ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছেলেধরার গুজব

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৩ জুলাই ২০১৯

 ছেলেধরার গুজব

বেশ কিছুদিন ধরে পদ্মা সেতু নিয়ে যে বিপজ্জনক গুজব ছড়িয়ে পড়ে তাতে অনেক অসহায়, নিরীহ ব্যক্তি শুধু নির্যাতনই নয়, খুনের মতো ভয়ঙ্কর বিপর্যয়েরও শিকার হয়। পদ্মা সেতু তৈরির শেষ পর্যায়ে মানুষের মাথা লাগবে এমন রটনা ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চার বেলায় এমন গুজব মায়েদের যেভাবে ভীতসন্ত্রস্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় তা সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসে। ফলে মানুষের প্রতি বিশ্বাস নামক ব্যাপারটি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যে কারণে কারোর মধ্যে কথাবার্তায় সামান্য অসঙ্গতি পাওয়া গেলেই তাকে ছেলেধরা অপবাদ দিয়ে গণপিটুনিতে নাজেহাল ও ক্ষতবিক্ষত করাই শুধু নয়, একেবারে প্রাণে মেরে ফেলার মতো অঘটনও ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে এমন হত্যাকান্ড ফৌজদারি অপরাধ। গত শনিবার রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তসলিমা বেগম নামের এক নারী মেয়ের ভর্তির ব্যাপারে জানতে গেলে তাকে ছেলেধরা বলে সন্দেহ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে চুলের মুঠি ধরে তাকে নির্যাতন করে কয়েক ব্যক্তি। ভদ্রমহিলার মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ শুরু হলেও তিনি শেষ অবধি রেহাই পাননি। অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। লাঠির পিটুনিতে তিনি শেষ অবধি খুন হন। এছাড়াও ছেলেধরা সন্দেহে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে আশপাশের কয়েকজন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও এমন দুর্ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমের খোরাক হয়েছে। ছেলেধরা সন্দেহে নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তিকে কোন সত্যতা যাচাই ছাড়াই মারধর করা আইনকানুনের প্রতি চরম অবজ্ঞাই নির্দেশ করে। পুলিশ বলছে অকারণে গুজব রটনা এবং নিরপরাধীকে নির্মমভাবে হত্যা করা আইন ও বিধি পরিপন্থী। সংঘটিত নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের ব্যাপারে পুলিশী তদন্ত চলছে। অপরাধী শনাক্ত হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। একাধিক গ্রেফতারের খবরও আছে। এ পর্যন্ত যাদের ওপর অত্যাচার চালানো কিংবা নিপীড়নের মাধ্যমে হত্যা করা হয় তাদের অপরাধী বলে শনাক্ত করা যায়নি। ভুক্তভোগীদের মধ্যে চারজনই মানসিক প্রতিবন্ধী। পদ্মা সেতুর কারণে গলাকাটা মাথা লাগবে এমন গুজবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোরালোভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। নিছক সন্দেহের বশে এমন সব নিরীহ ও অসহায় মানুষের ওপর অমানবিক নৃংশসতা কোনভাবেই কাম্য নয়। অপরাধের শাস্তি দেয়ার আগেই অপরাধীর কর্মবিধি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা নিয়ম। অন্যায় এবং জবরদস্তির মনোবিকৃতি নিয়ে অন্যের ওপর পাশবিক হামলা আইন ও বিধি মোতাবেক মোটেও কাম্য নয়। যথার্থ অপরাধী শনাক্ত না করা পর্যন্ত কাউকেই আটক কিংবা হত্যার পর্যায়ে নেয়া আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থী। আর যিনি এমন অনৈতিক, অসঙ্গত কাজ করবেন তিনিও শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন না।
×