ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

কলকারখানায় উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে নানামুখী উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২৩ জুলাই ২০১৯

 কলকারখানায় উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে নানামুখী উদ্যোগ

ওয়াজেদ হীরা ॥ শিল্পকারখানার স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ না থাকা। এতে অনেক সময় তৈরি হয় শ্রম অসন্তোষ। সেই সঙ্গে কারখানার উৎপাদনে পড়ে বিরূপ প্রভাব। আর শিল্পায়নের এই সময়ে সারাদেশে গড়ে ওঠা কলকারখানার উপর নজরদারিসহ উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। যাতে শ্রমিক অসন্তোষে উৎপাদন ব্যাহত না হয়। আর এসব নজরদারির লক্ষ্যে কাজ করা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরকে (ডিআইএফই) শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় সংস্থাটির কার্যক্রম সম্প্রসারণে নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিল্পকারখানায় দুর্ঘটনা এবং নিরাপত্তা ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৩ জেলায় অধিদফতরের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন ও অনুষঙ্গিক কাজে একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এতে সায় দিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে। এখন বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকা- ও রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের শিল্প খাতে কর্মপরিবেশের মান ও পরিদর্শন কার্যক্রম নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তোলে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই সময় ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের পৃথক জোট এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চাপে পরিদর্শন কাজে গতি আনতে ডিআইএফইকে ঢেলে সাজানো শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে সংস্থাটিকে আরও শক্তিশালী করতে আলোচ্য প্রকল্পটি নেয়া হচ্ছে। ’১৪ সালের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতরকে অধিদফতরে উন্নীত করে জনবল ৩১৪ থেকে বাড়িয়ে ৯৯৩ জন করা হয়। একই সময়ে প্রধান কার্যালয়সহ ২৩ জেলায় সংস্থার নিজস্ব কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে ৯ জেলায় কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এখন ১৩ জেলায় কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। জানা গেছে, ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণ এবং ১৩ জেলা কার্যালয় স্থাপন’ নামে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর আওতায় চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং যশোর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলা সদরে ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কার্যালয়ের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ করা হবে রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এবং ফরিদপুর, কুষ্টিয়া জেলা সদরের পাশাপাশি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৩ জেলার মধ্যে ছয় জেলায় কার্যালয় নির্মাণ করা হবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব জমিতে। বাকি সাত জেলায় নতুন জমি অধিগ্রহণ করে কার্যালয় নির্মিত হবে। ডিআইএফই সূত্র জানায়, ১৩ জেলায় অফিস স্থানান্তরের মাধ্যমে শিল্পের পরিদর্শন কার্যক্রম সহজ করার পাশাপাশি নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২.৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ, বিভিন্ন জেলায় ভবন নির্মাণ, ৩শ’ মোটরসাইকেল ও ৫২ স্কুটি ক্রয় এবং যন্ত্রপাতি ও ১ হাজার ৫৬০ আসবাবপত্র কেনা হবে। প্রকল্প প্রস্তবনা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে অফিস নির্মাণের পাশাপাশি নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য শিল্পঘন এলাকায় বিকেন্দ্রীকরণ কার্যক্রম, ফলপ্রসূ পরিদর্শন জোরদার করা হবে। ডিআইএফইর কর্মকর্তা কর্মচারী, কারখানার মালিক, সেফটি কমিটির সদস্য, শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধিরা প্রশিক্ষণ পাবেন। একই সঙ্গে টেকসই কর্মপরিবেশের জন্য পরিদর্শন যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রও সংগ্রহ করা হবে। এর মাধ্যমে পেশাগত দুর্ঘটনা ও রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে শ্রমিকদের সচেতন করা হবে। এতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং দেশের কর বহির্ভূত রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়কালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ডিআইএফই। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পটির আওতায় ৯৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কথা থাকলেও প্রকল্প অনুমোদনের আগেই অর্থবছর পার হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছর এ প্রকল্পে ৬৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দের চাহিদা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে শিল্প খাতে কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে এটি সহায়ক হবে। পাশাপাশি শ্রম অসন্তোষ কমিয়ে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি শিল্প খাত সচল রাখতে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতরের কার্যক্রম ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হয়ে আসছিল। পরে চাহিদার প্রেক্ষিতে করা হয় অধিদফতর। অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত শিল্প প্রতিষ্ঠান কয়েক লাখ। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। এসব তদারকিতে কার্যক্রম বাড়াতে এর ভূমিকা থাকবে। ডিআইএফইর এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য শিল্পঘন এলাকায় বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্যই। এতে ফলও ভাল হয়। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে। শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের পেশাগত দুর্ঘটনা ও রোগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে কর বহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানো ও সম্ভব হবে। অধিদফতর মনে করে, শ্রমিক অসন্তোষ শিল্প কারখানায় উৎপাদনশীলতার গতি ব্যাহত করে। দেশের প্রতি জেলায় অফিস স্থাপনের মাধ্যমে পরিদর্শকদের নিয়োগ দেয়া হলে তাদের যথাযথ পরিদর্শন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রম আইন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালের শ্রম আইন ও ২০১৫ সালের শ্রম বিধিমালা অনুযায়ী ডিআইএফইর কর্মকর্তা-কর্মচারী, কারখানার মালিক-শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
×