ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত হত্যা

মিন্নির জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন খারিজ

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২৩ জুলাই ২০১৯

 মিন্নির জবানবন্দী প্রত্যাহারের  আবেদন  খারিজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা ॥ বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তদন্তে প্রাপ্ত আসামি ও মামলার এক নম্বর সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রত্যাহারের জন্য দাখিলকৃত আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে মিন্নিকে কারা হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নির পক্ষে তার আইনজীবী এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী জবানবন্দী প্রত্যহারের আবেদন খারিজ ও তাকে চিকিৎসার নির্দেশ প্রদান করেন। রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ১৬ জুলাই রাত নয়টার দিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরের দিন তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই ৪৮ ঘণ্টার মাথায় বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৯ জুলাই হাজির করা হয়। এ আদালতের বিচারক মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকার্ড করেন। ওইদিনই রাত সাড়ে সাতটার দিকে মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানিয়েছেন, ২০ জুলাই তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা বরগুনা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেছেন, মিন্নি তাদেরকে জানিয়েছে নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মিন্নি তার উন্নত চিকিৎসার অনুরোধ করেছেন। রবিবার রাতে বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগমের নেতৃত্বে নারী নেত্রীরা এ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলামের সঙ্গে দেখা করে মিন্নির পক্ষে আইনী সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। মিন্নির পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রত্যাহারের জন্য মিন্নির স্বাক্ষর দরকার। যে কারণে তিনি মিন্নিকে আদালতে তলব ও হাসপাতালে নিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা করানোর অনুমতি চেয়ে বিচারকের কাছে আবেদন করেছিলেন। বিচারক তার আবেদন ফেরত দিয়ে আইনের মধ্যদিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেছেন। তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার কারাকর্তৃপক্ষের কাছে মিন্নির মাধ্যমে আবেদন করবেন। রিশান ফরাজীর স্বীকারোক্তি ॥ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি রিশান ফরাজী হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জবানবন্দী শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন-পিপিএম জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১৫ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তারা সবাই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ১৮ জুলাই সকাল ১০টার দিকে রিশান ফরাজীকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেই রিশান ফরাজী আদালতে হাজির করা হয়েছে। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী শেষে রিশান ফরাজীকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ১৫ জন স্বীকারোক্তি দিলেও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার জবানবন্দী প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, মিন্নিকে নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে মিন্নিকে আদালতে তলব করে জবানবন্দী প্রত্যাহার ও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আদালতে আবেদন করেছিলেন। বিচারক জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন নামঞ্জুর করে জেলকোড অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য কারাকর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনও ৪ জন গ্রেফতার হয়নি। তারা হচ্ছেন, মামলার ৫ নম্বর আসামি মুসা, ৭ নম্বর আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, ৮ নম্বর আসামি রায়হান ও ১০ নম্বর আসামি রিফাত হাওলাদার। আগামী ৩১ জুলাই মামলার পুলিশ রিপোর্টের জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে দিবালোকে বরগুনা সরকারী কলেজ গেটের সামনে রিফাত শরীফকে কোপানো হয়েছে। বরিশাল নেয়ার পথে ওইদিন বিকাল চারটার দিকে রিফাত শরীফ মারা যায়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
×