ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবির ‘বিষফোঁড়া’

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২৪ জুলাই ২০১৯

ঢাবির ‘বিষফোঁড়া’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দেশের সর্ববৃহৎ সাতটি সরকারী কলেজ এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গলার কাঁটা’ অথবা ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষ বর্তমানে তা না পারছে গিলতে, না পারছে উগড়ে দিতে। প্রথমত শিক্ষার মনোন্নয়ন, দ্বিতীয়ত সেশনজট কমানোর জন্য ঢাবির অধিভুক্ত করা হয় সাতটি কলেজকে। এর পেছনে একগুঁয়েমি ও ক্ষমতা দেখানোর অভিলাষ থাকলেও এতদিন পর্যন্ত উন্নতি তো দূরে থাক, প্রায় কিছুই করতে পারেনি ঢাবি কর্তৃপক্ষ। অবশ্য সেই সদিচ্ছা ও প্রস্তুতিও ছিল না তাদের। ফলে সাতটি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্য দিকে ঢাবির শিক্ষার্থীরা নিরুপায় ও বাধ্য হয়ে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ভবনে ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ঘোষণা দিয়েছে, অধিভুক্ত বাতিল ঘোষণা না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না তারা। ফলে সমূহ সঙ্কটে পড়েছে ঢাবি এবং শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, তড়িঘড়ি করে ৭টি সরকারী কলেজ অধিভুক্ত করা ভুল ছিল। তবে এতদিনে জল অনেক ঘোলা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বিস্তর। দফায় দফায় যথাসময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও ফল প্রকাশ, সনদ প্রদান, সর্বোপরি সেশনজট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ, মিছিল-সমাবেশ, সড়ক অবরোধ, ভিসির কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচী দিয়ে নিজেদের শিক্ষাজীবন ও জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রুখে দাঁড়িয়েছে অধিভুক্তির প্রতিবাদে। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাও কম নয়। এ নিয়ে পুলিশী নির্যাতনে, টিয়ার গ্যাস শেল নিক্ষেপে সাধারণ শিক্ষার্থীর অন্ধত্ববরণসহ ঢাবি একদল শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রহৃত হওয়ার অভিযোগও আছে। মামলাসহ নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। অবশেষে পরাজয় তথা ব্যর্থ হয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করেছে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ৭টি কলেজের দুর্ভাগা শিক্ষার্থীদের প্রতি। প্রকৃতপক্ষে এটি ঢাবি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত ব্যর্থতার নজির হয়ে আছে। অন্যদিকে অনিশ্চিত ঝুলে রয়েছে ইতোপূর্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ৭টি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভাগ্য। সত্য বটে, ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজের অধীনে অনেক নামী-দামী কলেজ রয়েছে। ঢাবিরও হয়ত উদ্দেশ্য ছিল অনুরূপ। তবে অধিগ্রহণ শুধু করলেই হবে না, অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ, প্রশাসন পরিচালনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে দেখাশোনার জন্য স্বতন্ত্র জনবল ও ব্যবস্থাপনা যে অপরিহার্য তা ঢাবি কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর অনিবার্য পরিণতিতে ঘটেছে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান, বিপর্যস্ত শিক্ষাজীবনসহ অনিশ্চিত ভবিষ্যত। বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে এরকম নৈরাজ্যকর পরিবেশ-পরিস্থিতি কোন অবস্থাতেই প্রত্যাশিত নয়। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ অন্বেষণ করতে হবে ঢাবি কর্তৃপক্ষকেই। তবে শান্তি ও সমন্বয়ের জন্য উভয়পক্ষকে অবিলম্বে বসতে হবে আলাপ-আলোচনায়। বের করতে হবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ। সর্বশেষ অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে অনতিবিলম্বে অধিভুক্ত ৭টি কলেজকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া।
×