ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি মামলার অভিযুক্তরা সাসপেন্ড হচ্ছেন

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৩ জুলাই ২০১৯

 বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি মামলার অভিযুক্তরা সাসপেন্ড হচ্ছেন

রশিদ মামুন ॥ বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি মামলার অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আর কাজে যোগ দিতে পারবেন না। রবিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলার চার্জশীট অনুমোদনের পর সোমবার তা আদালতে দাখিল করেছে দুদক। এ বিষয়ে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জনকণ্ঠকে বলেন, আইনে যেভাবে আছে সেইভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না। যেসব জায়গাতে শূন্যতা তৈরি হবে সেখানে নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কোন কোন জায়গাতে এখনই লোক চলে গেলে কাজে কিছুটা সমস্যা হবে বলে মনে করেন তিনি। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক চলে যাওয়াতে এলএনজি আমদানির বিষয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে। এজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে সোমবারই আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বড়পুকুরিয়া খনি কোম্পানির প্রায় সকল শীর্ষ ব্যক্তিকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। ওই কোম্পানিটি কিভাবে চলবে তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানির সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মধ্যে তিন জন অবসরে গেছেন। বাকি চারজনের মধ্যে একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একজনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। একজন একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। আর অন্যজন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী এ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আইন অনুযায়ী যারা চাকরিতে রয়েছেন তাদের সকলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হবে। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেউ আর স্বপদে যোগ দিতে পারবেন না। দুদক অভিযোগপত্রে জানায়, ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ৮৪ পয়সা। এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৪ জুলাই পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলার দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করল দুদক। যদিও কয়লা চুরির অভিযোগ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি কয়লাকে সিস্টেম লস হিসেবে গণ্য করেছে খনিকর্তৃপক্ষ। মামলার তদন্ত চলতে থাকার পরও গত বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) চুরি যাওয়া কয়লাকে সিস্টেম লস দেখিয়ে কোম্পানির বোর্ডে প্রস্তাব পাস করিয়ে নেয় খনি কর্তৃপক্ষ। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ও প্রভাবশালী এইসব ব্যক্তিকে রক্ষায় তৎপর ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তদন্ত চলতে থাকা বিষয়টি এজিএম এবং কোম্পানির বোর্ডে অনুমোদনের আগে অবশ্যই জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। সরকারী কোম্পানির এরকম আলোচিত দুর্নীতির বিষয়ে জ্বালনি বিভাগ কিভাবে সায় দিল বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। তাহলে কারা কয়লা চোর সিন্ডিকেটকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে তা বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন তিনি। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রসাশন) মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা পত্রপত্রিকায় বিষয়টি দেখেছি। আমাদের কাছে অভিযোগপত্রটি আসলে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। যেহেতু বড়পুকুরিয়া একটি পৃথক কোম্পানি তাই বড়পুকুরিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তারা নিজেরা। অন্যদিকে পেট্রোবাংলায় যারা রয়েছেন তাদের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, চাকরি বিধি অনুযায়ী আদালত চার্জশীট গ্রহণ করলে কর্মরতদের আমরা সাময়িক বরখাস্ত করব। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, অভিযুক্ত সাতজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ আব্দুল আজিজ খান। এছাড়া রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী কামরুজ্জামান। এর বাইরে প্রকৌশলী এস এম নুরুল আওরঙ্গজেবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। খনির কয়লা চুরির ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ার সময় দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহাম্মদকে ঘটনার পরপর সাময়িক বরখাস্ত করে পেট্রোবাংলা। এর বাইরে অবসরে যাওয়া তিন জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন, মোঃ মাহবুবুর রহমান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, মোঃ আমিনুজ্জামান। এছাড়াও চার্জশীটে নাম আসা সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোঃ শরিফুল আলম অবসরে রয়েছেন। এর বাইরে আসামিদের মধ্যে দুজন অন্য কোম্পানিতে বদলি হয়ে গেছেন। এরমধ্যে সব থেকে আলোচিত ছিলেন আবুল কাশেম প্রধানীয়া। খনি দুর্নীতির অভিযুক্ত হিসেবে তার নাম আসে। ওই সময় যাদেরই নাম আসে তাদের বেশিরভাগকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু বড়পুকুরিয়াতে কোম্পানি সচিবের দায়িত্বে থাকা কাসেম প্রধানীয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে বদলি করা হয়। এছাড়া ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে বদলি হয়ে গেছেন। এছাড়া উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ জোবায়ের আলী, ব্যবস্থাপক মোঃ আরিফুর রহমান, সৈয়দ ইমান হাসান, উপ-ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, মোঃ মোর্শেদুজ্জামান, মোঃ হাবিবুর রহমান, মোঃ জাহেদুর রহমান, সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ, মোঃ শোয়েবুর রহমান, অশোক কুমার হালদার, সহাকারী ব্যবস্থাপক মোঃ মনিরুজ্জামান বড়পুকুরিয়াতে কর্মরত রয়েছেন। তবে উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম খালেদুল ইসলাম এবং আবু তাহের মোঃ নুর-উজ-জামান চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত বছর মাঝামাঝি সময়ে বড়পুকুরিয়া শিফট পরিবর্তনের জন্য খনির উত্তোলন বন্ধ রাখতে হয়। ওই সময় বড়পুকুরিয়া খনির কোম্পানির তরফ থেকে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রকে জানানো হয় তাদের কাছে দেড় লাখ টন কয়লার মজুদ রয়েছে। কিন্তু কয়লার অভাবে কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর ফাঁস হয়ে যায় কয়লা কেলেঙ্কারি। তখন দেখা যায় খাতা কলমে দেড় লাখ টন কয়লা থাকলেও বাস্তবে কোন কয়লাই নেই। আলোচিত এই ঘটনায় পেট্রোবাংলাও তাদের তদন্তে সকল সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায় রয়েছে বলে জানায়।
×