ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের হার ৫ উইকেটে

মুশফিক-মিঠুনের ব্যাটিং নৈপুণ্যে জিতল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৫২, ২৪ জুলাই ২০১৯

মুশফিক-মিঠুনের ব্যাটিং নৈপুণ্যে জিতল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ায় আর একাদশেই সুযোগ পাননি। ফর্মহীনতায় ভুগেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে ৯১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে আবার ফর্মে ফিরেছেন। তার ব্যাটিং নৈপুণ্যে ১১ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জিতেছেও বাংলাদেশ। স্বাগতিক দল ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৮২ রান করে। বাংলাদেশ দল মিঠুনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মুশফিকুর রহীমের ৫০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ৪৮.১ ওভারে ২৮৫ রান করে জিতে যায়। ক্রিকেটের জনপ্রিয় সাইড ক্রিকইনফো দেখাচ্ছে শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে তা হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রীলঙ্কার কলম্বোর পি সারা ওভালে হওয়া ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য সিরিজ শুরুর আগে একদিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল। যাদের উদ্দেশে প্রস্তুতি ম্যাচ থাকে তারাই আগে ব্যাটিং করবে না ফিল্ডিং করবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সফরকারী দলের ওপর সেই সিদ্ধান্ত থাকে। টসটা আসলে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যাওয়া ম্যানেজার সাব্বির খানই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। সবগুলো ম্যাচ কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে হবে। ২৬, ২৮ ও ৩১ জুলাই যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। পি সারা ওভালে যে রকম উইকেট, আর প্রেমাদাসাতেও একই রকম উইকেট থাকার সম্ভাবনাই থাকছে। তাতে করে শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ যে তিন শ’ রানের কাছাকাছি করে ফেলেছে তাতে বাংলাদেশ দলকে সাবধান হয়ে যাওয়ার বার্তাই যেন দিয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলে ২২ ক্রিকেটার ডাক পেয়েছেন। এই ক্রিকেটারদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই রাখা হয়েছে। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে এ সিরিজ থেকেই এগিয়ে চলতে চায় শ্রীলঙ্কা। সেখানে বাংলাদেশ দল ১৪ সদস্যের দলই রেখেছে। সফরকারী দল বাংলাদেশ। তাই বেশি ক্রিকেটার রাখার সুযোগ নেই। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা শেষ মুহূর্তে ইনজুরির জন্য সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েছেন। একই অবস্থা হয়েছে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বেলাতেও। সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাসতো আগে থেকেই সিরিজে নেই। ছুটি নিয়েছেন। তামিম ইকবালের কাঁধেই নেতৃত্বের ভার দেয়া হয়েছে। প্রথমবার তামিম কোন সিরিজে অধিনায়কত্ব করবেন। বিশ্বকাপে আশানুরূপ ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি এ ওপেনার। তার ওপর তাই চাপ থাকছে। বিশ্বকাপের পর প্রস্তুতি ম্যাচে বোধহয় সেই চাপেই ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। বিশ্বকাপে যেমন তামিমের সঙ্গে সৌম্য সরকার ব্যর্থতার গ্যাড়াকলে আটকে ছিলেন। শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষেও তা বজায় থাকল। তামিম ৩৭ ও সৌম্য ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি। দুইজন মিলে ৪৫ রানের বেশি জুটিও গড়তে পারেননি। উইকেটে সেট হয়ে বরাবরের মতো আউট হয়ে যেতে হয়েছে। স্বাগতিক দলের ছুড়ে দেয়া ২৮৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দলের ৫৮ রানের মধ্যেই সৌম্য ও তামিম আউট হয়ে যান। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহীম মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। মুশফিক (৪৬ বলে ৫০) হাফ সেঞ্চুরি করতেই সাজঘরে ফেরেন। দুইজনের জুটি ৭৩ রানের হয়। দলের ১৩১ রানের সময় মুশফিক আউট হলেও মিঠুন ঠিকই উইকেট আঁকড়ে থাকেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ব্যাট হাতে নেমেও মিঠুনের সঙ্গে বড় জুটি গড়ার আশা দেখান। গড়েনও। দুইজন মিলে ৯৬ রানের জুটি গড়েন। এ জুটি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল তারাই ম্যাচ শেষ করে বের হবেন। কিন্তু দলের ২২৭ রান হতেই মাহমুদুল্লাহ (৩৩) আউট হয়ে যান। মিঠুন ততক্ষণে হাফ সেঞ্চুরি করে সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে যান। ৮১ রান করে ফেলেন। ৪০ ওভারও শেষ হয়। জিততে তখন ৬০ বলে ৫৬ রান লাগে। হাতেও থাকে ৬ উইকেট। তাই জয় পাওয়া নিয়েও কোন সংশয় থাকেনি। বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ খেলে ব্যর্থ হওয়ার পর আর একাদশে সুযোগ পাননি মিঠুন। প্রস্তুতি ম্যাচে খেলে ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়ে আবারও তিন নম্বর পজিশনে জায়গা যেন পাকাপোক্ত করে রাখলেন। মূল সিরিজে তিনিই যে তিন নম্বরে খেলবেন তা যেন নিশ্চিত করে রাখলেন। যেভাবে খেলছিলেন মিঠুন মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি করেই ফেলবেন। কিন্তু ১০০ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় যখন ৯১ রান করে তখনই আউট হয়ে যান। এরপরও মিঠুনের এই ইনিংস যেন স্বস্তি এনে দিল। সাকিব না থাকায় তিন নম্বরে কে খেলবেন? এ চিন্তারও যেন অবসান ঘটল। সিরিজে এখন মিঠুন কি করেন তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত মিঠুনের ইনিংসটিই প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইনিংস হয়ে থাকল। ফর্মহীনতায় ভোগা মিঠুনও ফর্মে ফিরলেন। সাব্বির রহমানের সঙ্গে সুন্দরভাবেই এগিয়ে চলেন মিঠুন। কিন্তু শেষটা আর করে আসতে পারেননি। তবে সাব্বির (২৬ বলে ৩১*) ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (১০ বলে ১৫*) ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতান মোসাদ্দেক। প্রস্তুতি ম্যাচটিতে এত বেশি জোর দিয়ে খেলা হয় না। মূল সিরিজের জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং কন্ডিশনের সঙ্গে উইকেটের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়াই আসল কাজ থাকে। সেই কাজ করতে গিয়ে বোলিংটায় একটু হতাশা থাকতেই পারে। প্রস্তুতি ম্যাচ। তাই সবাই ব্যাটিং-বোলিং করতে পারবেন। যিনি বোলিং করতে চান, করতে পারবেন। ১১ জন ব্যাটিং, ১১ জন বোলিং করতে পারবেন। বাংলাদেশের ৯ বোলার বোলিং করলেন। এর মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান (৭ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ১ উইকেট) আকর্ষণ কুড়ালেন। রুবেল হোসেন ও সৌম্য সরকার ২টি করে উইকেট নিলেন। তাসকিন আহমেদ ওভার প্রতি ৭ রানের বেশি দিয়ে ১ উইকেট নেন। ফরহাদ রেজাও তাই। মাশরাফির পরিবর্তে তাসকিন ও সাইফউদ্দিনের পরিবর্তে ফরহাদ সুযোগ পেয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে ওভার প্রতি ৭ রানের বেশি দেন। তাতে মূল সিরিজের ম্যাচে এই দুইজনের একাদশে থাকা শঙ্কায়ও পড়ে গেল। স্পিনাররা কেউই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। মোসাদ্দেক ওভার প্রতি ৪ রানের বেশি দিলেন, কিন্তু উইকেটশূন্যও থাকলেন। মেহেদী হাসান মিরাজতো ওভার প্রতি ৬ রানের বেশি দিলেন। মাহমুদুল্লাহ ৩ ওভার বোলিং করে ওভার প্রতি ৫ রান করে দিলেন। তাইজুল ইসলামতো ওভার প্রতি ৭ রান করে দিলেন। শ্রীলঙ্কায় স্বাভাবিকভাবেই স্পিনারদের সুবিধা পাওয়ার কথা। উপমহাদেশের উইকেট। স্পিনাররাই ম্যাচের নিয়ন্ত্রনে থাকার কথা। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা খেলেননি। খেলেছেন তরুণ ক্রিকেটাররা। তাদের বিপদে ফেলা যায়নি। ভবিষ্যতে জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হওয়ার আশা থাকা দাসুন শানাকা সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশনে নেমে অপরাজিত ৮৬ রানের ইনিংস উপহার দেন। শিহান জয়সুরিয়া এর আগে করেন ৫৬ রান। এই দুইজনের বড় ইনিংসের সঙ্গে ভানুকা রাজাপাকসের ৩২, হাসারাঙ্গা ডি সিলভার ২৮, দানুশকা গুনাথিলাকার ২৬ রানের ছোট্ট ইনিংসগুলোই শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশকে ২৮২ রানে নিয়ে যায়। আর এখানেই সামনে বাংলাদেশকে সিরিজে সাবধান হয়ে খেলার ইঙ্গিত দেয়া হয়। মূল সিরিজে নিয়মিত জাতীয় দলে থাকা অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা থাকবেন। তারা যদি এমন বোলিং পান তাহলে স্কোর আরও বাড়িয়ে নিতে পারেন। তখন স্কোর বাড়লে ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপও বাড়বে। ম্যাচে জেতার আশায় হতাশাও জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে দিনশেষে আশার বিষয় হলো, মাশরাফি, সাকিব না থাকায় বাকিদের ওপর যে ভরসা করা হচ্ছে মিঠুনের ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে তাতে স্বস্তি যুক্ত হয়েছে। এখন সিরিজে এমন ব্যাটিং বাকিরাও যদি করতে পারেন তাহলে ম্যাচ জেতা কঠিন কিছু নয়। স্কোর ॥ শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ ইনিংস ॥ ২৮২/৮; ৫০ ওভার (শানাকা ৮৬*, জয়সুরিয়া ৫৬, রাজাপাকসে ৩২; রুবেল ২/৩১, সৌম্য ২/২৯, মুস্তাফিজ ১/২৯)। বাংলাদেশ ইনিংস ॥ ২৮৫/৫; ৪৮.১ ওভার (তামিম ৩৭, সৌম্য ১৩, মিঠুন ৯১, মুশফিক ৫০, মাহমুদুল্লাহ ৩৩, সাব্বির ৩১*, মোসাদ্দেক ১৫*; লাহিরু ২/২৬)। ফল ॥ বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
×