ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার

ইমাম ইদ্রিসের ধর্ষণ ও বলাৎকারের শিকার ২৫ কিশোর-কিশোরী

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২৩ জুলাই ২০১৯

  ইমাম ইদ্রিসের ধর্ষণ ও  বলাৎকারের শিকার  ২৫ কিশোর-কিশোরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘হুজুরের সেবা কর, বেহেশত পাবি।’ আবেগপ্রবণ এমন কথায় অনেক নারী, কিশোর-কিশোরী মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যেত। হুজুরের কথায় বিশ্বাস করে যারা তাকে সেবা করতে যেত, সুযোগ বুঝে তাদেরকে ধর্ষণ বা বলাৎকার করতেন। রবিবার রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে আটক সেই বহুল আলোচিত ইমাম ইদ্রিস আহম্মেদকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধর্ষণের জন্য নারীদের টার্গেট করতে একটি এনজিও খোলেন ইদ্রিস আহম্মেদ। এই শিক্ষকের কাছে ধর্ষিত হয়েছে অন্তত ২৫ নারী-কিশোর ও কিশোরী। আটকের পর ইমাম ধর্ষণ, বলাৎকার ছাড়াও ওই হুজুর অর্থ আত্মসাতের সঙ্গেও জড়িত বলে জানিয়েছে র‌্যাব । গত রবিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে র‌্যাব-১ ঢাকার দক্ষিণখান থানাধীন সৈয়দনগর থেকে বহুল আলোচিত ইমাম ইদ্রিসকে (৪২) গ্রেফতার করে। সোমবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ সারওয়ার-বিন-কাশেম সাংবাদিকদের জানান, ইদ্রিস আহম্মেদের বাড়ি সিলেটের বিমানবন্দর থানা এলাকায়। তার মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে। হুজুরের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে নারী, কিশোর-কিশোরীকে ধষর্ণের আলামত মিলেছে। এমনকি কোন কোন ধর্ষণ বা বলাৎকারের অনেক ভিডিও ও স্থির ছবিও পাওয়া গেছে। র‌্যাব কর্মকর্তা বলছেন, ইদ্রিস আহম্মেদ সিলেটের একটি মাদ্রাসা থেকে ১৯৯৮ সালে টাইটেল পাস করার পর কোম্পানীগঞ্জের একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। পাশাপাশি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু কবেন তিনি। ২০০২ সালে ঢাকায় এসে দক্ষিণখানের একটি মসজিদে ইমাম হিসেবে চাকরি নেন। প্রায় ১৭ বছর ধরে ওই মসজিদে ইমামতি করছিলেন। ইমামতির পাশাপাশি তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুখ-বিসুখে স্থানীয়দের ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি চিকিৎসা করতেন। প্রচার করতেন তার সঙ্গে জিন আছে। তিনি কর্মস্থলে শিক্ষার্থীদের বলতেন, হুজুরের সেবা কর, বেহেশত পাবি। তার কথা অনেক কিশোর-কিশোরী বিশ্বাস করত। কেউ কেউ হুজুরের কথায় বিশ্বাস করে তার সেবা করতে যেত। আর যারাই যেত তাদেরকে তার রুমে ডেকে নিয়ে নানা ছলছুঁতোয় ধর্ষণ বা বলাৎকার করত হুজুর ইদ্রিস। এসব অপকর্মের পর মোবাইল ফোনে তার ভিডিও করে রাখতেন। ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অনেককে একাধিকবার ধর্ষণ ও বলাৎকার করেছেন। তার দ্বিতীয় কৌশল ছিল ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি চিকিৎসা। যেসব কিশোর ও কিশোরী তার কাছে চিকিৎসার জন্য গেছে, তাদের অধিকাংশই হুজুরের ধর্ষণ বা বলাৎকারের শিকার হয়েছে। এখন পর্যন্ত চার নারীকে ধর্ষণের অকাট্য প্রমাণ মিলেছে। একবার ধর্ষিত বা বলাৎকারের শিকার হওয়া অনেককে আবার তার সঙ্গের জিনের ভয় দেখিয়ে বহুবার অপকর্ম করতেন হুজুর। হুজুর বলতেন, তার কথামত না চললে বা চিকিৎসা না নিলে দুষ্টু জিন তার ক্ষতি করবে, বিশেষ করে ঝাড়ফুঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে বহু নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, তার টার্গেটের তালিকায় অন্যতম ছিল খাদেমরা। যেসব অল্প বয়সী কিশোর খাদেম ছিল, তাদের বেশিরভাগই তার বলাৎকারের শিকার হয়েছে। তার মাদ্রাসা ছাত্রদের তিনি মসজিদে ডেকে নিয়ে বলাৎকার করতেন। আর কৌশলে মোবাইল ফোনে সেসব ভিডিও করে রাখতেন। যেসব কিশোর বলাৎকারের শিকার হয়েছে, তাদের অধিকাংশের বয়স ১২ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। এখন পর্যন্ত তার কাছে নারী-কিশোর-কিশোরী মিলিয়ে অন্তত ২৫ জন ধর্ষণ বা বলাৎকারের শিকার হয়েছে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে জানান, আটক ইমাম নারীদের প্রতি ছিলেন বেশি দুর্বল। সুন্দরী নারীদের টার্গেট করে তাদের ধর্ষণের জন্য তিনি একটি এনজিও খোলেন। ওই এনজিওটিতে টাকা রাখলে দ্বিগুণ লাভ ইত্যাদি নানা প্রলোভন দেখাতেন। এক জায়গায় প্রায় ১৭ বছর ধরে ইমামতি করায় তার প্রতি অনেকেরই এক ধরনের অন্ধ বিশ্বাস জন্মেছিল। অনেক নারী তাদের সঞ্চয়ের টাকা ওই এনজিওতে রাখেন। অন্তত দুই শতাধিক নারীর গচ্ছিত টাকা ছিল এনজিওটিতে। কোন নারীরই জমা আট থেকে দশ হাজার টাকার নিচে ছিল না। কোন কোন নারীর টাকা ছিল আরও বেশি। কয়েক বছরে বহু টাকা জমার পর পুরো টাকা হুজুর আত্মসাত করেন। নারীরা তার কাছে টাকা চাইতে গেলে বলতেন, তিনি তো শুধু এজেন্ট। এনজিওর মূল মালিক চলে গেছেন। তার কাছে কোন টাকা নেই। তিনি শুধু সমিতির হিসেব রাখতেন। পাওনাদার নারীরা তার কাছে গেলে এ বিষয়ে কি করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শের জন্য অবসর সময়ে নারীদের আসতে বলতেন। আর টাকা ফেরত দেয়ার লোভ দেখিয়ে তাদের ধর্ষণ করতেন। কোন কোন নারীর ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সেসব ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অনেককে বার বার ধর্ষণ করতেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আটক ইমাম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপকর্মের দায় স্বীকার করেছেন।
×