফলে চলতি বছরের ২৬ মে’র মধ্যে কোম্পানিটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু ডিএসই পর্ষদ অনুমোদন না দেয়ায় কোম্পানিটির তালিকাভুক্তি আটকে যায়। এরপর ডিএসই’র পর্ষদ কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির জন্য ২৩ জুন পর্যন্ত সময় দিয়ে বিএসইসির কাছে দিকনির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেয়। তবে বিএসইসি ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোন দিকনির্দেশনা বা পরামর্শ দেয়া থেকে বিরত থাকে। বিএসইসি নীরব থাকলেও কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখতে উদ্যোগ নেয় ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। ফলে ডিএসই’র পর্ষদ কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্ত না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। এর মধ্যেই ২৩ জুন চলে যাওয়ায় নিয়মতান্ত্রিক তালিকাভুক্তির যোগ্যতা হারিয়েছে কোম্পানিটি। তবে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়মতান্ত্রিকভবে তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা হারানোর পর হঠাৎ করেই পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই পর্ষদ। হঠাৎ তালিকাভুক্তির বিষয়ে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য বলেন, নানামুখী চাপে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্তির পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। কোথা থেকে, কীভাবে এসব চাপ আসছে তা আপনিও জানেন, আমিও জানি। কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই। যোগাযোগ করা হলে ডিএসই’র পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান বলেন, কপারটেক তালিকাভুক্তির বিষয়ে ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত না করলে কী লাভ হবে? তালিকাভুক্ত হলে বাজারে কিছু টাকা আসবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে পর্ষদ সভার মাধ্যমে কপারটেকের তালিকাভুক্তির পদক্ষেপ নিতে ম্যানেজমেন্টকে বলা হয়েছে। তবে ডিএসই’র অপর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ২৬ মে ও ২৩ জুন পার হওয়ার পর তালিকাভুক্তির জন্য আইনগত কোন সমস্যা আছে কি-না, তা দেখতে ম্যানেজমেন্টকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন আইনগত বিষয়টি ম্যানেজমেন্ট দেখবে। তিনি আরও বলেন, কপরাটেক নিয়ে যা হয়েছে তা পুঁজিবাজারের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর এবং এ জাতীয় ইস্যু আমাদের জন্য নতুন। আমরা চাই, এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে যাতে আর না হয়। বিএসইসি’র অনুমোদন নিয়ে আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিটিকে আইপিওতে আনতে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছে এমটিবি ক্যাপিটাল। আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করে আহমেদ এ্যান্ড আক্তার। বিএসইসি’র অনুমোদন নিয়ে আইপিও আবেদন গ্রহণের পর তালিকাভুক্তির জন্য ডিএসইতে আবেদন করে কোম্পানিটি। তবে আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠায় ডিএসই থেকে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের তালিকাভুক্ত আটকে দেয়া হয়। পাশাপাশি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) অভিযোগ করা হয়। কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখতে এফআরসি থেকে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)-কে দায়িত্ব দেয়া হয়। এর ভিত্তিতে আইসিএবি তদন্তে নামলে তাতে অসহযোগিতা করে কপারটেকের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ এ্যান্ড আক্তার। ফলে প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইসিএবি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি।
×